ম্যাচ শেষ হতেই মোসাদ্দেক হোসেন এগিয়ে গিয়ে চেয়ে নিলেন সুনিল নারাইনের ব্যাট। নেড়েচেড়ে দেখলেন কিছুক্ষণ। ওই ব্যাটের যে জোর দেখা গেছে নারাইনের একেকটি শটে, মোসাদ্দেক হয়তো পরখ করছিলেন সেটিই! অথচ ওই দাপট থামতে পারত অনেক আগেই, যদি ক্যাচ নিতে পারতেন মুক্তার আলি। প্রথম বলে বেঁচে যাওয়া সেই নারাইনই শেষ সময়ে ডোবালেন সিলেটকে।
Published : 09 Feb 2022, 08:42 PM
সিলেট পর্বের শেষ ম্যাচে সম্ভাবনা জাগিয়েও জিততে পারল না সিলেট সানরাইজার্স। মাহমুদুল হাসান জয়ের প্রথম বিপিএল ফিফটির সঙ্গে মইন আলির কার্যকর ইনিংস আর নারাইনের খুনে ফিনিশিংয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স জিতে গেল ৪ উইকেটে।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার সিলেট ২০ ওভারে তোলে ১৬৯ রান। আগের ম্যাচে ৯০ রানে আটকে যাওয়া কলিন ইনগ্রাম এবার ফেরেন ৮৯ রানে।
ব্যবহৃত উইকেটে চ্যালেঞ্জিং রান তাড়ায় কুমিল্লার হাল ধরে রাখেন মাহমুদুল। প্রায় ১৮ ওভার উইকেটে থেকে তিনি করেন ৫০ বলে ৬৫। নড়বড়ে শুরুর পর ইনিংসের মোড় ঘুরিয়ে দেয় মইন আলির ৩৫ বলে ৪৬ রানের ইনিংস। ১২ বলে ২৪ রানের অপরাজিত ইনিংসে শেষের দাবি মেটান নারাইন।
সিলেট এই হারে দায় দিতে পারে কেবর নিজেদেরই। ব্যাটিংয়ে ইনগ্রাম ও এনামুল হকের দুর্দান্ত শুরুর পরও তারা আরও বড় স্কোর গড়তে পারেনি পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। বোলিং ভালোমন্দের মিশেল হলেও ফিল্ডিংয়ে তারা হাতছাড়া করে গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।
প্রথম বলে শুধু নারাইনের বেঁচে যাওয়াই নয়, মইন আলিও প্রথম বলে রক্ষা পান এনামুল হক স্টাম্পিংয়ের সহজ সুযোগ হাতছাড়া করায়। দুজনই সিলেটকে বুঝিয়ে দেন জীবন দেওয়ার মূল্য।
অথচ বোলিংয়ের শুরুটা সিলেটের জন্য ছিল যথেষ্ট আশা জাগানিয়া। কুমিল্লার বড় ভরসা লিটন দাস দ্বিতীয় ওভারেই আউট হন একেএস স্বাধীনের বলে শরীর থেকে দূরে বাজে এক শটে। আরেক নির্ভরতা ফাফ দু প্লেসি স্রেফ ২ রানে ফেরেন নাজমুল ইসলাম অপুর নিচু হওয়া এক ডেলিভারিতে।
২ উইকেটে ২২ রান অনায়াসেই হতে পারত ৩ উইকেটে ২২। কিন্তু মইনের দেওয়া সুযোগ নিতে পারেননি সিলেটের কিপার এনামুল।
সেই মইন এরপর জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া জুটি গড়েন মাহমুদুলকে নিয়ে।
শুরুতে একটু সময় নিয়ে পরে পুষিয়ে দেন মইন। মাহমুদুল এক-দুই করে এগোনোর পাশাপাশি ইনিংস গড়েন নান্দনিক কিছু শটে। দুজনে ১১ ওভারে যোগ করেন ৮২ রান।
মইন থামেন রবি বোপারার অনেক বাইরের বলে আলগা শট খেলে।
৫ ওভারে যখন প্রয়োজন ৬০ রান, সিলেট অধিনায়ক বোপারার এক ওভালে বিশাল দুটি ছক্কায় বল গ্যালারিতে ফেলেন কুমিল্লা অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। তবে বিদায় নেন তিনি ১৬ রানে।
পরে আলাউদ্দিন বাবুর পরপর দুই বলে যখন ফিরলেন মাহমুদুল ও আরিফুল হক, ম্যাচ হেলে পড়ে সিলেটের দিকে। কিন্তু জীবন পাওয়া নারাইন দাঁড়িয়ে যান সিলেট আর জয়ের মাঝে।
২ ওভারে যখন প্রয়োজন ২২ রান, স্বাধীনের এক ওভারে দুই চার ও বিশাল এক ছক্কায় ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন নারাইন। ১৯তম ওভার থেকে আসে ১৯ রান, শেষ হয়ে যায় ম্যাচের উত্তেজনা। আরও একবার হতাশায় মাঠ ছাড়ে সিলেট।
এনামুলের শুরুটা ছিল একটু মন্থর। ২০ বলে তার রান ছিল ২১। নারাইনকে বিশাল এক ছক্কা মেরে জেগে ওঠেন তিনিও। পরে মইন আলিকেও উড়িয়ে ফেলেন সীমানার বাইরে।
৩৫ বলে ফিফটি করেন ইনগ্রাম। একাদশ ওভারে সিলেটের রান পেরিয়ে যায় একশ।
৩৩ বলে ৪৬ রান করে এনামুলের বিদায়ে থামে ১০৫ রানের উদ্বোধনী জুটি। সেখান থেকে যেখানে সিলেটের ছোটার কথা দুইশর পথে, উল্টো ইনিংস হারায় গতি। লেন্ডল সিমন্স, রবি বোপারা পারেননি সময়ের দাবি মেটাতে। ছন্দে থাকা মোসাদ্দেক হোসেনকে বিস্ময়করভাবে সিলেট নামায় একদম শেষ ওভারে।
মূলত ইনগ্রামই যা টেনে নেন দলকে। কিন্তু নিজের সেঞ্চুরিটা এ দিনই পাননি তিনি। শেষ ওভারে মুস্তাফিজের স্লোয়ারে দারুণ এক ছক্কার পরের বলেই আউট হয়ে যান আরেকটা স্লোয়ার উড়িয়ে মেরে। ৯ চার ও ৩ ছক্কায় তার দুর্দান্ত ইনিংস থামে ৬৩ বলে ৮৯ রানে।
শেষ ৯ ওভারে মাত্র ৬৯ রান তুলে সিলেটের ইনিংস থামে সম্ভাব্য স্কোরের বেশ আগে। ম্যাচ শেষেও রয়ে যায় সেই হতাশাই।
সিলেট পর্বে তিন ম্যাচ খেলে একটিও জিততে পারল না সিলেট। সেই দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের পর তারা হারল টানা ৭ ম্যাচ। কুমিল্লা প্লে অফ নিশ্চিত করে ফেলল ৮ ম্যাচে পঞ্চম জয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট সানরাইজার্স: ২০ ওভারে ১৬৯/৬ (ইনগ্রাম ৮৯, এনামুল ৪৬, সিমন্স ১৬, বোপারা ১, আলাউদ্দিন ১০, মোসাদ্দেক ১*; আবু হায়দার ৩-০-২৭-০, নাহিদুল ২-০-১৭-০, মুস্তাফিজ ৪-০-২৩-৩, নারাইন ৪-০-৩৪-১, তানভির ৪-০-৩৭-১, মইন ৩-০-২৭-০)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৯.৫ ওভারে ১৭৩/৬ (লিটন ৭, মাহমুদুল ৬৫, দু প্লেসি ২, মইন ৪৬, ইমরুল ১৬, নারাইন ; নাজমুল অপু ৪-০-৩৬-২, স্বাধীন ৪-০-২৯-১, আলাউদ্দিন ৩.৫-০-২৪-২, বোপারা ৩-০-৩২-১, সোহাগ ২-০-২১-০, মুক্তার ২-০-২২-০, মোসাদ্দেক ১-০-৭-০)
ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহমুদুল হাসান জয়