পাকিস্তান সফরে অভাবনীয় সাফল্য পেলেও বছরজুড়ে বাংলাদেশের সামগ্রিক পারফরম্যান্স ছিল হতাশাময়, তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একটি টেস্টে হারিয়ে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে বছরের শেষটা হয়েছে ভালো।
Published : 28 Dec 2024, 01:49 AM
কথায় বলে, ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এই বছরের শেষটা হয়েছে স্বপ্নের মতো। তবে প্রবাদবাক্য তো আর ক্রিকেটে সবসময় খাটে না। শেষের আলো দিয়ে তাই গোটা বছরের কালো আড়াল করা কঠিন। ক্যারিবিয়ানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ছাড়াও অবশ্য পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজে ঐতিহাসিক সাফল্য ধরা দিয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে বছরজুড়ে হতাশার অধ্যায়ই ছিল বেশি। তার পরও শেষের ভালোটুকুতে ভবিষ্যতের আশার আলোর রেখা অন্তত দেখা যায়।
মাঠের বাইরের ক্রিকেটে বছরের শেষ চার মাসে ছিল ঘটনার ঘনঘটা। দেশের রাজনৈতিক পালাবদলের ঢেউ প্রবলভাবেই আছড়ে পড়ে ক্রিকেট আঙিনায়। তাতে ভেসে যান প্রায় এক যুগ ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতির দায়িত্বে থাকা নাজমুল হাসানসহ তার ঘনিষ্ঠ অনেক পরিচালক। পরিবর্তন আসে ছেলেদের জাতীয় দলের প্রধান কোচের পদেও। বছরের শেষ ভাগে ক্রিকেটাঙ্গন উত্তাল ছিল বিদায়ী টেস্ট খেলতে সাকিব আল হাসানের দেশে ফিরতে না পারাকে ঘিরে নানা ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে।
পেছন ফিরে দেখা যাক, কেমন ছিল ২০২৪ সালে মাঠের ভেতরে-বাইরে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
টেস্টের বাংলাদেশ
এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার সম্ভাবনা নিয়ে বছর শুরু করেছিল বাংলাদেশ। পরে আফগানিস্তানের সঙ্গে দুটি টেস্ট ম্যাচ না হওয়ায় নতুন রেকর্ড হয়নি। তবে এক বছরে ১০ টেস্ট খেলার রেকর্ড স্পর্শ হয় এবার। ২০২২ সালে ১০ টেস্টে জয় ছিল কেবল একটি। এবার জয় তিনটি।
এক পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি টেস্ট জয়ের যৌথ রেকর্ড এটি। ২০১৪, ২০১৮ ও গত বছরও ধরা দিয়েছিল তিনটি করে জয়। তবে এই বছরটি বিশেষ কিছু অন্য জায়গায়। আগের ওই তিন দফায় তিনটি করে জয়ের সবকটিই ছিল দেশের মাঠে। এবারের তিন জয়ের সবকটিই দেশের বাইরে!
অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের মাঠে সাফল্যকে বলা যায় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেরই স্মরণীয় অধ্যায়গুলার একটি। এবারের আগে পাকিস্তানে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২০ ম্যাচে তাদের বিপক্ষে জয় ছিল না একটিও। সেই দেশেই এবার স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজরা। জয়ের ধরনের কারণেও ওই সিরিজের সাফল্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৪৪৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। বাংলাদেশ এক পর্যায়ে ৫ উইকেটে ২১৮ রানে থাকলেও পরে দারুণ ব্যাটিং-বোলিংয়ে ম্যাচ জিতে নেয় ১০ উইকেটে। পরের টেস্টে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ অসাধারণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জিতে যায় ৬ উইকেটে।
কৃতিত্ব কিংবা অর্জনের দিক থেকে খুব পিছিয়ে নেই বছরের আরেক জয়ও। গত ১০ বছর ধরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট সিরিজ মানেই বাংলাদেশের জন্য বিভীষিকা। সেখানেই এবার প্রথম টেস্টে আরেকটি পরাজয়ের পর খর্ব শক্তির দল নিয়েও দ্বিতীয় টেস্টে জ্যামাইকায় মিলেছে দারুণ এক জয়।
স্রেফ এটুকু জানলে টেস্ট ক্রিকেটে এ বছর বাংলাদেশকে বেশ সফলই বলা উচিত। সমস্যা হলো, বাকি সাত টেস্টের সবকটিতে হারতে হয়েছে বাজেভাবে! এর মধ্যে ভারত সফরে দুই টেস্টে বড় পরাজয় তো ছিলই, দেশের মাঠে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনেক প্রত্যাশা থাকলেও সঙ্গী হয়েছে হোয়াইটওয়াশড হওয়ার হতাশা।
অভাবনীয় সাফল্য ও অপ্রত্যাশিত ব্যর্থতা, এ বছর সবই ছিল পাশাপাশি।
ওয়ানডের বাংলাদেশ
যে সংস্করণকে মনে করা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তির জায়গা, সেখানেই এবার হতাশাটা ছিল বেশি। গত বছরই বিশ্বকাপ হওয়ায় এ বছর ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ম্যাচ খুব বেশি ছিল না। তিনটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেশের মাঠে ২-১ ব্যবধানে জিততে পারলেও নভেম্বরে শারজাহতে আফগানিস্তানের কাছে হারতে হয়েছে একই ব্যবধানে। এরপর বছরের শেষ ভাগে হোয়াইটওয়াশড ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে।
অথচ ২০২২ সালের সফরে ক্যারিবিয়ানদের হোয়াইটওয়াশড করেছিল বাংলাদেশ, ২০১৮ সালেও জিতেছিল সিরিজ। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে শেষ সিরিজটি অস্বস্তির বার্তাই মেলে ধরল।
টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশ
কাগজে-কলমে এই সংস্করণে বাংলাদেশের সফলতম বছর ছিল ২০২৪। এই বছর ২৪ ম্যাচ জয় এসেছে ১২টি। ২০২১ সালে ১১ জয় এসেছিল ২৭ ম্যাচে।
তবে সফলতম এই বছরেও আছে গ্লানির চোরাগলি। মার্চে শ্রীলঙ্কার কাছে সিরিজে হারের তোতো স্বাদ মিলেছে দেশের মাঠেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হারার বিব্রতকর অভিজ্ঞতাও হয়েছে। বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারলেও শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও নেপালকে হারিয়ে সুপার এইট পর্বে খেলার স্বস্তি মিলেছে। তবে সেখানে তারা হেরেছে অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও আফগানিস্তানের কাছে।
বিশেষ করে, আফগানদের বিপক্ষে এক পর্যায়ে রান রেটের সমীকরণ মিলিয়ে সেমি-ফাইনালে খেলার সুযোগ থাকলেও সেই তাড়না না দেখানোয় ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম নেয় দেশের ক্রিকেট অনুসারীদের মধ্যে ও সামাজিক মাধ্যমে।
অক্টোবরে ভারত সফরে তিন ম্যাচেই নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে বাজেভাবে। এর শেষটিতে রেকর্ড বইয়ে ঝড় তুলে ভারত ২০ ওভারে তুলে ফেলে ২৯৭ রান!
সামগ্রিক পরিসংখ্যানে সফলতম বছর হয়ে উঠতে সহায়তা করেছে মূলত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চারটি ম্যাচের জয়। তবে বছরের শেষে খর্বশক্তির দল নিয়েও দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশ করতে পারা এবং এই সিরিজে দলের খেলার ধরনে মিলেছে নতুন আশার খোরাক।
মিরাজ ও তাসকিনের বছর
পরিপূর্ণ একজন অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার যে বার্তা বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে দিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ, সেটির পূর্ণতার পথে বড় পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি এই বছর। ব্যাটে-বলে অসাধারণ এক বছর কাটিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে, টেস্ট ক্রিকেটে তিনিই ছিলেন অবিসংবাদিত সেরা পারফরমার।
এ বছর ১০ টেস্টে ৩৮.৩৭ গড়ে ৬১৪ রান করেছেন মিরাজ, উইকেট নিয়েছেন ৩১টি। দুই বিভাগেই তিনি দেশের সফলতম! পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার সিরিজে ম্যান অব দা সিরিজ ছিলেন এই অলরাউন্ডার।
তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের হয়ে এ বছর ১ হাজার রান করা একমাত্র ব্যাটসম্যানও তিনিই (৩৭.৯৬ গড় ১ হাজার ২৫)। উইকেট নিয়েছেন মোট ৪০টি।
বল হাতে অসাধারণ বছর কাটিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। সাত ওয়ানডে খেলে দেশের সর্বোচ্চ ১৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। চোটের কারণে বেশ কিছুদিন টেস্ট ক্রিকেট থেকে দূরে থাকলেও পরে ফিরে চার টেস্টে নিয়েছেন ১৯ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত ধারাবাহিকতায় ১৯ ম্যাচে উইকেট তার ৩০টি।
সব মিলিয়ে বছরে তার শিকার ৬৩টি। এক পঞ্জিকাবর্ষে যা বাংলাদেশের কোনো পেসারের রেকর্ড। পেস-স্পিন মিলিয়েই এর চেয়ে বেশি উইকেট আছে কেবল সাকিব আল হাসানের। ২০১০ সালে ৭৭টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
এই বছরই টেস্টে অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ দলের ১০ টেস্টের ৯টিই খেলেছেন। দারুণ বোলিংয়ে উইকেট নিয়েছেন ৩০টি। এক পঞ্জিকাবর্ষে পেস বোলিংয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড এটি।
২০২৪ সালে বাংলাদেশের বড় এক প্রাপ্তির নাম রিশাদ হোসেন। অনেক সম্ভাবনা নিয়ে গত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া লেগ স্পিনার এই বছর টি-টোয়েন্টিতে হয়ে উঠেছেন দলের বড় ভরসা, ঝলক কিছু দেখিয়েছেন ওয়ানডেতেও।
এ বছর দেশের ২৪ টি-টোয়েন্টির সবকটিই খেলেছেন রিশাদ। উইকেট নিয়েছেন ৩৫টি, এক পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড এটি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নজরকাড়া বোলিংয়ে ১৪টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি, এটিও বাংলাদেশের রেকর্ড। সামর্থ্যের নমুনা কিছুটা দেখিয়েছেন তিনি ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়েও। অভিষেক ওয়ানডেতে খেলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৮ বলে ৪৮ রানের ইনিংস, টি-টোয়েন্টিতে লঙ্কানদের বিপক্ষেই উপহার দেন সাত ছক্কায় ৩০ বলে ৫৩ রানের ইনিংস।
নতুন সম্ভাবনায় আলো ছড়িয়ে এই বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাব হয়েছে জাকের আলিরও। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ছাপ রেখেছেন তিনি সব সংস্করণেই। অভিষেকের বছরেই তিন সংস্করণ মিলিয়ে করেছেন ৭২৩ রান, দলের যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। ২৮ ইনিংস খেলে ছক্কা মেরেছেন ৩৪টি, অভিষেকের বছরে যেটি বাংলাদেশের রেকর্ড।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক দিনের একটি স্বপ্ন এ বছর পূরণ হয়েছে নাহিদ রানার হাত ধরে। এ দেশের প্রথম বোলার হিসেবে দেড়শ কিলোমিটার গতি স্পর্শ করেছেন তো বটেই, নিয়মিতই এই গতিতে বোলিং করে ব্যাটসম্যানদের মনে কাঁপন ধরিয়ে নজর কেড়েছেন ক্রিকেট বিশ্বের
এ বছর ভারত সফর দিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৭ বছরের পথচলা থামান মাহমুদউল্লাহ।
বিসিবিতে বদল
জুলাই-অগাস্টে ছাত্রজনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিসিবিতে নাজমুল হাসানের প্রায় এক যুগের রাজত্বও শেষ হয়ে যায়। ২০১২ সালে সরকারের মনোনয়নে বিসিবি সভাপতি হওয়ার পর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে ২০১৩ সাল থেকে টানা তিন বার বোর্ড প্রধান নির্বাচিত হন তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। সরকারের পতনের পর তিনি দেশের বাইরে চলে গিয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। গা ঢাকা দেন তার ঘনিষ্ঠ আরও বেশ কজন পরিচালক। সময়ের সঙ্গে তাদের পদও খালি হয়ে যায়।
অগাস্টেই নতুন বোর্ড সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। বোর্ড পরিচালক হন কোচ ও ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব নাজমুল আবেদীন। বেশির ভাগ পরিচালকের পদ এখনও শূন্য। বোর্ড প্রধানের সঙ্গে দুই-তিনজন পরিচালক মিলেই এখন মূলত চালিয়ে নিচ্ছেন বোর্ডের দৈনন্দিন কার্যক্রম।
হাথুরুসিংহের বিতর্কিত বিদায়
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দেশের মাঠে টেস্ট সিরিজ শুরু হওয়ার মাত্র পাঁচ দিন আগে গত ১৫ অক্টোবর কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে জাতীয় দলের কোচের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় চান্দিকা হাথুরুসিংহেকে। একজন ক্রিকেটারের গায়ে হাত তোলা, না জানিয়ে অতিরিক্ত ছুটি কাটানোসহ অসদাচরণের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ।
গত বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপে নাসুম আহমেদের গায়ে হাত তুলেছিলেন হাথুরুসিংহে, সংবাদমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছিল বিশ্বকাপের পরপরই। নাজমুল হাসানের বোর্ড এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছে বারবার। তবে বিশ্বকাপ ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে ওই বোর্ডের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেই এই ঘটনার উল্লেখ আছে বলে দাবি করেন নতুন বোর্ড প্রধান। হাথুরুসিংহে অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেন বিবৃতিতে। তবে তার দিক থেকে এখনও পর্যন্ত আইনি বা অন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানা যায়নি।
হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করার সংবাদ সম্মেলনেই নতুন কোচ হিসেবে জানানো হয় ফিল সিমন্সের নাম। তার সঙ্গে চুক্তি আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত। ক্যারিবিয়ান এই কোচের তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজে ভালো না করলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে একটি টেস্ট জয় করে বাংলাদেশ, টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নেয় ৩-০ ব্যবধানে।
এবং সাকিব
ঘটনাবহুল ক্যারিয়ারে আইসিসির নিষেধাজ্ঞা পাওয়াসহ অসংখ্য বিতর্কে জড়িয়েছেন সাকিব আল হাসান। তবে গত কয়েক মাস ধরে যে অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে তাকে যেতে হচ্ছে, এসব তার জন্যও নতুন এবং কিছুদিন আগে ছিল অকল্পনীয়।
বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর সবকিছু আগের মতোই চলছিল। জুলাইয়ের আন্দোলনে তার চুপ থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। আন্দোলনের সময় সামাজিক মাধ্যমে তার স্ত্রীর একটি পোস্ট এবং কানাডায় টি-টোয়েন্টি লিগে খেলার সময় এক দর্শকের দিকে তার একটি মন্তব্য ঘিরে তুমুল সমালোচনা হতে থাকে তাকে নিয়ে। সরকার পতনের পর তিনি যখন বাংলাদেশ দলের হয়ে পাকিস্তান সফরে, দেশে তখন তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয় রাজধানীর আদাবর থানায়।
দেশের বাইরে থেকেই দেশের হয়ে খেলতে থাকেন তিনি। পাকিস্তান সফরের পর ভারত সফরেও সঙ্গী হন দলের। সেখানে দ্বিতীয় টেস্টের আগে ঘোষণা দেন, অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুরের ম্যাচ খেলে অবসর নিতে চান টেস্ট ক্রিকেট থেকে। কিন্তু হত্যা মামলার আসামি হিসেবে তার দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা ও টানাপড়েন শুরু হয়। দেশের মাঠ থেকে বিদায় নিতে বোর্ড ও সরকারের সহায়তা চান তিনি। কয়েক দফায় নানারকম বক্তব্য দেওয়ার পর বোর্ড সভাপতি ও ক্রীড়া উপদেষ্টার কথায় ইঙ্গিত মেলে তাকে সবুজ সংকেত দেওয়ার।
তবে ঘটনা নতুন মোড় নেয় মিরপুর টেস্টের কাছাকাছি সময়ে গিয়ে। সাকিবের দেশে ফেরা ঠেকাতে মিরপুর স্টেডিয়ামের আশেপাশে আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করেন এক দল লোক। পরে তার দেশে ফেরা নিশ্চিত করতে পাল্টা আন্দোলন শুরু করেন ভক্তরা। কয়েকদিন ধরে তুমুল উত্তপ্ত অবস্থা তৈরি হয় মিরপুর স্টেডিয়ামের আশেপাশে।
শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা-শঙ্কায় সাকিবকে দেশে ফিরতে নিরুৎসাহিত করা হয়। দেশে ফেরার পথে দুবাই থেকেই ফিরে যেতে হয় তাকে। তার আর দেশে ফেরা হয়নি। টেস্ট থেকে আনুষ্ঠানিক অবসরও হয়নি। আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের ইচ্ছের কথা বলেছিলেন তিনি। সেই ইচ্ছেপূরণও এখন চরম অনিশ্চয়তায়।
এসবের মধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম বাঁহাতি স্পিনারের উচ্চতায় নিজেকে তুলে নেন তিনি। ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলতে গিয়ে বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পর বছরের শেষ দিকে নিষিদ্ধ হন বোলিংয়ে। সব মিলিয়ে তার ক্যারিয়ার এখন সঙ্কটময় এক মোড়ে।
নারী ক্রিকেটেও হতাশার বছর
মেয়েদের ক্রিকেটের জন্য এই বছরটি ছিল চরম হতাশাজনক। এ বছর বাংলাদেশ ওয়ানডে খেলেছে কেবল ৬টি। মার্চে দেশের মাঠে নিগার সুলতানার দল হোয়াইটওয়াশড হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কাছে। বছরের শেষ দিকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রত্যাশিতভাবেই তারা জিতেছে ৩-০ ব্যবধানে।
তবে আইরিশ মেয়েদের কাছেই পরে টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশড হওয়ার বিব্রতকর অভিজ্ঞতা হয় নিগারদের। এই চিত্র ছিল বছরজুড়েই। এ বছর ১৯ টি-টোয়েন্টি লেখে বাংলাদেশের জয় কেবল তিনটি!
এর মধ্যে দুটি জয় ছিল এশিয়া কাপে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষের সঙ্গে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রত্যাশিত জয় দিয়ে বৈশ্বিক এই আসরে ১০ বছরের জয়খরা কাটাতে পারে বাংলাদেশ। তবে হেরে যায় পরের তিন ম্যাচের সবকটিতে।
সব মিলিয়ে গত বছর যে লড়িয়ে ও উজ্জীবিত দলের প্রতিচ্ছবি মেলে ধরেছিল এই দল, এই বছর তা ছিল প্রায় উধাও।
এশিয়ার সেরা যুবারা
যুব ক্রিকেটে বরাবরের মতোই সাফল্যের স্রোত বয়ে চলেছে এ বছরও। ভারতকে আবারও হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এই দলের বেশ কজনই অবশ্য আগামী যুব বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন না। তবে অধিনায়ক আজিজুল হাকিমসহ তুমুল প্রতিভাবান কয়েকজন তরুণের প্রতিভার ছটা দেখা গেছে এই আসরে, ভবিষ্যতে যাদেরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারে বাংলাদেশ।
নারী যুব এশিয়া কাপের প্রথম আসরে ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে রানার্স আপ হয় বাংলাদেশ।