বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীনের তীব্র সমালোচনা করেছেন বোর্ডের সাবেক পরিচালক খালেদ মাহমুদ, বিশেষ করে নাজমুলের মানসিকতা নিয়ে স্রেফ ধুয়ে দিলেন তিনি।
Published : 06 Jan 2025, 04:45 PM
“ক্রিকেট বোর্ডের কার্যক্রম নিয়ে আই অ্যাম নট বদার্ড… লিস্ট বদার্ড একদম…”, বিসিবি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে খালেদ মাহমুদ শুরু করলেন এভাবেই। তবে আদতে যে তিনি ভালোভাবেই ‘বদার্ড’, সেটি তার কথায় ফুঠে উঠল দ্রুতই। সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বের খবর নিয়ে তিনি একহাত নিলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীনকে। বিশেষ করে, নাজমুলকে স্রেফ ধুয়ে দিলেন বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক।
নাজমুল হাসানের (পাপন) নেতৃত্বাধীন বোর্ডে লম্বা সময় ধরে বিসিবি পরিচালক ছিলেন খালেদ মাহমুদ। গত অগাস্টে সরকার পরিবর্তনের পথ ধরে ক্রিকেট বোর্ডে পালাবদলের পর গত ১১ সেপ্টেম্বর বিসিবি পরিচালকের পদ ছেড়ে দেন তিনি। আপাতত দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন তিনি কোচিং দিয়ে। চলতি বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের প্রধান কোচ তিনি।
সিলেটে সোমবার ঢাকার অনুশীলন শেষে তিনি মুখোমুখি হন সংবাদমাধ্যমের। বোর্ডের বাইরে থেকে বর্তমান বোর্ডের কার্যক্রম কেমন দেখছেন, এই প্রশ্নে তিনি শুরুতে নির্লিপ্ততার কথাই বললেন। কিছুদিন আগে যুব এশিয়া কাপে বাংলাদেশের শিরোপা ধরে রাখার সাফল্য নিয়ে অবশ্য উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন তিনি। বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির সেই সময়ের প্রধান হিসেবে তারও যে অবদান আছে এই সাফল্যে, সেটিও মনে করিয়ে দিলেন।
“ক্রিকেট বোর্ডের কার্যক্রম নিয়ে আই অ্যাম নট বদার্ড… লিস্ট বদার্ড একদম। ঢাকা ক্যাপিটালস নিয়ে আমি বদার্ড… আমার রাজশাহীর একডেমি নিয়ে আমি বদার্ড। ক্রিকেটের ভক্ত হিসেবে.. ক্রিকেট বোর্ডে ছিলাম, ক্রিকেটের মানুষ হিসেবে আই হ্যাভ মিক্সড আন্ডারস্ট্যান্ডিং… কারণ আমি অতটা অনুসরণ করি না। আমি খুবই খুশি যে, আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে টানা দুবার (যুব এশিয়া কাপে), এটা নিয়ে আমি দারুণ খুশি। এটা কোনো ফ্লুক নয়, আমাদের সিস্টেম ভালো আছে এবং সিস্টেম চলছে।”
“আমরা যে দলটা গড়ে দিয়ে এসেছি, বেশ কিছু অসাধারণ ক্রিকেটার আছে, যাদেরকে আমি কাছ থেকে ভালেভাবে চিনি। গত বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পরই ঠিক করেছিলাম যে নাভিদকে (নাওয়াজ) আবার নিয়ে আসব। প্রধান নির্বাহীর সহায়তায় আমরা তাকে নিয়ে আসি আবার। আমি খুবই খুশি যে সে আবার আসতে রাজি হয়েছে। আমাদের জন্য দারুণ ব্যক্তিত্ব, দারুণ মানুষ। তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য তো বটেই। ওটাতে আমার খুশি লাগে, বোর্ডের সাফল্য দেখে।”
এরপরই খালেদ মাহমুদ টেনে আনলেন বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ ও বোর্ড পরিচালক নাজমুল আবেদীনের সাম্প্রতিক টানাপোড়েনের প্রসঙ্গ। বিসিবি সভাপতির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে রোববার ক্রিকেটাঙ্গনে ঝড় তোলেন নাজমুল আবেদীন। পরে আবার সেসবের জবাব দিয়ে বিসিবি সভাপতি জানান, সবকিছুর সমাধান হয়ে গেছে।
তবে নাজমুল আবেদীনের সেই অসন্তোষের পেছনে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান হওয়ার প্রতি আগ্রহ একটা বড় কারণ বলে ইঙ্গিত দিলেন খালেদ মাহমুদ।
“কালকের একটা ঘটনা দেখলাম ফারুক ভাই ও ফাহিম ভাইয়ের (নাজমুল আবেদীন) দ্বন্দ্ব। এটা ব্যাথা দেয় যে, দুজনই সাবেক ক্রিকেটার। তাদের কেন ইগোর সমস্যা হবে! তারা তো ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্যই আসছেন… এবং তারা যখন আসছেন, তখন তো অনেক কমিটমেন্ট করেছেন, আমি দেখেছিলাম। বিশেষ করে ফাহিম ভাই তো অনেক ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন, অনেক বলেছেন যে, উনি অনেক দেখেছেন এবং সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা করছেন, চিন্তা করেছেন। সেগুলো আমি এখন দেখছি না। আমি দেখছি লোভ-লালসার মতো হয়ে যাচ্ছে যে, আমি অপারেশন্স (ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান) না পেলে কাজ করব না, পদত্যাগ করব। এটা তো লোভ-লালসা স্রেফ!।”
“এই লোভ-লালসা কেন তাদের মধ্যে আসে? আমার ক্রিকেট অপারেশন্সই নিতে হবে কেন? আমি যদি অন্য কমিটির চেয়ারম্যান হই, ওখানে সার্ভ করতে পারব না কেন? কেন, উনি কি ক্রিকেট অপারেশন্সের মাস্টার? উনার আগে তো আকরাম ভাই মাস্টার। উনি চাইতে পারে। কারণ আকরাম ভাই বাংলাদেশের সাবেক সফল অধিনায়ক এবং অপারেশন্স চেয়ারম্যানও ছিলেন। তাহলে উনি (নাজমুল আবেদীন) কেন বলছেন যে, অপারেশন্স ছাড়া হবেই না! এটা তো ইগোর ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। ফারুক ভাই-ফাহিম ভাই, আমার মনে হয় ইগোর সমস্যা। সত্যি কথা বলছি, এটা কী হচ্ছে… আই ডোন্ট নো।”
খালেদ মাহমুদের মতে, ক্ষোভ-অসন্তোষ কিছু থাকলে নাজমুলের উচিত ছিল নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমাধান করে ফেলা অথবা সরাসরি পদত্যাগ করা।
“সংসারে তো শান্তি আছেই। কার সংসারে অশান্তি নেই! আমার কথা হলো, তারা দুজনই অনেক সিনিয়র মানুষ। ফাহিম তো আমাদের সবার গুরু… এরকম একজন ক্রিকেট প্রশিক্ষক। উনি তো বিচক্ষণ, উনি কেন এটা প্রকাশ্যে বলবেন? উনি যদি মনে করেন, উনার সম্মান পাচ্ছেন না, দায়িত্ব পাচ্ছেন না, উনি ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন, ওয়ান টু ওয়ান। উনি ফারুক ভাইকে বলবেন, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব হিসেবে যদি কিছু না জানেন, উনি সরাসরি পদত্যাগ করবেন। এটা তো প্রকাশ্যে বলার দরকার নেই!”
এসব দ্বন্দ্বের খবর প্রকাশ্য হয়ে পড়ায় দেশের সব ক্রিকেটারের ভাবমূর্তিতে চোট লেগেছে বলে মনে করেন খালেদ মাহমুদ।
“যেটা চার দেয়ালের ভেতরে শেষ হতে পারত, এটা সারা বাংলাদেশের মানুষ কেন জানবে? তারা দুজনই ক্রিকেটার। তাহলে আমাদের ক্রিকেটারদের লোকে কী বলবে! এই কথাটা ভাবা খুব স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে যে, আমরা নিজের স্বার্থের জন্য বোর্ডে যাই। আমাদের সব ক্রিকেটারের জন্য এটা লজ্জার ব্যাপার। দুজন সিনিয়র মানুষ যা করলেন, আমরা যারা জাতীয় দলে খেলেছি বা বাইরে যারা, সব ক্রিকেটারের জন্য লজ্জাজনক। এই যে ইগোর সমস্যা বা কাড়াকাড়ির সমস্যা চলছে যে, কে বোর্ড সভাপতি হবেন, কে অপারেশন্স চেয়ারম্যান, কে ডেভেলপমেন্টের প্রধান… এটা খুবই মজার ও লজ্জাজনক।”
যখন তাদের এই মন-মানসিকতা দেখি, তখন খারাপ লাগে। দুইজন সিনিয়র মানুষ, আমরা যাদেরকে অনেক সম্মান করি… ফারুক ভাই ও ফাহিম ভাই, দুজনই আমাদের শ্রদ্ধেয় ও সাবেক ক্রিকেটার। তাদেরকে যখন এমন দেখি ক্রিকেটার হিসেবে, লজ্জিত হই আসলে আমরা ক্রিকেটাররা কী এত বেশি লোভী নাকি!
খালেদ মাহমুদ ছাড়াও পদত্যাগ করেছেন ও পদ হারিয়েছেন আগের বোর্ডের আরও অনেক পরিচালক। আগের বোর্ডের যারা এখনও টিকে আছেন, তারাও একরকম নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন বা তাদেরকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। এখানে বোর্ড সভাপতির দিকে আঙুল তুললেন খালেদ মাহমুদ।
“এত অল্প পরিচালক দিয়ে ফারুক ভাইয়ের জন্য বোর্ড চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কেন ফারুক ভাই নতুন পরিচালক নিচ্ছেন না… যাদেরকে উনারা নিতে চান, নিয়ে নিলেই পারেন।”
দায়িত্ব গ্রহণের পর সাড়ে চার মাসেও বোর্ডের স্থায়ী কমিটিগুলো গঠন না হওয়া নিয়ে খালেদ মাহমুদের সরাসরি কথা, “এটা তাদের ব্যর্থতা, আর কিছু নয়।”