এনসিএল টি-টোয়েন্টি
এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচেই রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা, রান জোয়ারের ম্যাচে শেষ বলে ছক্কা মেরে ঢাকাকে রোমাঞ্চকর জয় এনে দিলেন শুভাগত হোম।
Published : 11 Dec 2024, 02:52 PM
জয়ের জন্য শেষ বলে দরকার ৫ রান। ইয়র্কারের চেষ্টায় হয়তো স্টাম্পের বাইরে ফুল টস ডেলিভারি করে বসলেন তোফায়েল আহমেদ। সপাটে ব্যাট চালিয়ে কভারের ওপর দিয়ে বল সীমানা ছাড়া করলেন শুভাগত হোম। রুদ্ধশ্বাস জয়! অন্য প্রান্ত থেকে ছুটে এসে তার কোলে চড়ে বসলেন মাহিদুল ইসলাম। ডাগআউট থেকে ততক্ষণে মাঠে ছুটে এসেছেন সতীর্থদের সবাই। গোল হয়ে উল্লাসে মেতে উঠলেন সবাই। উদযাপনের মধ্যমণি শেষ বলের নায়ক শুভাগত।
অথচ এই ম্যাচের নায়ক হতে পারতেন জিসান আলম। জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) টি-টোয়েন্টির উদ্বোধনী ম্যাচেই বিস্ফোরক এক সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছেন সিলেট বিভাগের হয়ে মাঠে নামা তরুণ এই ব্যাটসম্যান।
তার চেয়ে কম যাননি আরিফুল ইসলামও। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধীরস্থির ব্যাটসম্যান হিসেবে যার পরিচিতি, সেই তিনি দেখালেন তার অন্য রূপ। টি-টোয়েন্টি অভিষেকে খেললেন ৪৬ বলে ৯৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। কিন্তু ঢাকার রোমাঞ্চকর জয়ে ওই ছক্কায় শেষের নায়ক অভিজ্ঞ শুভাগত।
সিলেটে এনসিএল টি-টোয়েন্টির উদ্বোধনী দিনের আরেক ম্যাচে মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও ইমরানউজ্জামানের ঝড়ো ফিফটির পর রকিবুল হাসানের দারুণ বোলিংয়ে বরিশালের বিপক্ষে ৩১ রানের জয় পেয়েছে ঢাকা মেট্রো।
জিসানের সেঞ্চুরির জবাবে আরিফুলের ৯৪, শেষের নাটকীয়তা
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২০৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করে মনে রাখার মতো এক জয় পায় ঢাকা।
বড় লক্ষ্য তাড়ার মঞ্চ গড়ে দেন আরিফুল ইসলাম। তিন নম্বরে নেমে তার ৪৬ বলে ৯৪ রানের সৌজন্যে জয়ের সম্ভাবনা জাগায় ঢাকা। পরে মাহিদুলকে নিয়ে বাকি কাজ শেষ করেন শুভাগত।
৬ চার ও ৮ ছক্কার ইনিংসে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন আরিফুল।
আরিফুল-ঝড়ের কবলে পড়ে টুর্নামেন্টের প্রথম সেঞ্চুরি করেও পরাজিত দলে জিসান আলম। সিলেটের হয়ে ৪ চার ও ১০ ছক্কায় ৫৩ বলে ১০০ রান করেন তরুণ ওপেনার।
সব মিলিয়ে এই ম্যাচে হয় ২৫টি ছক্কা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সিলেটের পক্ষে ঝড়ো শুরু করেন তৌফিক খান। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ১৭ বলে ২৯ রান করে আউট হন তিনি। এরপর অমিত হাসানকে নিয়ে ৫৮ বলে ৯৫ রানের জুটি বাঁধেন জিসান।
কিছুটা রয়েসয়ে শুরু করে একটা সময় জিসানের রান ছিল ২৭ বলে ২৬। একাদশ ওভার থেকে তিনি আবির্ভুত হন ভিন্ন রূপে। তাণ্ডব চালিয়ে ৩৯ বলে তিনি পৌঁছে যান ক্যারিয়ারের প্রথম পঞ্চাশে। সেখান থেকে তিন অঙ্ক ছুঁতে তার লাগে আর মাত্র ১৩ বল।
১৪তম ওভারে আরাফাত সানির অফ স্পিনে টানা পাঁচটি ছক্কা মারেন জিসান। পরে সুমন খানের পরপর দুই ডেলিভারির ঠিকানাও বানান সীমানার ওপারে।
৫২ বলে সেঞ্চুরি করে আর টিকতে পারেননি জিসান। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ইনিংসে তার ১০ ছক্কার চেয়ে বেশি ছক্কা আছে শুধু তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্তর (দুজনই ১১টি)।
শেষ দিকে অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি ৪ চার ও ১ ছক্কায় ১৭ বলে ৩০ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে দলকে দুইশ পার করান।
রান তাড়ায় শুরুতেই সাইফ হাসানের উইকেট হারায় ঢাকা। তিন নম্বরে নামা আরিফুলের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ৬৪ রান করে ঢাকা।
৩ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কায় ২৭ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন আরিফুল। এরপর ছুটতে থাকেন একই গতিতে। রাব্বির বাঁহাতি স্পিনে চমৎকার রিভার্স সুইপে তিনি ছক্কা মারেন ডিপ থার্ড ম্যানে। পরে আবু জায়েদের বলে দুটি চার মেরে পৌঁছে যান নব্বইয়ে।
ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি ছোঁয়ার চেষ্টায় আবু জায়েদের বলে টাইমিং করতে পারেননি আরিফুল। কাভারে ধরা পড়ে ফেরেন ২০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
তখন জয়ের জন্য ঢাকার প্রয়োজন ছিল ৪৪ বলে ৬৬ রান। পঞ্চম উইকেটে মাহিদুলের সঙ্গে ৩৮ বলে ৬৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে জেতান শুভাগত।
১৯তম ওভারে সৈয়দ খালেদ আহমেদের বলে ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়ে যান শুভাগত। তবে উচ্চতার কারণে ‘নো বল’ হওয়ায় বেঁচে যান ৩৮ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
শেষ ওভারে ১২ রানের সমীকরণে তোফায়েলের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মারেন মাহিদুল। শেষ বলে রোমাঞ্চকর জয়ের গল্পে তুলির শেষ আঁচড় দেন বিপিএলে দল না পাওয়া শুভাগত।
মাহিদুল ৪ চারে ২৩ বলে ৩০ ও শুভাগত ২টি করে চার-ছক্কায় ১৮ বলে ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
সিলেট বিভাগ: ২০ ওভারে ২০৫/৪ (তৌফিক ২৯, জিসান ১০০, অমিত ২৬, মাহফুজুর ৩০*, তোফায়েল ৯, ওয়াসিফ ১*; সুমন ৪-০-৩৭-০, সালাউদ্দিন ৩-০-৪৪-০, নাজমুল ৪-০-২৮-২, এনামুল ৪-০-৪৫-১, তাইবুল ৪-০-১৭-১, আরাফাত ১-০-৩২-০)
ঢাকা বিভাগ: ২০ ওভারে ২০৭/৪ (আশিকুর ১৭, সাইফ ০, আরিফুল ৯৪, আরাফাত ২৭, মাহিদুল ৩০*, শুভাগত ৩১*; খালেদ ৪-০-২৯-১, আবু জায়েদ ৪-০-৩৯-১, রাজা ৪-০-৪০-১, নাবিল ২-০-২৩-০, তোফায়েল ৩-০-৩৮-০, মাহফুজুর ৩-০-৩৭-০)
ফল: ঢাকা বিভাগ ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আরিফুল ইসলাম
নাঈম-ইমরানের ব্যাটে জিতল মেট্রো
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার মাঠে বরিশালকে ৩১ রানে হারায় ঢাকা মেট্রো। ১৯৩ রানের লক্ষ্যে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬১ রানের বেশি করতে পারেনি বরিশাল।
মেট্রোর জয়ের কারিগর দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও ইমরানউজ্জামান। উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ১১ ওভারে ১১৯ রান যোগ করেন তারা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই তাণ্ডব চালান নাঈম ও ইমরান। পঞ্চম ওভারে পঞ্চাশ পূর্ণ করে মেট্রো। পাওয়ার প্লেতে তারা করে ৬৮ রান।
৩ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কায় মাত্র ২৪ বলে ফিফটি করেন নাঈম। ২ চার ও ৪ ছক্কায় পঞ্চাশ করতে ইমরান খেলেন ৩০ বল।
পরপর দুই ওভারে দুজনকে ফিরিয়ে রানের গতি কিছুটা কমায় বরিশাল। ৫ চার ও ৪ ছক্কার ইনিংসে ৩৫ বলে ৬৫ রান করেন নাঈম। ইমরানের ব্যাট থেকে আসে ৩৩ বলে ৫৩ রান।
পরে কাঙ্ক্ষিত গতি পায়নি মেট্রোর ইনিংস। গাজী তাহজিবুল ইসলাম ২৫ বলে ৩৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে দুইশর কাছে নিয়ে যান।
রান তাড়ায় পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারায় বরিশাল। একপ্রান্ত আগলে রেখে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন তিন নম্বরে নামা ফজলে মাহমুদ। ছয় নম্বরে নেমে তাকে সঙ্গ দেন সোহাগ গাজী।
দুজন মিলে ৫৫ বলে ৮২ রানের জুটি গড়েন। তবে একবারের জন্যও মনে হয়নি ম্যাচটি জিততে পারে বরিশাল।
রান আউটে কাটা পড়ে ফেরার আগে ৪ চার ও ৫ ছক্কায় ৫২ বলে ৭৭ রান করেন ফজলে মাহমুদ। সোহাগের ব্যাট থেকে আসে ৩২ বলে অপরাজিত ৪০ রান।
৬৫ রানের ইনিংস খেলা নাঈম পান ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা মেট্রো: ২০ ওভারে ১৯২/৪ (ইমরানউজ্জামান ৫৩, নাঈম ৬৫, তাহজিবুল ৩৬*, আনিসুল ১৫, আবু হায়দার ১৫, আল আমিন ৩*; রুয়েল ৪-০-২৮-১, সোহাগ ৪-০-৩৫-১, তানভির ৩-০-৪৬-০, নুর ৪-০-৪২-০, মেহেদি ৪-০-২৮-২, মইন ১-০-১২-০)
বরিশাল: ২০ ওভারে ১৬১/৮ (মইনুল ০, মজিদ ৯, ফজলে মাহমুদ ৭৭, মইন ৫, আহরার ১৯, সোহাগ ৪০*, সালমান ১, তানভির ০, রুয়েল ০, মেহেদি ১*; আবু হায়দার ৪-০-৩৭-১, আলিস ৪-০-৩০-১, রকিবুল ৪-০-২৬-৩, শহিদুল ৪-০-২৪-১, আল আমিন ১-০-১১-০, আনিসুল ৩-০-৩১-১)
ফল: ঢাকা মেট্রো ৩১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ নাঈম শেখ