দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃত ক্রিকেটে ৫০টি সেঞ্চুরির আরেক ধাপ কাছে গেলেন এনামুল হক, আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে লিটন দাস খেললেন ৮৩ রানের ইনিংস।
Published : 25 Mar 2025, 08:30 PM
গত ডিসেম্বরে স্বীকৃত ক্রিকেটে অভিষেক হলেও সুবিধা করতে পারেননি সামিউন বশির রাতুল। দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ম্যাচে তার ঝুলিতে জমা পড়েনি একটিও উইকেট। তবে মাস তিনেক পর লিস্ট 'এ' যাত্রা শুরুর ম্যাচে পুরোপুরি ভিন্ন রূপে তিনি। বাঁহাতি স্পিনের ঝলকে একে একে নিলেন ৫ উইকেট।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রাতুলের স্পিন ঝলকের দিনে আরেকটি ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি করলেন এনামুল হক। স্বীকৃত ক্রিকেটে সেঞ্চুরির ফিফটির কীর্তি থেকে এখন আর স্রেফ এক ধাপ দূরে তিনি।
মঙ্গলবারের অন্য ম্যাচে আলাউদ্দিন বাবুর ঝড় সামলে দারুণ জয় পায় ব্রাদার্স ইউনিয়ন।
রাতুলের নৈপুণ্যে জয়ে ফিরল রূপগঞ্জ
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবকে ১৭২ রানে হারায় লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। ২৯৯ রানের লক্ষ্যে মাত্র ১২৬ রানে গুটিয়ে যায় রূপগঞ্জ টাইগার্স।
ব্যাট হাতে ৪০ রানের ইনিংস খেলার পর বোলিংয়ে স্রেফ ২৭ রান খরচায় ৫ উইকেট নেন রাতুল। লিস্ট 'এ' অভিষেকে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও ওঠে বর্তমান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের স্পিনারের হাতে।
রাতুলের হাত ধরে তিন ম্যাচ পর জয়ের দেখা পেল এক ঝাঁক তারকা ক্রিকেটার নিয়ে গড়া লেজেন্ডস অব রুপগঞ্জ। সব মিলিয়ে আট ম্যাচে চার জয় ও একটি পরিত্যক্ত ম্যাচ মিলিয়ে তাদের ঝুলিতে ৯ পয়েন্ট। রূপগঞ্জ টাইগার্সের পয়েন্ট মাত্র ৩।
রান তাড়ায় শুরুতেই রাতুলের স্পিন পরীক্ষায় পড়ে রূপগঞ্জ টাইগার্স। দশম ওভারে প্রথম আক্রমণে এসে উইকেট মেডেন নেন তরুণ স্পিনার। পরের দুই ওভারে তিনি নেন আরও ৩ উইকেট। টানা সাত ওভারের স্পেলের পর বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড়ায় ৭-৩-১০-৪!
পঞ্চম উইকেটের জন্য নিজের শেষ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় রাতুলের। একেএম হুসনা হাবিবকে ফিরিয়ে মাইলফলক পূর্ণ করেন তিনি।
রূপগঞ্জ টাইগার্সের পক্ষে ওপেনার আব্দুল মজিদ করেন সর্বোচ্চ ৪৩ রান। আর কেউ ৩০ রান করতে পারেননি।
ম্যাচের প্রথমভাগে ঝড়ো শুরু করেন তানজিদ হাসান। ১০ চারে ৪৭ বলে ফিফটি করেন বাঁহাতি ওপেনার। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি ৫৯ বলে ৬১ রান করে ড্রেসিং রুমে ফেরেন তিনি।
সাইফ হাসান, সৌম্য সরকার ও মাহমুদুল হাসান জয় হতাশ করলেও দায়িত্ব নেন জাকের আলি। অপরাজিত ইনিংসে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৮৫ বলে ৭৩ রান করেন লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের কিপার-ব্যাটসম্যান।
সাত নম্বরে নেমে জাকেরের সঙ্গে ৯১ রানের জুটি গড়েন রাতুল। ৩৪ বলের ইনিংসে ১ চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা মারেন তিনি।
পরে শেষের ২৪ বলে ৫৬ রান যোগ করেন জাকের ও শেখ মেহেদি হাসান। মাত্র ১৫ বলে ৩৫ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন মেহেদি। দলের রান পৌঁছে যায় তিনশর কাছে। সেটিই এনে দেয় বড় জয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৫০ ওভারে ২৯৮/৬ (তানজিদ ৬১, সাইফ ১, সৌম্য ১৫, জয় ১৩, আফিফ ২৯, জাকের ৭৩*, রাতুল ৪০, মেহেদি ৩৫*; ফাহাদ ২-০-৩০-০, হুসনা হাবিব ১০-০-৫৩-২, আরিফুল ৩-০-৩৭-০, মাহমুদুল ১০-০-৩৯-১, আল আমিন ১০-০-৫০-১, সানদিদ ১০-১-৪৯-১, মইনুল ৫-০-৩৪-১)
রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৪২.২ ওভারে ১২৬ (মজিদ ৪৩, শফিউল ৬, গালিব ৫, নুরুজ্জামান ৬, মইনুল ২, আল আমিন ০, মাহমুদুল ১১, আরিফুল ২৫, সানদিদ ৯, হুসনা হাবিব ১, ফাহাদ ৫*; শরিফুল ৬-১-১৮-০, তানজিম ৮-০-১৮-২, তানভির ১০-২-৩৩-২, রাতুল ১০-৩-২৭-৫, মেহেদি ৮.২-১-২০-১)
ফল: লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ১৭২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সামিউন বশির রাতুল
অপ্রতিরোধ্য এনামুল
লিটন কুমার দাস ও আজিজুল হাকিমের ফিফটিতে বড় সংগ্রহ পায় গুলশান ক্রিকেট ক্লাব। রান তাড়ায় সতীর্থদের তেমন সহায়তা পাননি এনামুল হক। তবে একার লড়াইয়েই গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে দারুণ জয় এনে দেন দলের অধিনায়ক।
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে গুলশানকে ৪ উইকেটে হারায় গাজী গ্রুপ। ২৮২ রানের লক্ষ্য তারা ১০ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলে।
আট ম্যাচে গাজী গ্রুপের এটি ষষ্ঠ জয়। গুলশান হারল তৃতীয় ম্যাচ।
দলের জয়ে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন এনামুল। ওপেনিংয়ে নেমে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়া অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান খেলেন ১৪৪ রানের ইনিংস। ১৪২ বলে ১১ চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা মারেন ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে এটি তার ২২তম সেঞ্চুরি। এই সংস্করণে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি তামিম ইকবালের, ২৪টি।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের স্বীকৃত ক্রিকেটে সেঞ্চুরি সংখ্যায় অবশ্য আগেই সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন এনামুল। এখন তিনি ছুটছেন সেঞ্চুরির ফিফটির পথে। তিন সংস্করণ মিলিয়ে এটি ছিল তার ৪৯তম সেঞ্চুরি।
টানা দুই ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়ে এবারের লিগ শুরু করেন এনামুল। এরপর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন তিনি। পরের ছয় ম্যাচের পাঁচটিতেই খেললেন পঞ্চাশছোঁয়া। এর মধ্যে দুটিতে ১৪০ ছাড়িয়েছেন তিনি।
সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচে এনামুলের সংগ্রহ ৮৮.৩৩ গড়ে ৫৩০ রান। লিগে আর কোো ব্যাটসম্যান এখনও পর্যন্ত পাঁচশ রান করতে পারেননি।
বড় লক্ষ্যে এনামুল ছাড়া গাজী গ্রুপের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ত্রিশ ছুঁতে পারেন শুধু আরেক ওপেনার সাদিকুর রহমান। দুজনের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৯৪ বলে ১০৬ রান। সাদিকুর ৪০ বলে ৪৫ রান করে ফেরার পর দলকে একাই টেনে নেন এনামুল।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে অল্পেই ফেরেন জাওয়াদ আবরার। দ্বিতীয় উইকেটে ১১৫ রানের জুটি গড়েন আজিজুল ও লিটন।
চমৎকার ব্যাটিংয়ে ৫ চার ও ৩ ছক্কা মেরে মাত্র ৩৫ বলে পঞ্চাশ করেন লিটন। একই ছন্দে তিন অঙ্কের দিকে এগোতে থাকেন তিনি। কিন্তু সেঞ্চুরি ছুঁতে পারেননি। লিওন ইসলামের বলে ক্যাচ আউটে সমাপ্তি ঘটে তার ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ৬২ বলে ৮৩ রানের ইনিংসের।
আজিজুলের ব্যাট থেকে আসে ৭৬ বলে ৫৩ রান। শেষ দিকে ইলিয়াস সানি ৪৪ বলে ৩৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে তিনশর কাছাকাছি নিয়ে যান। যা জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
গুলশান ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৮১/৮ (জাওয়াদ ২১, আজিজুল ৫৩, লিটন ৮৩, ইফতেখার ২১, নাঈম ১০, আলিফ ২৬, ইলিয়াস ৩৮*, ফরহাদ ৩, মেহেদি ১, নিহাদ ৯*; সাকলাইন ৭-০-৫০-২, হাশিম ১০-০-৪৬-২, লিওন ১০-১-৩৩-১, পারভেজ ১০-০-৩৩-১, ওয়াসি ৫-০-৫০-০, শামসুর ১-০-১২-০, আমিনুল ৪-০-৩৪-২, তোফায়েল ৩-০-১১-০)
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৪৮.২ ওভারে ২৮৩/৬ (সাদিকুল ৪৫, এনামুল ১৪৪*, শামসুর ১০, তাহজিবুল ১৪, আমিনুল ১০, তোফায়েল ২৩, সাকলাইন ৪, পারভেজ ২০*; আজিজুল ১.২-০-১৫-০, মেহেদি ৯-০-৬৩-০, নাঈম ৮-০-৪২-১, নিহাদ ১০-০-৫৬-১, পায়েল ১০-০-৪৬-১, ইলিয়াস ১০-০-৫৪-৩)
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: এনামুল হক
পাঁচ ম্যাচ পর জিতল ব্রাদার্স
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবকে ২৯ রানে হারায় ব্রাদার্স ইউনিয়ন। ২২৫ রানের পুঁজি নিয়ে প্রতিপক্ষকে ১৯৬ রানে গুটিয়ে দেয় তারা।
আট ম্যাচে ব্রাদার্সের এটি দ্বিতীয় জয়। পাঁচ ম্যাচ পর জয়ের স্বাদ পেল তারা। সমান ম্যাচে পারটেক্সের জয়ও দুটি।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ব্রাদার্সের কেউই তেমন বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। চার নম্বরে নেমে দলের সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন জাহিদুজ্জামান। শেষ দিকে সোহাগ গাজীর ব্যাট থেকে আসে ৪২ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস।
মাঝারি লক্ষ্যে শুরুর ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ৬২ রনে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে পারটেক্স। পরে ১১৬ রানের জুটি গড়েন আহরার আমিন ও আলাউদ্দিন বাবু। মাত্র ৪৬ বলে ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন আলাউদ্দিন। ৩ চারের সঙ্গে মারেন ৬টি ছক্কা।
আলাউদ্দিনের বিদায়ের পর আবার ধস নামে পারটেক্সের ইনিংসে। মাত্র ১৮ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে দুইশর আগে গুটিয়ে যায় তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৫০ ওভারে ২২৫/৯ (মাহফিজুল ১০, বিশাল ১, মিজানুর ৩৪, জাহিদুজ্জামান ৪৭, আইচ ১৩, রাহাতুল ২৫, সোহাগ ৪২, মাইশুকুর ৮, কাপালি ১৯*, জায়েদ ১, আল আমিন ১০*; মোহর ৮-০-৫৪-২, তানভির ৮-০-২৮-২, শহিদুল ৮-০-৩০-১, জাওয়াদ ১০-২-৩৪-২, নাঈম ৭-০-৪৪-১, আলাউদ্দিন ৯-১-৩৩-১)
পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব: ৪৮.১ ওভারে ১৯৬ (জয়রাজ ১১, সাব্বির ১৮, আদিল ২, রাকিব ১৪, আহরার ৫৬, জাওয়াদ ৪, আলাউদ্দিন ৬৮, শহিদুল ১১, তানভির ১, মোহর ৫, নাঈম ০*; আল আমিন ৯.১-১-৪০-২, জায়েদ ১০-১-২৪-৩, রাহাতুল ৯-০-৩৭-২, কাপালি ১০-০-৪৯-২, সোহাগ ১০-১-৪৫-০)
ফল: ব্রাদার্স ইউনিয়ন ২৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: জায়েদ উল্লাহ