টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পরাজয়ের পর ব্যস্ত সূচি, আবাসন ব্যবস্থা ও ক্লান্তিকর ভ্রমণ নিয়ে মুখ খুললেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, স্পিনার মাহিশ থিকশানা।
Published : 04 Jun 2024, 09:41 AM
ম্যাচ শেষ না হতেই টিম হোটেলে ফেরার তাড়া স্পষ্ট শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের। তাই যত দ্রুত সম্ভব সংবাদ সম্মেলন ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সারতে চাইলেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, মাহিশ থিকশানারা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর তাদের বেশিক্ষণ মাঠে থাকতে না চাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে লঙ্কানদের তাড়াহুড়োর কারণ পুরোপুরি ভিন্ন।
নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে ব্রুকলিনে তাদের টিম হোটেলের দূরত্ব প্রায় দেড় ঘণ্টার। হোটেলে গিয়ে চেক আউট করেই আবার ধরতে হবে ডালাসের বিমান। যেখানে হবে তাদের অনেকটা বাঁচা-মরার লড়াই। এই ব্যস্ত সূচি, আবাসন ব্যবস্থা ও ভ্রমণের ভোগান্তি নিয়ে তাই মুখ খুললেন হাসারাঙ্গা, থিকশানারা।
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সোমবার ৬ উইকেটে হারে শ্রীলঙ্কা। আনরিক নরকিয়ার তোপে স্রেফ ৭৭ রানে গুটিয়ে যায় তারা। পরে বোলিংয়ে তারা কিছুটা লড়াই করলেও ২২ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
স্থানীয় সময় দুপুর ২টার কাছাকাছি সময়ে শেষ হয় খেলা। এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টা দূরত্বের হোটেলে ফিরে সব কিছু গুছিয়ে সন্ধ্যা ৬টার আগেই শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের ছুটতে হয়েছে বিমানবন্দরে। এছাড়া প্রথম ম্যাচের জন্য প্রোটিয়াদের আবাসন ব্যবস্থা মাঠের কাছাকাছি হলেও লঙ্কানদের হোটেলের দূরত্ব অনেক।
টুর্নামেন্টের ২০ দলের মধ্যে শুধু দুটি দল প্রথম রাউন্ডে নিজেদের চার ম্যাচ খেলবে ভিন্ন চার ভেন্যুতে। এর একটি শ্রীলঙ্কা, অন্যটি নেদারল্যান্ডস। অন্য দিকে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার চার ম্যাচের তিনটিই খেলবে একই ভেন্যুতে এবং তাদের আবাসন ব্যবস্থাও মাঠের খুব কাছে।
শ্রীলঙ্কার এত সমস্যার সঙ্গে যোগ হয় বিলম্বিত ফ্লাইট। নিউ ইয়র্কে ম্যাচ খেলার জন্য মায়ামি এয়ারপোর্টে লঙ্কানদের অপেক্ষা করতে হয় ৭ ঘণ্টা। সব মিলিয়ে তাই ম্যাচের পর অভিযোগ করেন দলের স্পিনার থিকশানা।
“আমাদের সঙ্গে এটি অন্যায়। আমাদের প্রতিদিন (ম্যাচের পর) ছুটতে হবে কারণ আমরা চারটি ভিন্ন ভেন্যুতে খেলব। এটি অন্যায্য। ফ্লোরিডা থেকে, মায়ামি থেকে আসতে বিমানবন্দরে আমাদের প্রায় ৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। এখানে আসার পর রাত ৮টায় আমাদের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফ্লাইট ভোর ৫টায়। এটি সত্যিই অন্যায্য। তবে মাঠে খেলার সময় এসব কোনো গুরুত্ব রাখে না।”
ব্যস্ত সূচির কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের আগের দিন নিজেদের অনুশীলন বাতিল করতে বাধ্য হয় শ্রীলঙ্কা। থিকশানা জানান, হোটেলের দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় ম্যাচের দিনও ভোর ৫টার কাছাকাছি সময়ে ঘুম থেকে উঠে মাঠের জন্য রওনা হতে হয়েছে তাদের।
তাই লঙ্কান স্পিনারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেমন ব্যবস্থাপনা পেলে ন্যায্য হতো তাদের জন্য? উত্তরে অন্য দলগুলোর উদাহরণ টানেন থিকশানা।
“আমি দলগুলোর নাম বলতে পারব না যারা একই জায়গায় থাকার সুবিধা পাচ্ছে কিন্তু মাঠ থেকে হোটেলের দূরত্ব মাত্র ১৪ মিনিটের। যেখানে আমাদের ছিল প্রায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের। আমি দলগুলোর নাম বলতে পারব না যারা একই ভেন্যুতে খেলবে। তাই তারা কন্ডিশন সম্পর্কেও জানে। তারা প্রস্তুতি ম্যাচও একই ভেন্যুতে খেলেছে। আর কেউ এটি পাবে না।”
“আমরা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি ফ্লোরিডায়। সেখানে আমাদের তৃতীয় ম্যাচ। পরবর্তী বছরে হয়তো সবাই এটি নিয়ে চিন্তা করবে। কারণ আমি জানি, এই বছর আর কিছু পরিবর্তন হবে না। আমাদের ম্যানেজমেন্ট ফ্লাইটের বিষয়টি দেখার চেষ্টা করছে। কারণ আমরা এখানে খেলছি এবং সব কিছু গুছিয়ে রওনা দিতে হবে। মাথার মধ্যে সবসময় এটি কাজ করে যে, তাড়াহুড়োয় কিছু ফেলে এলাম না তো!”
সংবাদ সম্মেলনে হাসারাঙ্গার সামনেও তুলে ধরা হয় এই প্রসঙ্গ। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার কারণে পারফরম্যান্সেও প্রভাব পড়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনিও একরকম অভিযযোগ করেন সূচি নিয়ে।
“আমরা এটি (পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়েছে কিনা) বলতে পারব না। গত কিছু দিন আমাদের কঠিন সময় ছিল। আমাদের চার ম্যাচ চারটি ভিন্ন ভেন্যুতে। এখানের (নিউ ইয়র্ক) কন্ডিশন সম্পর্কে আমরা জানতাম না। পরের ম্যাচ ডালাসে। সেখানের কিছুও জানি না। এরপর খেলব ফ্লোরিডায়। সেখানে দুটি (প্রস্তুতি) ম্যাচ খেলেছি। তো এটিই একমাত্র ইতিবাচক দিক।”
পরে শ্রীলঙ্কার ম্যানেজার মাহিন্দা হালানগোদা নিশ্চিত করেন, ব্যস্ত সূচি ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে তারা আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছেন। তবে দেরি হয়ে যাওয়ায় এখন আর কিছু সম্ভব নয় জানিয়েছে আইসিসি।
দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ধাক্কা খাওয়ার পর শনিবার বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা।