ছয় ম্যাচের পাঁচটি জিতল ইমরুল কায়েসের অগ্রণী ব্যাংক, আব্দুল মজিদের সেঞ্চুরিতে প্রথম জয় পেল রূপগঞ্জ টাইগার্স।
Published : 19 Mar 2025, 05:53 PM
জয়ের জন্য শেষ বলে প্রয়োজন ৩ রান। সেঞ্চুরি থেকে তখন ৪ রান দূরে আব্দুল মজিদ। অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি স্কুপ করে দিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ফাইন লেগ দিয়ে বল চলে গেল সীমানার বাইরে। তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেললেন মজিদ, রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব পেল শ্বাসরুদ্ধকর জয়।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বুধবার আরেক ম্যাচে শতরানের দেখা পান রায়ান রাফসান রহমান। তবে দলকে জেতাতে পারেননি শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব অধিনায়ক। দুর্দান্ত পথচলায় আরেকটি ম্যাচ জিতে নেয় ইমরুল কায়েসের অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। দারুণ ইনিংস খেলে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক।
দিনের অন্য ম্যাচে নবম উইকেটে অসাধারণ এক জুটিতে দারুণ জয় পায় গুলশান ক্রিকেট ক্লাব।
রূপগঞ্জের মজিদময় জয়
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে মাঝারি পুঁজি নিয়ে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে লড়াই জমিয়ে তোলে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব। ২২৪ রানের লক্ষ্যে শেষ বলে নিষ্পত্তি হওয়া ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটে জেতে রূপগঞ্জ টাইগার্স।
ষষ্ঠ ম্যাচে প্রথম জয় পেল রূপগঞ্জ টাইগার্স। সমান ম্যাচে পারটেক্সের জয়ও একটি।
অপরাজিত শতরানে দলের প্রথম জয়ের নায়ক মজিদ। ওপেন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত খেলে লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারে নবম সেঞ্চুরি করেন ৩৪ বছর বয়সী ওপেনার।
উদ্বোধনী জুটিতে ৯৮ রান যোগ করেন পারটেক্সের জয়রাজ শেখ ও রুবেল মিয়া। ৭ চারে ৭১ বলে ৫৪ রান করে আউট হন জয়রাজ। রুবেলের ব্যাট থেকে আসে ৮৯ বলে ৫২ রান।
পরে আর কেউ ২৬ রানের বেশি করতে পারেননি। শেষ উইকেটে ২৬ রানের জুটিতে ২২৩ রান পর্যন্ত যেতে পারে পারটেক্স। মাত্র ২ রানে অহেতুক রান আউট হন দলটির একমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার সাব্বির রহমান।
রূপগঞ্জ টাইগার্সের দুই অফ স্পিনার মাহমুদুল হাসান ও আল আমিন জুনিয়র নেন ৩টি করে উইকেট।
মাঝারি লক্ষ্যে অল্প রানেই ফেরেন অমিত মজুমদার। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১০৭ রান যোগ করে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন আব্দুল মজিদ ও আসাদুল্লাহ আল গালিব। পঞ্চাশ ছুঁয়ে আউট হয়ে যান গালিব।
হতাশ করেন পরের ব্যাটসম্যানরা। এক প্রান্তে অবিচল থেকে জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন মজিদ। সাত নম্বরে নেমে ৩০ বলে ৩৪ রানের ইনিংসে দলকে অনেকটা পথ এগিয়ে দেন আরিফুল হক।
পরে শেষ ওভারে ১০ রানের সমীকরণ মেলান মজিদ ও ফয়সাল। শেষ দশ ওভারে মাত্র একটি বাউন্ডারি মারতে পারেন মজিদ। সেটিই দলকে এনে দেয় প্রথম জয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব: ৪৯.৫ ওভারে ২২৩ (জয়রাজ ৫৪, রুবেল ৫২, সাব্বির ২, রবিউল ১৩, আহরার ৭, জাওয়াদ ২৩, রাকিব ২৬, আলাউদ্দিন ১, তানভির ৪, নাঈম ১৩*, তৌফিক ১৪; হুসনা হাবিব ১০-১-৩৪-১, ফাহাদ ৭-১-৩৭-০, জীবন ১০-০-৪৯-১, মইনুল ১০-০-৩৬-১, মাহমুদুল ১০-০-৪৬-৩, আলআমিন ২.৫-০-১৭-৩)
রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২২৫/৬ (মজিদ ১০০*, অমিত ১০, গালিব ৫০, আল আমিন ৫, মাহমুদুল ২, মইনুল ১০, আরিফুল ৩৪, ফয়সাল ২*; তৌফিক ৫-১-২৬-০, আলাউদ্দিন ৬-০-২৪-১, তানভির ১০-১-৩১-১, জাওয়াদ ৮-০-৪৮-০, রবিউল ৪-০-২২-০, আহরার ৭-০-৩২-২)
ফল: রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আব্দুল মজিদ
গুলশানের রোমাঞ্চকর জয়
নিহাদউজ্জামান যখন আউট হলেন, জয়ের জন্য গুলশানের তখন প্রয়োজন ৪৫ বলে ৫১ রান। রান-বলের সমীকরণ খুব কঠিন নয়। সমস্যা হলো, উইকেট আছে তখন মোটে দুটি! একপ্রান্তে অভিজ্ঞ ফরহাদ রেজা তখনও টিকে। কিন্তু আরেকপ্রান্তের ব্যাটসম্যান মেহেদি হাসান, যার মূল কাজ বোলিং।
দলের প্রয়োজনে সেই মেহেদিও হয়ে উঠলেন ব্যাটসম্যান। ফরহাদ দেখালেন তার হারানো দিনের ঝলক। দুজনের বন্ধনে দারুণ এক জয় পেল গুলশান ক্রিকেট ক্লাব।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ২ উইকেটে হারায় গুলশান। ২৯১ রানের লক্ষ্য ৯ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে নবাগত ক্লাবটি।
ব্রাদার্সকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে শুরুতেই মাহফিজুল ইসলামের উইকেট নেয় গুলশান। তবে চাপ বাড়তে দেননি বিশাল চৌধুরি ও মিজানুর রহমান। দ্বিতীয় উইকেটে ১২৬ রানের জুটি গড়ে তোলেন তারা।
একই ওভারে দুজনকে আউট করেন নিহাদউজ্জামান। ফিফটি করেই ফেরেন মিজানুর। ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৫ বলে ৮৩ রানের ইনিংস খেলেন বিশাল।
পরে দায়িত্ব নেন আইচ মোল্লা। অলক কাপালির সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ৬৬ রানের জুটি গড়েন তরুণ ব্যাটসম্যান।
আইচের ৬১ বলে ৬৫ ও কাপালির ২৯ বলে ৩১ রানের ইনিংসে তিনশর কাছাকাছি পৌঁছায় ব্রাদার্স।
নিহাদ ও আসাদুজ্জামান পায়েল নেন ৩টি করে উইকেট। ছয় রাউন্ড শেষে ১৩ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে পায়েল।
চ্যালেঞ্জিং রান তাড়ায় ঝড়ো শুরু করেন জাওয়াদ আবরার। কিন্তু বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ১৭ বলে ৩০ রান করেন তরুণ ওপেনার। ব্যর্থতার ধারা থেকে বের হতে পারেননি আরক তরুণ আজিজুল হাকিম।
তিন নম্বরে ধীরেসুস্থে খেলতে থাকেন লিটন কুমার দাস। কিন্তু ইনিংম বড় করতে পারেননি। শর্ট মিড উইকেটে দুর্দান্ত ক্যাচে তার বিদায়ঘণ্টা বাজান বিশাল। ৪০ বলে ৩৩ রান করেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যন। এখন পর্যন্ত ৪ ইনিংসে তার সংগ্রহ ১২৯ রান।
১০০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে গুলশান। সেখান থেকে দলের হাল ধরেন নাঈম ইসলাম ও ইলিয়াস সানি। ১০০ বলে ৯৯ রানের জুটি গড়েন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ৬০ বলে ৫০ রান করে আউট হন নাঈম।
ফরহাদের সঙ্গে মিলে দলকে আরও কিছুটা এগিয়ে নেন সানি। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৬২ বলে ৫৩ রান করে ফেরেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। নিহাদও তাকে অনুসরণ করেন দ্রুতই।
এরপর সেই নবম উইকেট জুটি। স্নায়ুর চাপকে হারিয়ে দুর্দান্ত সব শট খেলে ৩৬ বলে ৫৪ রানের জুটিতে দলকে জিতিয়ে দেন ফরহাদ ও মেহেদি। বাঁধনহারা উদযাপনে মেতে ওঠেন গুলশানের ক্রিকেটাররা।
৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩৬ বলে ৪৭ রান করেন ফরহাদ। মেহেদির ব্যাট থেকে ৪ চার ও ২ ছক্কায় আসে ১৮ বলে ৩২ রান।
ব্রাদার্সের পক্ষে ৪৪ রানে ৪ উইকেট নেন সোহাগ গাজী।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৫০ ওভারে ২৯০/৯ (মাহফিজুল ১২, বিশাল ৮৩, মিজানুর ৫০, আইচ ৬৫, জাহিদুজ্জামান ২, মাইশুকুর ১৬, কাপালি ৩১, সোহাগ ১৭, জায়েদ ৫*, শফিউল ৪, আল আমিন ১*; ফরহাদ ৫-০-৪৫-০, মেহেদি ৯-০-৫০-১, নিহাদ ৯-০-৪০-৩, ইলিয়াস ৯-০-৪০-০, পায়েল ৯-০-৬২-৩, নাঈম ৩-০-১১-০, আজিজুল ২-০-৭-১, ইফতেখার ৪-০-৩৪-১)
গুলশান ক্রিকেট ক্লাব: ৪৮.৩ ওভারে ২৯৪/৮ (জাওয়াদ ৩০, আজিজুল ১১, লিটন, ৩৩, ইফতেখার ১৬, হাবিবুর ৬, নাঈম ৫০, ইলিয়াস ৫৩, ফরহাদ ৪৭*, নিহাদ ২, মেহেদি ৩২*; জায়েদ ১০-০-৬৬-১, আল আমিন ৮-০-৬১-০, শফিউল ৯.৩-০-৬৬-২, সোহাগ ১০-০-৪৪-৪, কাপালি ১০-১-৪০-১, বিশাল ১-০-১৩-০)
ফল: গুলশান ক্রিকেট ক্লাব ২ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ফরহাদ রেজা
ইমরুলদের ছয়ে পাঁচ
প্রিমিয়ার লিগে ফিরে একের পর এক চমক উপহার দিচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। প্রথম ছয় ম্যাচের পাঁচটি জিতে গেছে ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বাধীন দল।
আবাহনী লিমিটেড ও গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সও ছয় ম্যাচে জিতেছে পাঁচটি। নেট রান রেটের কারণে পয়েন্ট টেবিলের তিন নম্বরে অগ্রণী ব্যাংক।
শাইনপুকুরকে বুধবার ৪৬ রানে হারায় অগ্রণী ব্যাংক। ২৯৫ রানের লক্ষ্যে ৫ উইকেটে ২৪৮ রানের বেশি করতে পারেনি শাইনপুকুর।
৬০ রানের উদ্বোধনী জুটিতে অগ্রণী ব্যাংককে ভালো শুরু এনে দেন ইমরানউজ্জামান ও সাদমান ইসলাম। ইমরান ৩৫ বলে ৩২ রান করে আউট হন। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা সাদমানের ব্যাট থেকে আসে ৬৬ বলে ৫৩ রান।
তৃতীয় উইকেটে ৮৩ রানের জুটি গড়েন ইমরুল ও অমিত হাসান। দলকে দুইশ পার করিয়ে ফেরেন ৪১ রান করা অমিত।
৫২ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে তিন অঙ্কের দিকে এগোতে থাকেন ইমরুল। তবে লিগের প্রথম ম্যাচের মতো আবারও ৮০ পেরিয়ে সেঞ্চুরির আগেই থামতে হয় ইমরুলকে। রায়ান রাফসান রহমানের শর্ট বলে পুল খেলার চেষ্টায় ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে বসেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ৮৫ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় তিনি করেন ৮৬ রান।
লিগের ছয় ম্যাচে ইমরুলের এটি চতুর্থ পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস। সব মিলিয়ে ৪৯.১৭ গড়ে তার সংগ্রহ ২৯৫ রান।
বড় লক্ষ্যে প্রত্যাশিত শুরু পায়নি শাইনপুকুর। নিয়মিত উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় তারা। ১০৩ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর জয়ের জন্য আর কোনো চেষ্টাই দেখা যায়নি তাদের ব্যাটিংয়ে।
ষষ্ঠ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ১৫৩ বলে ১৪৮ রান যোগ করেন রায়ান রাফসান রহমান ও মিনহাজুল আবেদিন। দুজনের ব্যাটিংয়ে জয়ের তাড়না দেখা যায়নি একদমই।
লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে ১৩০ বলে ১০৬ রান করেন রাফসান। মিনহাজুলের ব্যাট থেকে আসে ৬১ বলে ৫১ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৯৪/৭ (ইমরানউজ্জামান ৩২, সাদমান ৫৩, ইমরুল ৮৬, অমিত ৪১, মার্শাল ২০, তাইবুর ২০, শুভাগত ১১, রবিউল ১৫*, নাঈম ৮*; আলি ১০-০-৬২-২, কিবরিয়া ৮-০-৪৩-১, রাফি ৭-১-৪৮-১, রহিম ৬-০-৩৬-১, রাফসান ১০-০-৪৯-২, আনোয়ার ৩-০-২৩-০, জুবায়ের ৬-০-৩২-০)
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৪৮/৫ (নিওন ২০, মইনুল ৩৪, কিবরিয়া ৯, রাফসান ১০৬*, অনিক ৯, রহিম ৬, মিনহাজুল ৫১*; রবিউল ১০-১-৪৮-০, রুয়েল ৮-০-৫৭-০, আরিফ ৮-১-৪১-২, তাইবুর ৬-০-২৫-০, নাঈম ১০-১-৩৪-২, শুভাগত ৮-০-৪২-১)
ফল: অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৪৬ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ইমরুল কায়েস