মন্থর উইকেট, ব্যাটে বল আসছিল ধীরে, হচ্ছিল নিচু। এমন কঠিন কন্ডিশনে মিলিত চেষ্টায় দলকে বড় পুঁজিই এনে দিলেন ব্যাটসম্যানরা। পরে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নামিবিয়াকে সহজেই হারাল নিউ জিল্যান্ড। বড় জয়ে সেমি-ফাইনালের আশা করল আরও জোরালো।
Published : 05 Nov 2021, 06:42 PM
শারজাহতে শুক্রবার সুপার টুয়েলভের ম্যাচে কেন উইলিয়ামসনের দলের জয় ৫২ রানে। আগে ব্যাটিং করে ১৬৩ তুলে নামিবিয়াকে তারা থামিয়ে দেয় ১১১ রানে। আন্তর্জাতিক ম্যাচে এই প্রথম মুখোমুখি হলো দুই দল।
ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন উইকেটে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা নিউ জিল্যান্ড শুরুতে কিছুটা ভুগেছে। তবে গ্লেন ফিলিপস ও জেমস নিশামের শেষের ঝড়ে বড় সংগ্রহই দাঁড় করায় তারা।
২১ বলে ৩ ছক্কা ও এক চারে ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন ফিলিপস। ২৩ বলে ২ ছক্কা ও এক চারে ৩৫ রান নিয়ে মাঠ ছাড়েন নিশাম। সঙ্গে এক উইকেট নিয়ে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
এই জয়ে নিউ জিল্যান্ড সেমি-ফাইনালের পথে এগিয়ে গেল আরেক ধাপ। তবে গ্রুপ-২ থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সেরা চারে জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ আছে আফগানিস্তান ও ভারতেরও।
ইনিংসের চতুর্থ বলেই বের্নার্ড শুলজকে ছক্কায় উড়িয়ে ডানা মেলার আভাস দেন মার্টিন গাপটিল। কিন্তু তার এই উড়ন্ত শুরু স্থায়ী হয়নি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৩ রানের ইনিংস খেলা নিউ জিল্যান্ড ওপেনার এবার করতে পারেন কেবল ১৮। ডেভিড ভিসার বলে মিড-অফে ক্যাচ দিয়ে পঞ্চম ওভারেই ফিরে যান তিনি।
৪৩ রান নিয়ে পাওয়ার প্লে শেষ করা কিউইরা সপ্তম ওভারেই হারায় আরেক ওপেনারকে। বাঁহাতি স্পিনার শুলজ ফিরিয়ে দেন ২ চারে ১৯ রান করে ড্যারিল মিচেলকে।
কেন উইলিয়ামসন ও ডেভন কনওয়েও টিকতে পারেননি। ইয়ান নিকোল লফটি-ইটনকে টানা ছক্কা-চার মারা নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক শিকার নামিবিয়া অধিনায়ক গেরহার্ড এরাসমাসের। তার অফ স্পিনে স্লগ সুইপ খেলে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন উইলিয়ামসন। করেন এক ছক্কা ও ৩ চারে ২৮। পরের ওভারেই রান আউটে কাটা পড়েন কনওয়ে (১৮ বলে ১৭)।
১৪ ওভার শেষে নিউ জিল্যান্ডের রান ৮৪। সেখান থেকে দলকে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে নেন নিশাম ও ফিলিপস।
এরাসমাসকে ছক্কায় ওড়ানো ফিলিপস এক্সট্রা কাভার দিয়ে ভিসার স্লোয়ারে মারেন আরেকটি। এই পেসারের শেষ দুই বলে একটি করে ছক্কা-চার হাঁকান নিশাম। ওভার থেকে আসে ২১ রান।
উনবিংশ ওভারে রুবেন ট্রাম্পেলমানের প্রথম দুই বলেই চার ও ছক্কা মারেন ফিলিপস। শেষ ওভারে জেজে স্মিটকে পুল শটে স্কয়ার লেগ দিয়ে সীমানা ছাড়া করেন নিশাম। এই দুইজনে গড়েন ৩৬ বলে ৭৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। যেখানে শেষ চার ওভারেই তারা তোলেন ৬৭! এবারের আসরে যেকোনো দলের শেষ চার ওভারে যা সর্বোচ্চ।
রান তাড়ায় নামিবিয়ার শুরুটা খারাপ হয়নি। দুই ওপেনার মাইকেল ফন লিনগেন ও স্টিভেন বার্ড পাওয়ার প্লেতে তোলেন ৩৬ রান।
এরপরই টানা তিন ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে দলটি। তাদের ৪৭ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে অষ্টম ওভারে। নিশামের স্কিড করে আসা সোজা বলে স্টাম্প এলোমেলো হয়ে যায় ফন লিনগেনের। এক ছক্কা ও ২ চারে এই ওপেনার রান করেন ২৫।
পরের ওভারেই মিচেল স্যান্টনার বোল্ড করে দেন ২ চারে ২১ রান করে বার্ডকে। দলকে আরও বিপদে ফেলে ইশ সোধির বলে কট বিহাইন্ড হয়ে যান এরাসমাস।
ভিসাও পারেননি দলকে টানতে। টিম সাউদির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান একটি করে ছক্কা-চারে ১৬ রান করে। পরের চার ব্যাটসম্যানের কেউ যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। ৩ উইকেট হাতে থাকলেও বড় হারেই মাঠ ছাড়ে নামিবিয়া।
৪ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে দুইয়ে থাকা নিউ জিল্যান্ড আগামী রোববার খেলবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ম্যাচটি জিতলেই নিশ্চিত করবে তারা সেমি-ফাইনাল।
তবে আফগানদের বিপক্ষে কিউইরা হারলে সেমি-ফাইনালে ওঠার সুযোগ তৈরি হবে ভারতেরও। তবে স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়ার বিপক্ষে তাদেরকে জিততে হবে অনেক বড় ব্যবধানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৬৩/৪ (গাপটিল ১৮, মিচেল ১৯, উইলিয়ামসন ২৮, কনওয়ে ১৭, ফিলিপস ৩৯*, নিশাম ৩৫*; শুলজ ৩-০-১৫-১, ট্রাম্পেলমান ৩-০-২৫-০, ভিসা ৪-০-৪০-১, স্মিট ২-০-২৭-০, লফটি-ইটন ২-০-২৪-০, এরাসমাস ৪-০-২২-১, বার্কেনস্টক ২-০-৯-০)
নামিবিয়া: ২০ ওভারে ১১১/৭ (বার্ড ২১, ফন লিনগেন ২৫, এরাসমাস ৩, গ্রিন ২৩, ভিসা ১৬, স্মিট ৯*, লফটি-ইটন ০, উইলিয়ামস ০, ট্রাম্পেলমান ৬*; সাউদি ৪-০-১৫-২, বোল্ট ৪-০-২০-২, মিল্ন ৪-০-২৫-০, স্যান্টনার ৪-০-২০-১, নিশাম ১-০-৬-১, সোধি ৩-০-২২-১)
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৫২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: জেমস নিশাম