পুলিশ বিক্ষোভকারীদের তাঁবু, ব্যারিকেড ভেঙে দিয়েছে।
Published : 03 May 2024, 12:10 AM
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দমনে তৎপর দাঙ্গা পুলিশ বৃহস্পতিবার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলেস (ইউসিএলএ)এ ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের তাঁবু শিবির গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
ফ্ল্যাশ ব্যাং ব্যবহার করার পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়েছে পুলিশ। ভেঙে দিয়েছে তাদের তাঁবু। টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত ফুটেজে পুলিশকে তাঁবু, ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভশিবির নির্মূল করা এবং বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
ওদিকে, পুলিশি অভিযানে বিপর্যস্ত হয়েছে নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও। বিশ্ববিদ্যায়লটির সব প্রবেশপথেই এখন অবস্থাননিয়েছে পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা। রাস্তায় বসানো হয়েছে ব্যারিকেড।
জিনিসপত্র নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে যাচ্ছে। ক্লাস বাতিল হয়েছে। পরীক্ষা কবে হবে ঠিক নেই। গোটা বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি থমথমে। এরপর কী হতে চলেছে তা নিয়ে বিরাজ করছে অনিশ্চয়তা।
বিবিসি-কে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, মঙ্গলবার গাজা যুদ্ধ বিরোধী বিক্ষোভ ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিলটন হলে অভিযান চালিয়ে পুলিশের ১০০’র বেশি মানুষ আটকের ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাসই এখন বিপর্যস্ত।
পুলিশের এই অভিযানের পর এক বার্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নেমাত শফিক বলছেন, "তাকে শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানের নির্দেশ পুলিশকে দিতে হয়েছে- এটি খুবই দুঃখজনক। এ ক্ষত শুকাতে সময় লাগবে।”
ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও কোম্পানিকে বয়কটের দাবিতে কিছুদিন ধরেই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। মঙ্গলবার কয়েকটি জায়গায় এ বিক্ষোভ সহিংস সংঘর্ষে রূপ নেয়।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলেসে (ইউসিএলএ) মঙ্গলবার রাতে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েল সমর্থকদের একটি দল। দুই পক্ষে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়।
ইসরায়েল-সমর্থকরা ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠি নিয়ে চড়াও হয়। শিবিরের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা চালায় তারা। সহিংস ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে পুলিশ ডাকে।
বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসেরে কেন্দ্রস্থলে প্রায় ফুটবল মাঠের সমান আকৃতির একটি প্লাজা দখল করে বিক্ষোভ করে আসছিল। পুলিশ সেখানে অগ্রসর হওয়ার আগে লাউডস্পিকারে কয়েকবার ঘোষণা দিয়ে বিক্ষোভকারীদেরকে এলাকাটি খালি করে দিতে বলে।
কয়েকঘন্টা ধরে ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরির পর পুলিশ কর্মকর্তারা লাঠি হাতে লাইন ধরে বিক্ষোভকারীদের শিবিরের দিকে এগিয়ে যান। এ অভিযান চালানোর সময় পুলিশ ফ্ল্যাশ ব্যাং ব্যবহার করেছে ,স্টান গ্রেনেড ছুড়েছে
ছাতা এবং ঢাল হাতে থাকা কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। আবার কিছু বিক্ষোভকারী দ্রুতই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। স্থানীয় টিভি স্টেশন কেএবিসি-টিভি’র হিসাবমতে, তাঁবু শিবিরে অবস্থান নিয়েছিল আনুমানিক ৩০০ থেকে ৫০০ বিক্ষোভকারী।
তাদের অনেকেই ফিলিস্তিনিদের ঐতিহ্যবাহী কেফিয়াহ নামক বিশেষ ধরনের স্কার্ফ পরে ছিল। আর তাদের সমর্থনে শিবিরের ব্যারিকেডের বাইরে জড়ো হয়েছিল আরও প্রায় ২ হাজার জন।
বৃহস্পতিবার পুলিশের অভিযানের পর এ সংখ্যা কমে এসেছে। কারণ, বিক্ষোভকারীরা অনেকেই শিবির ছেড়ে গেছে, আবার অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশের অভিযানে শিবির হয়েছে তছনছ।
ওদিকে, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাঁবু শিবির ভেঙে দিয়ে হল ভবন থেকে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয় পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আন্না ওআকস সেই ঘটনা কাভার করেছেন।
তিনি বলেন, “মনে হচ্ছে সব ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।” এক রাতের পুলিশি অভিযানের পর বুধবার সকালে ক্যাম্পাস এলাকা ছিল অন্যরকম। একজন বলেন, বিক্ষোভ আয়োজকরা, “থামবে না। বিশ্রামে যাবে না।”
শিক্ষার্থীদের যারা এখনও ক্যাম্পাসে আছে, তারা বলছে, এখন তারা অনেকটাই অন্ধকারে। এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের এক শিক্ষার্থী তার অনুভুতি প্রকাশ করে বলেছেন, “অদ্ভুত এক নরক। কী করতে হবে আমরা জানি না।”
অনেকে আবার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। স্টিলের ব্যারিকেডের কাছে গিয়ে শ্লোগান দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে পুলিশকে সরে যাওয়ার দাবি জানাচ্ছে অনেকে। শিক্ষকরা বলছেন, তারা এখনও জানেন না কীভাবে সেমিস্টার শেষ করবেন।
সংবাদ সূত্র: বিবিসি/রয়টার্স