স্রেফ ৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তানভির ইসলাম, ফিফটি করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম ইকবাল, লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হলেও ৩ উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
Published : 20 Mar 2024, 06:55 PM
বৃষ্টিতে ভেজা আউটফিল্ডের কারণে বিকেএসপির দুই মাঠে তখনও খেলা শুরুর অপেক্ষা। কিন্তু ফতুল্লার মাঠে ততক্ষণে আবাহনী লিমিটেড ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের ম্যাচ প্রায় শেষ! তানভির ইসলামের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সেখানে দুপুর গড়ানোর আগেই অনায়াস জয় পায় আবাহনী।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের চতুর্থ রাউন্ডে বুধবার বিকেএসপির দুই ম্যাচেরই দৈর্ঘ্য কমে আসে ৩৪ ওভারে। ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে পুরো ম্যাচই শেষ হয়ে যায় ৩৪ ওভারে। ৮ উইকেটে জিতে যায় আবাহনী।
বাঁহাতি স্পিনে ৬ ওভারে ৩ মেইডেনসহ স্রেফ ৭ রান খরচায় ৫ উইকেট নেন তানভির। ২১.৩ ওভারে ব্রাদার্স গুটিয়ে যায় ৭১ রানে। পরে ১২.৩ ওভারে সেটি টপকে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
চার ম্যাচে আবাহনীর চতুর্থ জয় এটি। সমানসংখ্যক ম্যাচে সবকটিই হারল ব্রাদার্স।
প্রথম ইনিংসেই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া তানভির অনুমেয়ভাবেই জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ৮৮ ম্যাচের লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারে তার দ্বিতীয় ৫ উইকেট এটি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ব্রাদার্সের হয়ে দুই অঙ্ক ছুঁতে পেরেছেন কেবল রহমতউল্লাহ আলি। ৩টি করে চার-ছক্কায় ২৯ বলে ৩৫ রান করেছেন ২৬ বছর বয়সী ওপেনার।
সপ্তম ওভারে আব্বাস মুসাকে ফিরিয়ে প্রথম আঘাত করেন তানভির। পরের ওভারে সম্প্রতি যুব ক্রিকেট লিগ খেলা আল ফাহাদের বলে ক্যাচ আউট হন রহমতউল্লাহ। দলের পঞ্চাশ হওয়ার আগে তানভিরের দ্বিতীয় শিকার সৈয়দ জারিফ রহমান।
এরপর ষোড়শ ওভারে কোনো রান খরচ না করেই ৩ উইকেট নেন তানভির। দ্বিতীয় বলে সুইপ করার চেষ্টায় বোল্ড অমিত মজুমদার। পঞ্চম বলে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ আবির হোসেন।
ওভারের শেষ বলে এনামুল হকের ক্ষিপ্রতায় মারাজ মাহবুব স্টাম্পড হয়ে ফিরলে ৫ উইকেট পূর্ণ হয় তানভিরের। তার বোলিং বিশ্লেষণ তখন ৫-৩-৩-৫! পরে আরও এক ওভার করলেও আর সাফল্য পাননি বাঁহাতি স্পিনার।
১৮ বছর বয়সী পেসার ফাহাদ ও আরেক বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসান নেন ২টি করে উইকেট।
ছোট লক্ষ্যে তৃতীয় ওভারে সাব্বির হোসেনের উইকেট হারায় আবাহনী। প্রথম পাঁচ ওভারে কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেনি তারা। ষষ্ঠ ওভারে ওয়ালিদের বলে ২ চারের পর ছক্কা মারেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ।
তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বাঁহাতি ওপেনার। নবম ওভারে স্লিঙ্গিং অ্যাকশনের পেসার নুর মোহাম্মদের বলে বোল্ড হন ৩০ রান করা নাঈম।
চার নম্বরে নেমে বাকি কাজ সারতে বেশি সময় নেননি আফিফ হোসেন। ২টি করে চার-ছক্কায় ২০ বলে ২৩ রান করে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৭ রানে অপরাজিত থাকেন লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা এনামুল হক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ২১.৩ ওভারে ৭১ (রহমতউল্লাহ ৩৫, মুসা ৬, জাকিরুল ৩, জারিফ ৪, অমিত ৩, রাহাতুল ৮, আবির ০, মারাজ ০, দেলোয়ার ৩, ওয়ালিদ ০*, নুর ৩; সাইফ উদ্দিন ৫-১-২৪-০, ফাহাদ ৭-০-৩২-২, তানভির ৬-৩-৭-৫, নাহিদুল ২-০-৫-১, রাকিবুল ১.৩-০-১-২)
আবাহনী লিমিটেড: ১২.৩ ওভারে (নাঈম ৩০, সাব্বির ২, এনামুল ৭*, আফিফ ২৩*; নুর ৬-২-১২-২, ওয়ালিদ ৩-১-২৫-০, দেলোয়ার ২.৩-০-২৭-০, আবির ১-০-৬-০)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তানভির ইসলাম
বোলারদের সাজানো মঞ্চে তামিম-পারভেজের ফিফটি
প্রথম তিন ম্যাচের ব্যর্থতা পেছনে ফেলে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেললেন তামিম ইকবাল। তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে ফিফটি করলেন আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা পারভেজ হোসেন ইমন। দুজনের একশ ছাড়ানো জুটিতে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব।
তামিম-পারভেজের কাজটা অবশ্য সহজ করে দেন বোলাররা। বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে নির্ধারিত ৩৪ ওভারের ১৭ বল বাকি থাকতে ১৩২ রানে গুটিয়ে যায় রূপগঞ্জ টাইগার্স। জবাবে ২ উইকেট হারিয়ে ২৮ বল আগেই ম্যাচ জিতে নেয় তামিমের নেতৃত্বাধীন দল।
চার ম্যাচে প্রাইম ব্যাংকের চতুর্থ জয় এটি। নেট রান রেটের কারণে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে তারা। সমানসংখ্যক এখনও জয় পায়নি রূপগঞ্জ টাইগার্স।
প্রাইম ব্যাংকের জয়ে ম্যাচ সেরা তামিম। ক্যারিয়ারের ৬৭তম ফিফটিতে ৭৮ বলে ৬৭ রান করেছেন অভিজ্ঞ ওপেনার। পারভেজের ব্যাট থেকে আসে ৭৫ বলে ৫০ রান। রান তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে ১১৮ রান যোগ করেন দুই বাঁহাতি ওপেনার।
৬৪ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তামিম। আব্দুল্লাহ আল মামুনের বলে স্লগ করতে গিয়ে এলোমেলো হয় তার স্টাম্প। সমাপ্তি ঘটে ৬ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসের।
আগের দুই ম্যাচে চার-ছক্কার ঝড় তোলা পারভেজ এদিন খেলেন রয়েসয়ে। ৭৪ বলে ৩ চারে লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের দশম পঞ্চাশ পূর্ণ করার পরের বলেই ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন তিনি।
পরে বাকি কাজ শেষ করেন বিশাল চৌধুরি ও নাঈম ইসলাম।
ম্যাচের প্রথমভাগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে একদমই সুবিধা করতে পারেনি রূপগঞ্জ টাইগার্স। দলকে কোনোমতে একশ পার করান শামসুর রহমান। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরার আগে ৪৬ বলে ৫০ রান করেন অভিজ্ঞ কিপার-ব্যাটসম্যান।
রূপগঞ্জের ইনিংসের ৩১তম ওভারে 'অবস্ট্রাক্টিং দা ফিল্ড' আউট হন কাজি অনিক। হাসান মাহমুদের বল লং অনের দিকে খেলে রানের জন্য ছোটেন শামসুর। সাব্বির রহমান প্রথম দফায় বল ধরতে ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় রানও নেন তিনি।
দুই রান সম্পূর্ণ করে পপিং ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে সাব্বিরকে ‘টোপ’ দিতে থাকেন অনিক। পরে সাব্বির থ্রো করলে ক্রিজে না ঢুকেই সেটি ব্যাট দিয়ে ড্রাইভ করেন অনিক। সঙ্গে সঙ্গে আবেদন করে প্রাইম ব্যাংকের ফিল্ডাররা।
কিছুক্ষণ আলোচনার পর অনিককে আউটের সিদ্ধান্ত জানান আম্পায়াররা। রূপগঞ্জের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। পরের ওভারে শামসুরের বিদায়ে অল আউট হয় তারা।
প্রাইম ব্যাংকের হয়ে ৩ উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম। এছাড়া তরুণ পেসার আশিকুর জামান ও অভিজ্ঞ লেগ স্পিনার অলক কাপালির ঝুলিতে জমা পড়ে ২টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৩১.১ ওভারে ১৩২ (মামুন ১, মাহফিজুল ১৬, আরাফাত ২১, শামসুর ৫০, ফরহাদ ৩, গালিব ২৫, সালমান ০, সোহাগ ০, আরিফুল ৩, অনিক ৪, নাবিল ০*; মেহেদি ৭-১-১৭-১, আশিকুর ৫.১-০-২২-২, হাসান ৬-০-২৬-১, অলক ৭-০-৪০-২, নাজমুল ৬-১-২৪-৩)
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ২৯.২ ওভারে ১৩৩/২ (তামিম ৬৭, পারভেজ ৫০, বিশাল ৬*, নাঈম ৮*; আরাফাত ৪-০-২২-০, সোহাগ ৬-০-২৯-০, গালিব ৩.২-০-১০-০, অনিক ৩-০-১৩-০, আরিফুল ৭-০-২৭-১, সালমান ৩-০-১৯-০, মামুন ১-০-৮-১, নাবিল ২-০-৫-০)
ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তামিম ইকবাল
ইয়াসির-সোহানের ঝড়ো ফিফটি, সাকিবের ৩ উইকেট
বিপিএল শেষে বিরতি নেওয়া সাকিব আল হাসান মাঠে ফিরলেন প্রিমিয়ার লিগের চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচ দিয়ে। তার ফেরার দিন ইয়াসির আলি চৌধুরি ও নুরুল হাসান সোহানের ঝড়ো ফিফটিতে সিটি ক্লাবকে ৪০ রানে হারাল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে নির্ধারিত ৩৪ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২১৮ রান করে শেখ জামাল। জবাবে ৯ উইকেটে ১৭৮ রানে থামে সিটি ক্লাবের ইনিংস।
চার ম্যাচে শেখ জামালের তৃতীয় জয় এটি। এখনও প্রথম জয়ের খোঁজে সিটি ক্লাব।
ওপরের সারির ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পর পঞ্চম উইকেটে স্রেফ ৯৯ বলে ১৩৮ রানের জুটি গড়েন সোহান ও ইয়াসির। দুজনই খেলেন সত্তর ছোঁয়া ইনিংস।
৬ চার ও ৪ ছক্কায় স্রেফ ৫৭ বলে ৭৮ রানের সৌজন্যে ইয়াসির জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। টানা তৃতীয় সত্তর ছোঁয়া ইনিংসে ৬০ বলে ৭২ রানে অপরাজিত থাকেন সোহান।
ফেরার ম্যাচে ব্যাট হাতে ১৪ বলে ১৯ রান করেন সাকিব। পরে বোলিংয়ে ৭ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে নেন ৩টি উইকেট।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে চতুর্থ ওভারের শেষ বলে সৈকত আলি ফিরলে ক্রিজে যান সাকিব। তৃতীয় বলে লফটেড কভার ড্রাইভে বাউন্ডারি মারেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। পরে মেহেদি হাসানের বলে লং অফ দিয়ে মারেন আরেকটি চার।
সম্ভাবনাময় শুরু করলেও টিকতে পারেননি তিনি। রাফসান আল মাহমুদের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ওয়াইড লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাকিব। এরপর ফজলে মাহমুদও আউট হলে কিছুটা চাপে পড়ে শেখ জামাল।
পাল্টা আক্রমণে সব চাপ দূরে ঠেলে দেন ইয়াসির ও সোহান। ৪৪ বলে লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের ষোড়শ ফিফটি করেন ইয়াসির। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর ১৩ বলে আরও ২৮ রান নেন তিনি। শেষ ওভারে থামে তার ৬ চার ও ৪ ছক্কার ইনিংস।
আগের দুই ম্যাচে ৮০ ও ১০১ রান করা সোহান ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এদিন ৪৩ বলে পূর্ণ করেন ২৩তম ফিফটি।
রান তাড়ায় তেমন সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি সিটি ক্লাব। ষষ্ঠ ওভারে জয়রাজ শেখকে ফিরিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন সাকিব। সুইপ করতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দেন জয়রাজ।
পরে ২৩তম ওভারে পরপর দুই বলে রাফসান ও সাজ্জাদুল হককে ফেরান সাকিব। কিছুটা থেমে আসা ডেলিভারি আগেই ব্যাট চালিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেন রাফসান। দারুণ টার্ন করা বলে ভুল লাইনে খেলে বোল্ড হন সাজ্জাদ।
সিটি ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন শাহরিয়ার কোমল। সাদিকুর রহমান খেলেন ৩৫ রানের ইনিংস। শেষ দিকে ইফরান হোসেনের ২৪ রানে পরাজয়ের ব্যবধান কিছুটা কমায় সিটি ক্লাব।
সাকিব ছাড়াও শেখ জামালের পক্ষে ৩ উইকেট নেন তরুণ পেসার রিপন মণ্ডল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৩৪ ওভারে ২১৮/৫ (সাইফ ১০, সৈকত ৮, সাকিব ১৯, ফজলে মাহমুদ ১৯, সোহান ৭২*, ইয়াসির ৭৮, জিয়াউর ১*; ইফরান ৭-১-৫০-১, সোহেল ৭-০-৫৩-১, মেহেদি ৪-০-৩৬-১, রাফসান ৫-১-১০-১, মইনুল ৭-০-৪২-১, নাইমুল ৪-০-২২-০)
সিটি ক্লাব: ৩৪ ওভারে ১৭৮/৯ (সাদিকুর ৩৫, জয়রাজ ৫, শাহরিয়ার ৩৮, রাফসান ১৫, আশিক ২৫, সাজ্জাদুল ০, মইনুল ১৯, ইফরান ২৪*, নাইমুর ৮, মেহেদি ০, সোহেল ০*; শফিকুল ৫-০-৪৪-২, রিপন ৬-১-৩৭-৩, সাইফ ৭-০-২২-১, সাকিব ৭-০-৩৯-৩, টিপু ৭-১-১৮-০, তাইবুর ২-০-১৩-০)
ফল: শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ৪০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ইয়াসির আলি চৌধুরি