মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে কিউইদের জয়ের জন্য দরকার ৩৩১ রান, ইংলিশদের ৫ উইকেট।
Published : 18 Feb 2023, 04:02 PM
নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে রেকর্ড রান তাড়ার চ্যালেঞ্জ নিউ জিল্যান্ডের সামনে। সেই পথে হাঁটবে কী, উল্টো মুখ থুবড়ে পড়ল তাদের ব্যাটিং। স্টুয়ার্ট ব্রডের তোপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দিন-রাতের টেস্টে ভীষণ বিপদে কিউইরা।
জো রুট, হ্যারি ব্রুক, বেন ফোকসের ফিফটি ও বাকিদের অবদানে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে শনিবার ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় ৩৭৪ রানে। প্রতিপক্ষকে ছুঁড়ে দেয় তারা ৩৯৪ রানের বিশাল লক্ষ্য।
টেস্টে সাড়ে তিনশ রানও তাড়া করে জয়ের কীর্তি নেই নিউ জিল্যান্ডের। ১৯৯৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩২৪ রানের লক্ষ্য টপকানো তাদের আগের রেকর্ড।
চারশ’র কাছাকাছি লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ৫ উইকেটে ৬৩ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করেছে নিউ জিল্যান্ড। বাকি দুই দিনে জয়ের জন্য এখনও তাদের চাই ৩৩১ রান, ইংলিশদের প্রয়োজন স্রেফ ৫ উইকেট।
প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয়ভাগেও আগ্রাসন ধরে রেখেছে ইংল্যান্ড। এবার তারা ওভারপ্রতি রান তুলেছে ৫.০৬ করে। তাদের বড় পুঁজি এনে দেওয়ার পথে রুট খেলেন ১ ছক্কা ও ৫ চারে সর্বোচ্চ ৫৭ রানের ইনিংস।
প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা ব্রুক এবার করেন ২ ছক্কা ও ৭ চারে ৪১ বলে ৫৪ রান। ৫ চারে ৫১ রান আসে ফোকসের ব্যাট থেকে। ৩ ছক্কা ও ৫ চারে ৪৯ রান করেন অলি পোপ।
পরে ১০ ওভারের এক স্পেলে নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে ধস নামান ব্রড। দিন শেষে তার বোলিং ফিগার ১০-৫-২১-৪। চারটি উইকেট নেন এই পেসার নিজের ২৭ বলের মধ্যে। আর সবগুলোই ছিল বোল্ড।
২ উইকেটে ৭৯ রান নিয়ে দিন শুরু করা ইংল্যান্ডের নাইটওয়াচম্যান ব্রডকে তৃতীয় ওভারে ফেরত পাঠান নিল ওয়্যাগনার। কিউই এই পেসারকেই পরে তুলাধুনা করেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। ইনিংস শেষে তার বোলিং বিশ্লেষণ, ১৩-০-১১০-২!
ওয়্যাগনার ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৮.৪৬ করে। টেস্ট ইতিহাসে তার চেয়ে এক ইনিংসে ওভারপ্রতি বেশি রান দিয়েছেন আর কেবল একজন। পাকিস্তান লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০১৭ সালে সিডনি টেস্টে ৮.৮৫ করে ওভারপ্রতি রান দিয়েছিলেন।
ব্রডের বিদায়ের পর পোপ ও রুট দ্রুত রান বাড়ান। পোপকে কট বিহাইন্ড করে ৪৬ বল স্থায়ী ৬২ রানের জুটি ভাঙেন ওয়্যাগনার। এরপর ব্রুককে নিয়ে আরেকটি পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটি গড়েন রুট।
দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়া এই দুইজন একই ওভারে স্পর্শ করেন ফিফটি। রুট ৫২ বলে, ব্রুক ৩৭ বলে। ব্লেয়ার টিকনারের বলে স্লিপে ধরা পড়ে শেষ হয় ব্রুকের আগ্রাসী ইনিংস। ভাঙে ৮১ রানের জুটি। কয়েক ওভার পর রুটকে ফেরান মাইকেল ব্রেসওয়েল।
প্রথম ১২ বলে রানের খাতা খুলতে নামা পারা বেন স্টোকস টানা দুই চার মারেন স্কট কুগেলাইনকে। এই পেসারকে পরে টানা দুই ছক্কায় ওড়ান তিনি। যার প্রথমটি মেরে টেস্টে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডটি নিজের করে নেন ইংলিশ অধিনায়ক।
২ ছক্কা ও ৩ চারে ৩১ রান করা স্টোকসকে লাঞ্চের আগে বিদায় করেন ব্রেসওয়েল। এক প্রান্ত আগলে রেখে ৭৯ বলে ফিফটি করার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ফোকস। অলিভার রবিনসন ৬ চারে খেলেন ৩৯ রানের কার্যকর ইনিংস।
তিন ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে জবাব দিতে নামা নিউ জিল্যান্ডকে শুরুতেই চেপে ধরেন ব্রড। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে রাউন্ড দা উইকেট থেকে অ্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢোকা তার বল ডেভন কনওয়ের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে ছোবল দেয় স্টাম্পে। ইংলিশ পেসার দারুণ আরেকটি ডেলিভারিতে পরের ওভারে স্টাম্প ভেঙে দেন কেন উইলিয়ামসনের।
ব্রডের পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে টম ল্যাথামের ক্যাচ স্লিপে ছাড়েন জ্যাক ক্রলি। তিন বল পর অবশ্য ল্যাথামকে ফিরিয়ে দেন তিনি কোনো ফিল্ডারের সাহায্য ছাড়াই, বোল্ড করে। ব্রডের শিকার আগের দিনের সেঞ্চুরিয়ান টম ব্লান্ডেলও। মাঝে রবিনসনের বলে হেনরি নিকোলস হন কট বিহাইন্ড।
২৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বড় হারের শঙ্কায় পড়া কিউইদের হাল ধরেন ড্যারিল মিচেল ও ব্রেসওয়েল। ৩৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দিন শেষ করেছেন তারা। দলকে কতদূর টেনে নিতে পারেন এটাই এখন দেখার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩২৫/৯ ডিক্লে.
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩০৬
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৭৯/২) ৭৩.৫ ওভারে ৩৭৪ (পোপ ৪৯, ব্রড ৭, রুট ৫৭, ব্রুক ৫৪, ফোকস ৫১, স্টোকস ৩১, রবিনসন ৩৯, লিচ ১২, অ্যান্ডারসন ৬*; সাউদি ১৫-২-৪৯-০, ওয়্যাগনার ১৩-০-১১০-২, টিকনার ১২-০-৫৫-৩, কুগেলাইন ১৪-১-৮১-২, ব্রেসওয়েল ১৯.৫-২-৬৮-৩)
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৯৪) ২৩ ওভারে ৬৩/৫ (ল্যাথাম ১৫, কনওয়ে ২, উইলিয়ামসন ০, নিকোলস ৭, মিচেল ১৩*, ব্লান্ডেল ১, ব্রেসওয়েল ২৫*; অ্যান্ডারসন ৩-১-৩-০, ব্রড ১০-৫-২১-৪, রবিনসন ৮-০-৩৪-১, লিচ ১-০-৫-০, রুট ১-১-০-০)