দারুণ ছন্দে থাকা পারভেজ হোসেন ইমন ও মোহাম্মদ নাঈম শেখের ব্যাটে রানের জোয়ার বয়েই চলেছে, মাঠে ফেরার ম্যাচে আগ্রাসী ইনিংস খেললেন মুশফিকুর রহিম।
Published : 09 Apr 2025, 07:29 PM
বড় লক্ষ্যে বলতে গেলে একাই লড়ে গলেন অমিত হাসান। সতীর্থদের কাছ থেকে তেমন কোনো সহায়তাই পেলেন না তরুণ টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান। প্রতিরোধের পথচলায় তিনি পা রাখলেন শতরানে, তবে সঙ্গীর অভাবে পারলেন না দলের বড় পরাজয় এড়াতে।
অমিতের শতকের আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ফেরার ম্যাচে চমৎকার ব্যাটিংয়ে ঝড়ো ফিফটি করেন মুশফিকুর রহিম। অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে বড় পুঁজি নিয়ে অনায়াস জয় পায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।
অন্য ম্যাচে আরেকটি দারুণ ইনিংস খেলেন উড়ন্ত ফর্মে থাকা পারভেজ হোসেন। জবাবে মোহাম্মদ নাঈম শেখের ব্যাট থেকে আসে চমৎকার ৭৩ রানের ইনিংস। কিন্তু বাকিদের ব্যর্থতায় পরাজয়েই মাঠ ছাড়তে হয় প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে।
টানা চতুর্থ জয়ে সুপার লিগে মোহামেডান
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে অগ্রণী ব্যাংককে ৭৪ রানে হারায় মোহামেডান। ২৮৮ রানের লক্ষ্যে ১৬ বল বাকি থাকতে ২১৩ রানে গুটিয়ে যায় অগ্রণী ব্যাংক।
মোহামেডানের এটি টানা চতুর্থ জয়। সব মিলিয়ে দশ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে সুপার লিগের টিকেট নিশ্চিত হয়ে গেল তাদের। সমান ম্যাচে ১২ পয়েন্ট পাওয়া অগ্রণী ব্যাংককে অপেক্ষা করতে হবে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত।
ঈদের বিরতির পর লিগের নবম রাউন্ডের ম্যাচটি খেলেননি মুশফিক। ফেরার ম্যাচে ৫৭ বলে ৭৫ রান করেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। অপরাজিত ইনিংসে ৬ চারের সঙ্গে ১টি ছক্কা মারেন তিনি।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে রনি তালুকদারের ব্যাটে ইতিবাচক শুরু পায় মোহামেডান। খুব কাছে গিয়েও পঞ্চাশ করতে পারেননি অভিজ্ঞ ওপেনার। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৪৯ বলে ৪৬ রান করে ফেরেন তিনি।
তৃতীয় উইকেটে ৭৩ রানের জুটি গড়েন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও তাওহিদ হৃদয়। ২ চারে ৬১ বলে ৪২ রান করে আউট হন হৃদয়। মাহিদুলের ব্যাট থেকে আসে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৩ বলে ৬৪ রান।
পরে মাহমুদউল্লাহ, মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাইফ উদ্দিন হতাশ করলে দায়িত্ব নেন মুশফিক। দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে তিনশর কাছে নিয়ে যান ৩৮ ছুঁইছুঁই ব্যাটসম্যান। চলতি লিগে ছয় ইনিংসে এটিই তার প্রথম ফিফটি।
রান তাড়ায় শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেট হারায় অগ্রণী ব্যাংক। তিন নম্বরে নেমে একপ্রান্ত ধরে খেলতে থাকেন অমিত। তাকে কিছুক্ষণ সঙ্গ দিয়ে ৩৭ রান করে ফেরেন মার্শাল আইয়ুব। আর কেউ ২০ রানও করতে পারেননি।
নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরার আগে লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরিতে ১০৫ রান করেন অমিত। ১২৩ বলের ইনিংসে ৭ চারের সঙ্গে ১টি ছক্কা মারেন ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
মোহামেডানের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন মিরাজ ও ইবাদত হোসেন চৌধুরি। দুই বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও নাসুম আহমেদ পান ২টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৮৭/৭ (রনি ৪৬, আনিসুল ২, মাহিদুল ৬৪, হৃদয় ৪২, মুশফিক ৭৫*, মাহমুদউল্লাহ ১৬, মিরাজ ১৮, সাইফ ১২, নাসুম ৫*; রবিউল ৯-০-৬৬-০, শহিদুল ৯-০-৫৮-১, আরিফ ১০-০-৪৭-৩, নাঈম ৬-০-৩৫-০, তাইবুর ১০-০-৪১-১, জাহিদ ৪-০-২৩-১, শুভাগত ২-০-১৭-০)
অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪৭.২ ওভারে ২১৩ (ইমরানউজ্জামান ০, সাদমান ৫, অমিত ১০৫, প্রিতম ২, মার্শাল ৩৭, তাইবুর ১৪, শুভাগত ২, জাহিদ ৮, শহিদুল ১৬, রবিউল ১১, আরিফ ৪*; ইবাদত ৯-১-৩৪-৩, সাইফ ৮-১-৩৭-০, নাসুম ১০-০-৪০-২, তাইজুল ১০-০-৪৫-২, মিরাজ ৮.২-০-৩৬-৩, আনিসুল ২-০-১৯-০)
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৭৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম
অপ্রতিরোধ্য আবাহনীর টানা ৯
পরাজয়ে আসর শুরুর পর থেকে যেন অদম্য বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনী লিমিটেড। প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে ১৩৩ রানে হারিয়ে তারা পেল টানা নবম জয়। বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে ২৯১ রানের লক্ষ্যে মাত্র ১৫৭ রানে গুটিয়ে যায় প্রাইম ব্যাংক।
দশ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল প্রাইম ব্যাংকের সুপার লিগে খেলা। শেষ ম্যাচে জেতার পাশাপাশি অন্য ম্যাচের ফলের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের। সমান ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও শক্ত করেছে আবাহনী।
বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন পারভেজ হোসেন। টানা তৃতীয় ম্যাচে পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংসে ৭৯ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার। ৭১ বলে ৬ চারের সঙ্গে ৫টি ছক্কা মারেন তিনি।
শুরুতে জিসান আলমের বিদায়ের পর নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে ১৩৭ রানের জুটি গড়েন পারভেজ। শান্তর ব্যাট থেকে আসে ৭০ বলে ৫৮ রান। ৪ চার ও ৩ ছক্কা মারেন আবাহনী অধিনায়ক।
শেষ দিকে মোসাদ্দেক হোসেনের ৩৭ রানের সঙ্গে মাহফুজুর রহমান রাব্বি, রিপন মন্ডলদের ছোট ছোট ইনিংসে তিনশর কাছে যায় আবাহনী।
দারুণ বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেন হাসান মাহমুদ। অফ স্পিনার নাঈম আহমেদের শিকার ৩ উইকেট।
বড় লক্ষ্যে একবারের জন্যও জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি প্রাইম ব্যাংক। শুরুতে একরকম একাই চেষ্টা করেন নাঈম। তবে পঞ্চাশ ছুঁয়ে বেশি দূর যেতে পারেননি ছন্দে থাকা ওপেনার। ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৭৪ বলে ৭৩ রান করে ফেরেন নাঈম।
সাত নম্বরে নেমে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন ফর্মে থাকা শামীম হোসেন। ৩ চারের সঙ্গে ৪ ছক্কায় ২৬ বলে ৪০ রান করে আউট হন তিনি। দলের আর কেউ বলার মতো কিছুই করতে পারেননি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আবাহনী লিমিটেড: ৫০ ওভারে ২৯০/৯ (পারভেজ ৭৯, জিসান ১৩, শান্ত ৫৮, মিঠুন ১৫, মুমিনুল ১৭, মোসাদ্দেক ৩৭, মেহেরব ৮, রাব্বি ১৪, রকিবুল ১৪, রিপন ১৭*, নাহিদ ১*; হাসান ১০-১-৩৮-৪, খালেদ ১০-০-৫৪-১, নাঈম আহমেদ ১০-০-৪৯-৩, শামীম ৬-০-৩৯-০, সাব্বির ৯-০-৬২-০, সানি ৫-০-৪৪-১)
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৩২ ওভারে ১৫৭ (নাঈম শেখ ৭৩, সাব্বির ৩, শাহাদাত ৪, সাজ্জাদুল ২, জাকির ০, ইরফান ১৫, শামীম ৪০, খলেদ ২, হাসান ১৩*, নাঈম আহমেদ ০, সানি ২; নাহিদ ৬-১-৩৪-১, মোসাদ্দেক ৭-০-২৯-৩, রিপন ৪-০-২০-০, মেহেরব ৬-০-২৪-১, জিসান ৩-০-৩০-১, রকিবুল ৪-০-১৬-২, রাব্বি ২-০-৩-১)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ১৩৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোসাদ্দেক হোসেন