জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টিতে ঝড় তোলা জিসান আলম সেভাবে জ্বলে উঠতে পারছেন না বিপিএলে, তবে তার ওপর ভরসা রাখছেন দুর্বার রাজশাহী অধিনায়ক এনামুল হক।
Published : 10 Jan 2025, 07:26 PM
ব্যাট হাতে ২৩ রান। বল হাতে চার ওভারে ১৮ রান দিয়ে প্রতিপক্ষের ওপেনারের উইকেট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিবেচনায় বেশ কার্যকর পারফরম্যান্স। দলও জিতেছে। তবে সমস্যা হলো, ওই ২৩ রান এসেছে ২২ বলে। স্ট্রাইক রেটের যদি এমন হাল হবে, তাহলে তিনি আর জিসান আলম কেন!
এই ম্যাচে তো তবু কিছু রান করেছেন তিনি। বিপিএলের প্রথম দুই ম্যাচে তার রান ছিল শূন্য। একাদশেও জায়গা হারার তখন। এক ম্যাচ পর ফিরে নিজের মতো ইনিংস একটি খেলতে পারেন তিনি। এরপর শুক্রবার খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে আবার এই মন্থরতা। সব মিলিয়ে বিপিএলে ঠিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না প্রত্যাশিত চেহারার জিসানকে। দুর্বার রাজশাহীর অধিনায়ক এনামুল হক অবশ্য ভরসা রাখছেন এই তরুণ তুর্কির ওপর।
দেশের ক্রিকেটে তার আবির্ভাব ছিল আগ্রাসনের বার্তা নিয়ে। সাবেক ক্রিকেটার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে হিসেবে তার দিকে আলাদা একটা নজর ছিল আগে থেকেই। তবে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে নিজের আলাদা পরিচয় গড়ে ফেলেন তিনি খেলার ধরন দিয়ে। ভয়ডরহীন মানসিকতা বরাবরই তার ব্যাটিংয়ের বিজ্ঞাপন।
সম্প্রতি জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টিতে বিধ্বংসী সেঞ্চুরি করে আবার খবরের শিরোণামে উঠে আসেন তিনি। ১০ ছক্কায় ১০০ রানের সেই ইনিংসে ফিফটি থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে তার বল লেগেছিল স্রেফ ১৩টি! ওই টুর্নামেন্টে পরে ৫ ছক্কায় ২৭ বলে ৬০, ৬ ছক্কায় ৪৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংসও খেলেন তিনি।
স্বাভাবিকভাবেই বিপিএলে তাকে ঘিরে প্রত্যাশা ছিল একটু বেশিই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা সামান্যই পূরণ করতে পেরেছেন ২০ বছর বয়সী ক্রিকেটার।
জাতীয় লিগের চেয়ে বিপিএলে ক্রিকেটের মান, প্রতিপক্ষের বোলিং আক্রমণের ধার, চাপ, মনোযোগ, এসব একটু বেশিই। ব্যর্থতা তাই অস্বাভাবিক নয়। তবে একটি ইনিংস ছাড়া জিসানের ‘ডিএনএ’ খুঁজে পাওয়া যায়নি, এটিই হতাশার।
প্রথম ম্যাচে তিনি দুই বলে শূন্য করে আউট হয়ে গেছেন। পরের ম্যাচে শূন্য করেছন আট বলে। দলে জায়গা হারানোর পর ফেরার ম্যাচে কেবল নিজের চেনা ঝলক দেখিয়েছেন কিছুটা। তিনটি করে চার ও ছক্কায় করেছেন ২৭ বলে ৩৮ রান। কিন্তু খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে শুক্রবার আবার দেখা গেল অস্বস্তিময় ইনিংস। সিলেটের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও তিনি ছিলেন জড়তার জালে বন্দি।
বল হাতে অবশ্য তিনি কার্যক ভূমিকা রাখছেন দলে। অফ স্পিন দিয়ে প্রতিপক্ষের বাঁহাতি টপ অর্ডারদের পাওয়ার প্লেতে আটকে রাখার কাজটি করছেন দারুণ দক্ষতায়। তিনটি উইকেট নিয়েছেন এখনও পর্যন্ত, পাওয়ার প্লেতে বল করেও ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন স্রেফ ৫.৭৫।
একজন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, যিনি পাওয়ার প্লেতে নিয়মিত বোলিং করতে পারেন, যে কোনো দলের জন্যই আকর্ষণীয় এক প্যাকেজ হতে পারেন তিনি। কিন্তু আসল কাজটি যে ঠিকঠাক হচ্ছে না!
তার অধিনায়ক ও ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান এনামুল হকের মতে, অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হলেই নিজেকে আরও ভালো করে মেলে ধরতে পারবেন জিসান।
“আসলে ও যদি ওর মতো করে খেলে, অবশ্যই দলের জন্য একটা সারপ্রাইজ প্যাকেজ। ওর সামর্থ্য আছে। আশা করি, ও এই জিনিসগুলো বুঝবে, শিখবে। বিপিএলে তো আরও অনেক খেলোয়াড় আছে, যারা ভালো করেছে। ওদের সঙ্গে যদি কথা বলে এবং নিজের মান যদি ওভাবে ধরে রাখে…আমার কাছে মনে হয়ম অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে ওর খেলায় উন্নতি হবে। প্রমাণ করতে পারবে, ওর সামর্থ্য কতটুকু।”
“বিপিএলে যেরকম মানের খেলা হয়, সেখানে অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ থাকে। এটা যখন ও পার করে ফেলবে, তখন জিনিসটা ওর জন্য আরও ভালো হবে। জিনিসটা চ্যালেঞ্জিং, তবে আশা করি পারবে।”
সেই চেষ্টায় জিসানদের পরের ম্যাচ রোববার দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে।