আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের বোলারদের পারফরম্যান্সে কিছুতেই খুশি হতে পারছেন না অ্যালান ডোনাল্ড।
Published : 06 Apr 2023, 09:30 PM
টেস্ট ক্রিকেটে বল হাতে সাফল্য পেতে প্রায়ই অপেক্ষা করতে হয় লম্বা সময়। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরা উইকেটে থিতু হয়ে গেলে বোলারদের কাজ হয়ে পড়ে আরও কঠিন। তখন হাঁটতে হয় ভিন্ন পথে। চেষ্টা করতে হয় অভিনব কিছুর। আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের বোলারদের কাছে তেমন কিছুই দেখতে চেয়েছিলেন অ্যালান ডোনাল্ড।
শের-ই বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বোলারদের হতাশার দিনে দারুণ ব্যাটিং করেছেন লর্কান টাকার, হ্যারি টেক্টর, অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইনরা। পুরো দিন খেলে স্রেফ ৪ উইকেট হারিয়ে ২৫৯ রান করেছে সফরকারীরা। ১৫৫ রানে পিছিয়ে থেকে ইনিংস শুরু করে তারা এখন পর্যন্ত নিয়েছে ১৩১ রানের লিড।
আইরিশদের স্বপ্নময় দিনে বাংলাদেশের বোলিংকে মনে হয়েছে নির্বিষ ও প্রাণহীন। কিছু বলে টার্ন ও বাউন্সের দেখা মিললেও এর বাইরে সারা দিন তেমন কার্যকর কিছু করতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। উইকেটেও বোলারদের জন্য ছিল না বাড়তি কোনো সুবিধা। নতুন বলের উজ্জ্বলতা কমার পর রান তুলতে বেগ পেতে হয়নি আয়ারল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের।
সকালের সেশনে সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামের শুরুর স্পেল দেখেশুনে কাটিয়ে দেওয়ার পর অনায়াসেই ব্যাটিং করেছেন টাকার, টেক্টর, ম্যাকব্রাইনরা। ষষ্ঠ উইকেটে ৭২ রান যোগ করেন টাকার ও টেক্টর। পরে ম্যাকব্রাইনকে নিয়ে ১১১ রানের জুটি গড়েন অভিষেকে সেঞ্চুরি করা টাকার।
উইকেট নিতে ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করার জন্য প্রয়োজন ছিল বিশেষ কিছুর। স্বাগতিক বোলাররা কিছু চেষ্টা করেছে বটে, কিন্তু দেখাতে পারেনি ধারাবাহিকতা।
মেহেদী হাসান মিরাজের করা ৯৬তম ওভারেই যেমন, প্রায় সব ফিল্ডারকে অফ সাইডে এনে মুশফিকুর রহিমকে ডিপ স্কয়ার লেগ ও খালেদ আহমেদকে মিড উইকেটে রাখা হয়।
এমন ফিল্ড সেট-আপে স্পষ্ট ছিল ম্যাকব্রাইনকে অন সাইডে খেলার আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে, মিরাজের অফ স্পিনে অন সাইডে বল পাঠাতে টার্নের বিপরীতে খেলতে হতো ম্যাকব্রাইনকে, যা করতে গেলে কানায় লাগার সম্ভাবনা অনেক। কিন্তু মিরাজ বল করেন অফ-মিডল স্টাম্পে। যা সুইপ করে বাউন্ডারি হাঁকাতে কোনো সমস্যাই হয়নি আইরিশ ব্যাটসম্যানের।
পরের বলে খালেদকে মিড অফে এনে অন সাইডের গ্যাপ আরও বড় করা হয়। কিন্তু যথাযথ বোলিং করে ম্যাকব্রাইনকে ভুল শট খেলতে প্রলুব্ধ করতে পারেননি মিরাজ।
আরও কয়েকবার এমন ভিন্ন ধরনের ফিল্ড সেট-আপ সাজিয়ে চেষ্টা চালায় বাংলাদেশ। কিন্তু বোলাররা পরিকল্পনা অনুযায়ী বোলিং করতে না পারায় মেলেনি সাফল্য। এসব পরিকল্পনায় হয়তো সফল হতে পারতেন অভিজ্ঞ সাকিব। কিন্তু বিস্ময়করভাবে এদিন চারটি ভিন্ন স্পেলে স্রেফ ৬ ওভার হাত ঘোরান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
ফলে বড় দায়িত্ব বর্তায় তাইজুল, মিরাজ ও তিন পেসারের ওপর। আগের দিন নেওয়া ২ উইকেটের সঙ্গে আরও দুইটি যোগ করেন তাইজুল। শরিফুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেন ধরেন ১টি করে শিকার। মিরাজ উইকেটশূন্য।
দিনের খেলা শেষে বোলারদের লড়াকু মানসিকতাকে বাহবা দেন বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ। তবে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টায় ঘাটতির কথাও বললেন ডোনাল্ড।
“আজকে আমাদের বোলিং বিভাগ অনেক লড়াই করেছে। আমার মতে, তাইজুল দারুণভাবে ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে এবং কিছু উইকেট নেওয়ার চেষ্টা করেছে। বোলিং বিভাগের বাকিরাও তাকে ভালো সঙ্গ দিয়েছে।”
“আমার মনে হয়েছে, কিছু সময় আমরা আরেকটু সৃষ্টিশীল হতে পারতাম এবং এক দিকের ফিল্ড সাজাতে পারতাম। যেমন শুধু অফ সাইডের ফিল্ডিং সাজিয়ে নির্দিষ্ট একটা সময় ধরে ওই পরিকল্পনায় বোলিং করতে পারতাম। তবে আমরা সাইডলাইনে থাকি এবং সেখানে বসে কিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।”
নিজেদের পরিকল্পনার ঘাটতিতে হতাশা থাকলেও প্রতিপক্ষকে কৃতিত্ব দিতে কার্পণ্য করেননি ডোনাল্ড।
“আমার চোখে, আয়ারল্যান্ড দারুণ একাগ্রতা দেখিয়েছে। আজকে মাঠে আসার সময়ই আমরা জানতাম, কাজটা সহজ হবে না।”
ম্যাচের শুরুতে উইকেটে ছিল সবুজ ঘাসের উপস্থিতি। যা দেখেই হয়তো তিন পেসার নিয়ে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু উইকেট থেকে বাড়তি কোনো সুবিধা নিতে পারেননি পেসাররা। উল্টো এখন পর্যন্ত বেশি সাফল্য পেয়েছেন স্পিনাররাই।
তবে এই কারণে উইকেট-কন্ডিশনকে দায় দিতে চান না ডোনাল্ড। তার কণ্ঠে সৃষ্টিশীলতার তাগিদ।
“যেমন কন্ডিশনই দেওয়া হোক না কেন, আমাদেরকে এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে এবং সৃষ্টিশীল হতে হবে। এটিই টেস্ট ক্রিকেট। এখানে সব ম্যাচেই আমি আশায় থাকি যে, বল স্পিন করবে এবং কিছুটা ক্যারি করবে। কিন্তু তেমন কিছু হয়নি। তবে টেস্ট ক্রিকেট এমন কিছু হতেই পারে।”
“আমাদের এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে এবং পথ খুঁজতে হবে। আমাদের নতুন কৌশল নিতে হবে। ধৈর্য্য ধরতে ও অটল থাকতে হবে।”