ধোনি-সংস্পর্শে সোহান

বাংলাদেশ-ভারতের প্রস্তুতি ম্যাচ তখন শেষ। সেন্টার উইকেটে ব্যাটিং অনুশীলন করছিলেন যুবরাজ সিং। পাশেই প্যাড পরে ব্যাটিংয়ের অপেক্ষায় মহেন্দ্র সিং ধোনি। তার সঙ্গে দেখা গেল বাংলাদেশের একজনকে; নুরুল হাসান সোহান।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিলন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2017, 08:50 AM
Updated : 31 May 2017, 03:58 PM

ওভালের নেটের পাশে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে কথা বললেন দুজন। ড্রেসিং রুমে ফেরার সময়ও সোহানের চোখে-মুখে খেলা করছিল রোমাঞ্চ। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই ‘দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের’ উদ্যোগ ও বিষয়বস্তু শোনালেন তরুণ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।

“ধোনি আমার প্রিয় কিপার। অনেক দিন থেকেই চাইছিলাম ওর সঙ্গে কথা বলতে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সময় চেয়েছিলাম। বলেছিল ম্যাচ শেষে কথা বলবে। কিন্তু বাংলাদেশ হারার পর আর ওভাবে কথা বলার অবস্থা ওই সময় ছিল না। আজকে আবার সময় চাইতেই বলল ম্যাচ শেষে কথা বলবে। এই তো। কিপিং ও ব্যাটিং নিয়েই কথা হয়েছে।”

ব্যাটিংটা নিয়েই কথা হয়েছে বেশি। তুলনা চলে না অবশ্যই, তবে দুজনের ব্যাটিংয়ের ধরনটি একইরকম। দুজনই একটু অপ্রথাগত ও উদ্ভাবনী ব্যাটিং করতে পছন্দ করেন।

সোহান কথা বলেছেন পজিশনের বিবেচনায় শট খেলা নিয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি পুরোদস্তুর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। তবে জাতীয় দলে বিবেচনা করা হচ্ছে লোয়ার-মিডল অর্ডারে। জাতীয় দলে সুযোগ যেটুকু পেয়েছেন বা পাবেন, বড় ইনিংস খেলার সুযোগ নেই।

অল্প সময়ে প্রভাব বিস্তার করা ইনিংস, কোনো একটা কার্যকর ইনিংস খেলাই তার দায়িত্ব, যে কাজ ধোনির চেয়ে ভালো গত এক যুগে কেউ করতে পারেনি।

সোহানকে ধোনির পরামর্শ, শেষ দিকে ব্যাটিংয়ে নামলেও শুরুতে অন্তত কিছুটা সময় নেওয়া।

“আমি যে সময় ব্যাটিংয়ে নামি, খুব বেশি সময় থাকে না ইমপ্যাক্ট ফেলার। ওকে জিজ্ঞেস করেছি কিভাবে শুরু করো, কিভাবে ভাবো। বলল, আমাদের উপমহাদেশে উইকেট খুব ভালো থাকে। ওপরের দিকে ব্যাটসম্যানরা এত ভালো খেলে যে পরে সুযোগ খুব বেশি থাকে না। এটি মেনেই নিতে হবে। আর শেষ দিকে হলেও গিয়ে অন্তত ৫-৬ বল দেখে খেলতে হবে।”

“আমি ওকে বললাম যে, অনেক সময়ই বেশ তাড়াহুড়ো করেছি। বলেছি যে, শুরুতে একটু সময় নিলে আসলেই আমি সবসময়ই ভালো বোধ করি। পরে হয়ত সেটা পুষিয়ে দিয়ে ২০ বলে ৩৫-৪০ করতে পারি। কিন্তু নেমেই ৫ বলে ১৫ বা ১০ বলে ২০ রান করতে গিয়ে অনেক সময় পারিনি। ধোনি বলল, এটাই উচিত, শুরুতে কিছু বল খেলে তার পর গতি বাড়াতে হবে।”

এছাড়াও ব্যাটিংয়ের টুকটাক কিছু টেকনিক্যাল দিক, মানসিক ব্যাপার নিয়ে কথা হয়েছে, যেগুলো নিজের ভেতরই রাখতে চান সোহান। কাজে লাগাতে চান মাঠে।

আর কিপিং? অনেকের মতেই টেকনিক্যালি দেশের সেরা কিপার সোহান। তবে ব্যাটিংয়ের মতো কিপিংয়েও সোহানের নায়ক ধোনিই। কিপিংয়ের প্রসঙ্গ তাই ছিল অবধারিতভাবেই।

“ওকে বললাম যে তোমার কিপিং আমার ভালো লাগে। অনেক অনুসরণ করি। ওর মতো করেই একট রান আউট করেছিলাম নিউ জিল্যান্ডে, সেটাও বললাম। ও বললো, ‘কিপিংয়েও তো আমি আনঅর্থোডক্স, অনেকেই পছন্দ করে না।’ আমি বললাম, ‘আমারও সেরকম হয়ে গেছে।’ পরে কিপিং নিয়েও কথা হলো কিছুক্ষণ।”

সব মিলিয়ে সময়টা খুব বেশি নয়। তবে সোহানের জন্য সেটিই অনেক কিছু। নিজের আদর্শ ক্রিকেটারের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর রোমাঞ্চ নিয়েই শুধু নয়, ফিরেছেন আরেকটু সমৃদ্ধ হয়ে।