বিরাট কোহলির ব্যাটে লম্বা সময় ধরে রানের খরা চললেও তার মানের একজনের ওপর তো সহজে আস্থা হারানো যায় না। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি থাকলেও তাই ভারত দলে নিয়মিত তিনি। আর এটাই পছন্দ হচ্ছে না কপিল দেবের। দেশটির প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের মতে, নামের দিকে না তাকিয়ে ফর্ম বিবেচনায় দল নির্বাচন করা উচিত ভারতের।
Published : 09 Jul 2022, 04:41 PM
গত আড়াই বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কোনো সংস্করণেই সেঞ্চুরি নেই কোহলির। কিছুদিন আগ পর্যন্ত কেবল তার সেঞ্চুরি খরা নিয়েই ছিল আলোচনা। এখন সেটা রূপ নিয়েছে ফর্মহীনতায়। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে কলকাতা টেস্টে সেঞ্চুরির পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন অঙ্কের স্বাদ পাননি তিনি টানা ৭৫ ইনিংসে। সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজনের নামের পাশে যা সত্যিই বেমানান।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে দুয়ারে। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হবে এবারের আসর। কিন্তু কোহলির ব্যাটে তো রান নেই এই সংস্করণেও। সবশেষ আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালোরের হয়ে ১৬ ম্যাচে ২২.৭৩ গড়ে ৩৪১ রান করেন তিনি। পঞ্চাশ ছাড়াতে পারেন স্রেফ দুই ইনিংস।
ভারতের হয়ে সবশেষ টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন কোহলি। গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৫২ রানের ইনিংস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শনিবার দ্বিতীয় ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টিতে আবার দেশের প্রতিনিধিত্ব করার কথা তার। এমন সময়ে তার ফর্মহীনতায় নিয়ে চলা গুঞ্জন আরও জোরাল হয়েছে। ইংলিশদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে রান না পেলে বিশ্বকাপের দল থেকে বাদও পড়তে পারেন তিনি, শোনা যাচ্ছে এমন কথাও!
এতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু দেখছেন না কপিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে ভাবনায় রেখে কিংবদন্তি এই অলরাউন্ডার শুক্রবার এবিপি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বললেন, দল নির্বাচন করতে হবে বর্তমান ফর্ম দেখে।
“অনেক বিকল্প যখন আছে, তখন ফর্মে থাকা ক্রিকেটারদের খেলানো উচিত। শুধু নামের জন্য তো আর কাউকে দলে রাখা যায় না, বর্তমান ফর্মের দিকেও তাকাতে হবে। একজন প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার হতে পারে, কিন্তু এর মানে এই নয় যে, টানা পাঁচ ম্যাচ ব্যর্থ হওয়ার পরও তাকে সুযোগ দেওয়া হবে।”
কোহলির অনুপস্থিতিতে সুযোগ পেলেই দারুণ ব্যাটিং উপহার দিয়ে যাচ্ছেন দিপক হুডা, রিশাভ পান্ত, সূর্যকুমার যাদবরা। চলতি বছর সব টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোয় স্রেফ ১১৫ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন কোহলি। সেখানে হুডা-পান্তরা এই সময়ে আরও দ্রুত গতিতে রান তুলে দলে রেখেছেন অবদান।
তবুও কোহলির মানের একজনকে দলের বাইরে রাখতে দরকার যথেষ্ট সাহস। এখানে কপিল উদাহরণ টানলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বিষয়টি। আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর বোলার হলেও সাদা পোশাকের দলে এই স্পিনারকে নিয়মিত রাখে না ভারত। তাহলে কোহলিকে কেন নয়, প্রশ্ন তুলেছেন কপিল।
“যদি বিশ্বের ২ নম্বর টেস্ট বোলার অশ্বিন টেস্ট দল থেকে বাদ পড়তে পারে, তাহলে এক নম্বর ব্যাটসম্যানকেও বাদ দেওয়া যায়। আশা করি, কোহলি রান করবে। এরপর যদি দল নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ আসে, সেটা হবে দারুণ বিষয়। এই মুহূর্তে বিরাট কোহলি আমাদের সেই চেনা কোহলির মতো খেলছে না, যে তার পারফরম্যান্স দিয়ে কিংবদন্তিদের কাতারে উঠেছে।”
“সে পারফর্ম না করার পরও দিনের পর দিন এই ছেলেদের (তরুণদের) দলের বাইরে রাখা যাবে না। আশা করি, দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি সুস্থ লড়াই হবে, তরুণদের কোহলিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আর কোহলিকে ভাবতে হবে যে ‘হ্যাঁ, একসময় আমি বড় ক্রিকেটার ছিলাম, কিন্তু আমাকে নাম্বার ওয়ান ক্রিকেটারের মতো আবার খেলতে হবে।’ সেটা হবে দলের জন্য সমস্যা, তবে সেটা খারাপ সমস্যা নয়।”
গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এই সংস্করণে বেশ কয়েকটি সিরিজ খেলেছে ভারত। বেশিরভাগ সিরিজেই বিশ্রামে ছিলেন কোহলি। বড় ক্রিকেটারদের মাঝেমাধ্যেই এভাবে বাইরে রাখা এবং সেটাকে ‘বিশ্রামের’ নাম দেওয়া, পরে আবার সরাসরি তার দলে ফেরার প্রক্রিয়ার পক্ষে নন কপিল। তার মতে, কাউকে দলে নেওয়া ও বাদ দেওয়া তার পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত।
“এটাকে বিশ্রাম বলা যায়, বাদ পড়াও বলা যায়। প্রত্যেকের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ আছে। নির্বাচকরা যদি তাকে দলে না নেয়, বলা যেতে পারে আমরা তাকে বিশ্রাম দিয়েছি, কারণ সে পারফর্ম করছে না।”
“কোহলি দারুণ দক্ষ ও প্রতিভাবান। এই ধরনের ক্রিকেটাররা ফর্মে ফিরবে, সবাই সে আশায় করে। বিষয়টা তো এমন না যে তাকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হচ্ছে। এখন যদি সে পারফর্ম না করে, ঠিক আছে (তাকে বাইরে রাখা)। তরুণরা ভালো খেলছে। যদি অশ্বিনকে দলের বাইরে রাখা যায়, তাহলে যে কাউকেই বাদ দেওয়া যায়।”