টেস্ট অভিষেকে প্রথম বলে অস্ট্রেলিয়ান তারকার উইকেট নেওয়ার মুহূর্ত স্মৃতিতে আজীবন থাকবে এই পেসারের।
Published : 17 Jan 2024, 06:54 PM
টেস্ট অভিষেক এমনিতেই আজীবন স্মৃতিতে থাকার কথা। প্রথম বলেই উইকেট পাওয়ায় তা আরও বিশেষ হয়ে উঠেছে শামার জোসেফের জন্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অজপাড়াগাঁ থেকে উঠে আসা পেসার ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে পথচলা শুরু করেছেন স্টিভেন স্মিথের মহামূল্য উইকেট দিয়ে। আনন্দে আত্মহারা জোসেফ বলেছেন, ওই মুহূর্তটার ছবি টাঙিয়ে রাখতে চান তিনি নিজের ঘরে।
গায়ানায় সাড়ে তিনশ মানুষের ছোট একটি গ্রাম বারাকারার ছেলে জোসেফের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় বুধবার, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাডিলেইড টেস্ট দিয়ে। শুরুতে দলের বিপর্যয়ে ১১ নম্বরে নেমে খেলেন তিনি কার্যকর এক ইনিংস। পরে মূল কাজ বোলিংয়েও তার শুরুটা হয় রূপকথার মতো।
টেস্ট অভিষেকে প্রথম বলেই এই পেসার পান উইকেটের স্বাদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুদীর্ঘ টেস্ট ইতিহাসে ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই উইকেট নেওয়া মাত্র দ্বিতীয় বোলার জোসেফ। তার আগে এই কীর্তি গড়েছিলেন বাঁহাতি ফাস্ট বোলার টাইরেল জনসন, সেই ১৯৩৯ সালে! সব মিলিয়ে, টেস্ট ইতিহাসে ক্যারিয়ারের প্রথম বলে উইকেট শিকারি ২৩তম বোলার জোসেফ।
তার প্রথম উইকেট সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। সে কারণেই হয়তো আরও বেশি রোমাঞ্চিত জোসেফ। প্রথম দিনের খেলা শেষে তিনি বললেন, স্মৃতিতে আজীবন ভাসবে ওই মুহূর্তের ছবি।
“স্টিভেন স্মিথের উইকেট নেওয়া, এটা আমি সারা জীবন মনে রাখব। আমি আসলে একটি ছবি নেব এবং ঘরে টানিয়ে রাখব।”
নিজের প্রথম বলে উইকেট নেবেন, আগেই সতীর্থদের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন জোসেফ। কিন্তু সেটা যে স্মিথের উইকেট হবে, কল্পনাতেও ছিল না তার।
“আমি জানতাম না এটা যে স্টিভেন স্মিথের উইকেট হবে। আমার জন্য দারুণ ব্যাপার ছিল এটি। আমি ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। টেস্টের সেরা দলের বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছিলাম। তাই মানসিকতায় ইতিবাচক থেকে যেটা আমি সবচেয়ে ভালো পারি সেটাই করেছি।”
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং ইনিংসের নবম ওভারে বল হাতে পান জোসেফ। প্রথম বলটি করার সময় রান-আপের শেষ মাথায় পৌঁছেও বল করেননি। মনে হচ্ছিল, মেলাতে পারেননি রান-আপ। ২৪ বছর বয়সী পেসার বললেন, রান-আপ সমস্যা নয়, স্নায়ুচাপ জেঁকে ধরেছিল তাকে।
“আমি রান-আপে গড়বড় করিনি, স্নায়ুচাপে ছিলাম। তাই (বোলিং মার্কে) ফিরে যাই এবং প্রথম ডেলিভারিটি ঠিকমতো করার জন্য মনস্থির করি-অফ স্টাম্পের ওপর।”
শেষ পর্যন্ত ১৩৬.৭ কিলোমিটার গতিতে অফ স্টাম্পের একটু বাইরে স্মিথকে বল করেন তিনি। এই জায়গায় যে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা আছে, ধারণা ছিল জোসেফের। বললেন, কীভাবে পরিকল্পনা করে স্মিথের উইকেটটি নিয়েছিলেন তিনি।
“স্টিভ স্মিথের কয়েকটি টেস্ট ম্যাচ আমি দেখেছি এবং আমার মনে হয়েছে ওই জায়গায় তার দুর্বলতা আছে। তাই আমি স্থির করি যে, অফ স্টাম্পের চূড়ায় বল করব। কারণ, সে ক্রিজে অনেক নড়াচড়া করে; বোলারের লাইন নাড়িয়ে দিতে চায়। আমি স্রেফ মৌলিক ব্যাপারটায় অটল ছিলাম, অফ স্টাম্পের চূড়ায় বল করি, সামান্য মুভমেন্ট পাই এবং তার ব্যাটের কানায় লাগে।”
টেস্টে ওপেনার হিসেবে নতুন চ্যালেঞ্জের শুরুটা ভালো হয়নি স্মিথের। ফেরেন কেবল ১২ রান করে। স্মিথকে ফিরিয়ে অ্যাডিলেইড ওভালের সবুজ আঙিনায় যে খ্যাপাটে দৌড় দেন জোসেফ, তা ছিল দেখার মতো। ক্যারিবিয়ান এই পেসারের ভাষায়, “পারলে আমি গ্যালারির ওপর দিয়েও দৌড় দিতাম। আমার জন্য মুহূর্তটি সত্যিই অনেক আনন্দের ছিল।”
দিনের শেষে দারুণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শর্ট বলের ফাঁদে ফেলে অস্ট্রেলিয়ার আরেক বড় ভরসা মার্নাস লাবুশেনকেও ফেরান জোসেফ। কিন্তু তার কাছে স্মিথের উইকেটটি সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
ম্যাচের প্রথম ভাগে প্যাট কামিন্স ও জশ হেইজেলউডের আগুনে পুড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং। ১৩৩ রানে ৯ উইকেট হারানো দলকে ১৮৮ রান পর্যন্ত নিয়ে যান জোসেফ। ৩ চার ও এক ছক্কায় ৪১ বলে ৩৬ রান করেন তিনি। কেমার রোচকে নিয়ে শেষ উইকেটে গড়েন ইনিংসের একমাত্র পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটি।
অস্ট্রেলিয়া দিন শেষ করেছে ২ উইকেটে ৫৯ রান নিয়ে।