গত বছর দারুণ পারফরম্যান্সে জাতীয় দলে ফেরা রাঙালেও বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা হয়নি শামীম হোসেনের, তাকে না রাখার কারণ জানালেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন।
Published : 11 Mar 2025, 04:12 PM
গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ে বড় অবদান রাখেন শামীম হোসেন। এরপর বিপিএলেও ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য আরেকবার দেখান।। বিশ ওভারের ক্রিকেটের বিশেষজ্ঞ তাকে বলাই যায়। সামনের পালাবাদলের পালায় তিনি ফিরতে পারেন ওয়ানডেতেও। কিন্তু বিসিবির নতুন কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা হয়নি তরুণ আগ্রাসী ব্যাটসম্যানের। তার সামনে অবশ্য দুয়ার খোলা রাখছেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন।
২০২৫ সালের বিসিবি কেন্দ্রীয় চুক্তিতে এমনিতে বড় কোনো চমক নেই। গত বছর জাতীয় দলের হয়ে বিভিন্ন সংস্করণে পারফর্ম করা ২১ জনকে নিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের তালিকা। তবে কিছুটা হলেও বিস্ময় জাগিয়েছে শামীমের না থাকা।
গত ডিসেম্বরে ক্যারিবিয়ান সফরের টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে প্রায় এক বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন শামীম। গায়ানার বোলিংবান্ধব মন্থর উইকেটে প্রথম দুই ম্যাচেই শেষ দিকে ঝড় তোলেন তিনি।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১৩ বলে ২৭ রানের পর দ্বিতীয়টিতে তিনি খেলেন ১৭ বলে ৩৫ রানের ইনিংস। দুই ম্যাচেই ওপরের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পর শামীমের ক্যামিওতে লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন তিনি।
তিন ম্যাচে ১৮৮.২৩ স্ট্রাইক রেটে ৬৪ রান করেন শামীম। সিরিজে একাধিক ম্যাচ খেলা আর কোনো ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট ১৪০ স্পর্শ করেনি।
ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সবশেষ বিপিএলে চিটাগং কিংসের হয়ে ১৫৯.২৭ স্ট্রাইক রেটে ৩৫২ রান করেন শামীম। সেরা দশ রান সংগ্রাহকের মধ্যে তার স্ট্রাইক রেটই ছিল সবচেয়ে বেশি।
শামীমের ব্যাটিংয়ের ধরনেও দেখা যায় ইতিবাচক পরিবর্তন। উদ্ভাবনী সব শট খেলার প্রবণতা তার বরাবরই ছিল। সেখানে এখন বেশ ধারাবাহিক ও কার্যকর মনে হয় তাকে। অলরাউন্ড ব্যাটিংয়ে উন্নতির আভাসও কিছুটা মেলে ধরতে পেরেছেন।
চোট-টোট না থাকলে সামনের সময়টায় যে তাকে টি-টোয়েন্টি দলে দেখা যাবে, এটা নিয়ে সংশয় আছে সামান্যই। আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাকিয়েও তার মতো প্রভাববিস্তারি একজন ব্যাটসম্যানকে প্রয়োজন দলের। মুশফিকুর রহিমের অবসর ও মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে টানাপোড়েনের পথ ধরে ওয়ানডেও যদি এই জায়গায় পরিবর্তন আসে, শামীম হতে পারেন সম্ভাব্য এক নাম। বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে তার নামটি তাই প্রত্যাশিত ছিল কিছুটা।
চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের তালিকা তৈরি করে জাতীয় নির্বাচক কমিটি সুপারিশ করে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের কাছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ নিশ্চিত করলেন, তাদের তালিকাতেই শামীমের নাম ছিল না।
“(শামীম) ভাবনায় থাকলে তো অবশ্যই আসত। আর বুঝতেই পারছেন, আরও কিছু নাম বাদ পড়েছে, যারা আগে ছিল কিন্তু পারফর্ম করতে পারেনি। তবে সামনে সবার জন্যই দরজা খোলা থাকবে। যে কাউকে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে হবে। তারপর কেন্দ্রীয় চুক্তি পাবে। জাতীয় দলের সঙ্গে চুক্তিটা মর্যাদাপূর্ণ একটা ব্যাপার। সেভাবেই এটা চূড়ান্ত করা হয়েছে।”
দারুণ পারফরম্যান্সে জাতীয় দলে ফেরাটা রাঙালেও অবশ্য গত বছর তিনটি টি-টোয়েন্টির বেশি খেলার সুযোগ পাননি শামীম। যথেষ্ট ম্যাচ না খেলাও কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে তার জন্য অন্তরায় হয়ে থাকতে পারে।
বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে এবার প্রথম জায়গা পেয়েছেন নাহিদ রানা, তানজিদ হাসান, রিশাদ হোসেন ও জাকের আলি। দীর্ঘ দিন পর ফিরেছেন সাদমান ইসলাম ও সৌম্য সরকার।
বাদ পড়েছেন সাকিব আল হাসান, নুরুল হাসান সোহান, জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান জয় ও নাঈম হাসান। গত অক্টোবরের পর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থমকে থাকা সাকিবের জাতীয় দলের ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে বাকিদের সামনে আছে লম্বা ক্যারিয়ার।
নিয়মিত পারফর্ম করতে পারলে সবার জন্যই জাতীয় দল ও কেন্দ্রীয় চুক্তির দরজা সবসময়ই খোলা, বললেন প্রধান নির্বাচক।
“নির্দিষ্ট করে কারও জন্য কোনো বার্তা আমরা দিতে চাই না। সবার জন্য বিষয়টা একই। কোনো কিছু ঘটলে, তার প্রতিফলনও কেন্দ্রীয় চুক্তিতে দেখা যাবে। এক্ষেত্রে অল্পতেই সন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই।”
“আবার কাউকে এমনও বলা হবে না যে, সে আসতে পারবে না। সবার জন্যই দরজা খোলা থাকবে। নিয়মিত পারফর্ম করে যেতে হবে। সম্ভাবনাময় অনেকেই আছে। অনেকে আবার সম্ভাবনা থাকলেও পারফর্ম করতে পারেনি। সেজন্য হয়তো এই বছর পায়নি। এতে আসলে ভুল কিছু নেই।”
চুক্তির বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের যারা বিভিন্ন সিরিজ বা টুর্নামেন্টে জাতীয় দলে সুযোগ পান, ওই সময়টায় চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারের মতোই ক্যাটেগরি অনুযায়ী পারিশ্রমিক পান তারা।