মেহেদী হাসান মিরাজ ও মুস্তাফিজুর রহমানের বীরত্ব প্রথম ওয়ানডে নাটকীয় জয় পাওয়া বাংলাদেশের সামনে আরেকটি সিরিজ জয়ের হাতছানি। শেষ দুই ম্যাচের একটিতে ভারতকে হারাতে পারলেই প্রতিবেশী দেশটির বিপক্ষে জিতবে টানা দুটি ওয়ানডে সিরিজ।
বাংলাদেশ কাজ সারতে চায় মিরপুরে, দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই। বুধবার শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলা শুরু হবে বেলা ১২টায়।
২০১৫ সালে বাংলাদেশে সবশেষ সফরে সিরিজ হেরেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। এরপর পুনরাবৃত্তি এড়াতে মরিয়া থাকবেন রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিরা।
তাদের মতো উন্নতির জায়গা কম নেই বাংলাদেশেরও। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে। রান তাড়ায় এক পর্যায়ে ১০৪ বলের মধ্যে আসেনি কোনো বাউন্ডারি। ৮ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে চলে গিয়েছিল খাদের কিনারায়। মঙ্গলবার প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটিংয়ে উন্নতির তাগিদ দিলেন।
টসের পর লিটন দাস ও রোহিত শর্মা হাসি অনেক কিছু বলে দিল। সিদ্ধান্তটা আসলে দুইজনই এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন! টস জেতায় সিদ্ধান্ত নিতে হলো লিটনকে। বাংলাদেশ অধিনায়ক নিলেন ব্যাটিং। রোহিত অবশ্য বলেননি, টস জিতলে তিনি কি নিতেন।
প্রথম ওয়ানডের দলে একটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। পেসার হাসান মাহমুদের জায়গায় ফিরিয়েছে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে। তার সঙ্গে স্পিনে আছেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
পেস আক্রমণে মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গী ইবাদত হোসেন চৌধুরি।
বাংলাদেশ: লিটন দাস (অধিনায়ক), এনামুল হক, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ, ইবাদত হোসেন চৌধুরি, মাহমুদউল্লাহ, নাজমুল হোসেন শান্ত।
১ উইকেটে হেরে যাওয়া দলে দুটি পরিবর্তন এনেছে ভারত। শহবাজ আহমেদের জায়গায় ফিরেছেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার আকসার প্যাটেল। চোটের জন্য খেলছেন না সেই ম্যাচে অভিষেক হওয়া কুলদিপ সেন। তার জায়গায় দলে এসেছেন গতিময় পেসার উমরান মালিক।
ভারত: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), লোকেশ রাহুল (উইকেটরক্ষক), শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, আকসার প্যাটেল, ওয়াশিংটন সুন্দর, শার্দুল ঠাকুর, মোহাম্মদ সিরাজ, দিপক চাহার, উমরান মালিক।
ওভারের শুরুটা কী দারুণই না ছিল। প্রথম বলে ফ্লিক করে বাউন্ডারি মারেন এনামুল হক। পরের বলে চমৎকার ড্রাইভে আরেকটি। তৃতীয় বলে মিড উইকেট-মিড অনের মাঝ দিয়ে খেলে নেন দুই রান।
চতুর্থ বলে রোহিত শর্মার ব্যর্থতায় পান জীবন। দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ ছাড়ার সঙ্গে আঙুলে চোটও পান ভারত অধিনায়ক। পরের বলেই এনামুলকে এলবিডব্লিউ করে দেন মোহাম্মদ সিরাজ।
লিটন দাসের সঙ্গে কথা বলে রিভিউ নেন ব্যাটসম্যান। আউট হওয়ার সঙ্গে একটি রিভিউও নষ্ট করে যান এনামুল।
৯ বলে দুই চারে তিনি তিনি করেন ১১।
২ ওভারে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ১১। ক্রিজে লিটনের সঙ্গী নাজমুল হোসেন শান্ত।
একটা বাউন্ডারি মারলেও ঠিক স্বস্তিতে ছিলেন না লিটন দাস। সেভাবে টাইমিং করতে পারছিলেন না। অল্পের জন্য ব্যাটের কানা নিচ্ছিল না বল। তার ভোগান্তি থামল মোহাম্মদ সিরাজের বলে বোল্ড হয়ে।
ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ভেতরে ঢোকা বলের লাইনে যেতে পারেননি তিনি। এলোমেলো হয়ে যায় স্টাম্প। ভাঙে ৪৫ বল স্থায়ী ২৮ রানের জুটি।
২৩ বলে এক চারে ৭ রান করেন লিটন।
পাওয়ার প্লেতে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ৪৪ রান তুলেছে বাংলাদেশ। দুই চারে ২৪ বলে ১৫ রানে ব্যাট করছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এক চারে সাকিব আল হাসানের রান ৪ বলে চার।
দুটি উইকেটই নিয়েছেন সিরাজ।
দ্বিতীয় ওভারে এনামুল হকের ক্যাচ ধরার চেষ্টায় আঙুলে চোট পান রোহিত শর্মা। ক্যাচ হাতছাড়া করা ভারত অধিনায়ক মাঠ ছাড়েন সঙ্গে সঙ্গেই। এক্সরের জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাসপাতালে।
ক্রিজে যাওয়ার পর দশম ওভারে মোহাম্মদ সিরাজের একটি ডেলিভারি লেগেছিল সাকিব আল হাসানের হেলমেটে। দ্বাদশ ওভারে গতিময় পেসার উমরান মালিকের একটি ডেলিভারি লাগে তার পিঠে, দুটি হেলমেটে।
প্রত্যাশা অনুযায়ী বাউন্স করেনি উমরানের ডেলিভারি। তাই বসে পড়ে শর্ট বল এড়ানোর চেষ্টায় সফল হননি সাকিব। তবে এই সব আঘাত নাড়িয়ে দিতে পারেনি অভিজ্ঞ বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে। হেলমট পাল্টে নিয়ে ব্যাটিং চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
আগের ওভারে সাকিব আল হাসানকে দারুণ ভোগানো উমরান মালিক পেলেন উইকেটের দেখা। গতিময় এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তকে।
অফ স্টাম্পের একটু বাইরে পরে ভেতরে ঢোকা বলের লাইনে যেতে পারেননি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ঘণ্টা প্রতি ১৫১ কিলোমিটার গতির ডেলিভারিতে উড়ে যায় অফ স্টাম্প।
৩৫ বলে তিন চারে ২১ রান করেন শান্ত।
মুখোমুখি প্রথম বলে চমৎকার ফ্লিকে রানের খাতা খোলেন মুশফিকুর রহিম।
১৪ ওভারে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৫৭।
ক্রিজে গিয়ে শুরুর দিকেই একটি চার মেরে শুরু করেছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে একবার গায়ে ও তিনবার হেলমেটে বল লাগার পর যেন একটু অস্বস্তিতে পড়ে যান তিনি। সেটা সরিয়ে দিতেই হয়তো চড়াও হতে চেয়েছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দরের উপর। সেই চেষ্টায় ফিরে গেলেন ক্যাচ দিয়ে।
স্লগ সুইপে টাইমিং করতে পারেননি সাকিব। ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ যায় শর্ট ফাইন লেগে। মোহাম্মদ সিরাজের সঙ্গে প্রায় সংঘর্ষই হয়ে যাচ্ছিল স্লিপ থেকে ছুটে যাওয়া শিখর ধাওয়ানের। সেই কারণেই হয়তো হাত থেকে ছুটে গিয়েছিল বল। কিন্তু আটকে যায় দুই হাঁটুর মাঝে! কোনোমতে হাতে নিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতেন ধাওয়ান।
২০ বলে এক চারে ৮ রান করে ফেরেন সাকিব।
১৭ ওভারে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ৬৬। ক্রিজে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গী মাহমুদউল্লাহ।
পরপর দুই বলে মুশফিকুর রহিম ও আফিফ হোসেনকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের বিপদ বাড়ালেন ওয়াশিংটন সুন্দর। অফ স্পিনারের বলে পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করার চেষ্টায় লেগ স্লিপে ধরা পড়লেন মুশফিক। শরীরের খুব কাছের বল কাট করার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে গেলেন আফিফ হোসেন।
ক্যাচের জোরাল আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় ভারত। রিপ্লেতে দেখা যায় মুশফিকের গ্লাভস ছুঁয়ে গিয়েছিল বল। ঝাঁপিয়ে মুঠোয় জমানোতেও কোনো ভুল করেননি শিখর ধাওয়ান।
অফ স্পিনারের আর্ম বল বুঝতেই পারেননি আফিফ। শরীরের খুব কাছের বলে কাট করার চেষ্টা করেন তিনি। একটু নিচু হয়ে যাওয়া বলের নাগাল পাননি, উপড়ে যায় অফ স্টাম্প।
১৯ ওভারে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ৬৯। ক্রিজে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ।
ত্রয়োদশ ওভারে এসেছিল পঞ্চাশ। দলের রান তিন অঙ্কে গেল ২৬তম ওভারে।
দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে পড়া বাংলাদেশ লড়াই করছে মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে।
২৬ ওভারে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ১০৪। ২৪ বলে ১৯ রানে ব্যাট করছেন মাহমুদউল্লাহ। ২০ বলে মিরাজের রান ১৮।
দ্রুত ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যাওয়া দলকে টানছেন মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ৬৩ বলে দুই জনে উপহার দিয়েছেন পঞ্চাশ রানের জুটি।
শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে খেলছেন আগের ম্যাচের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩১ বলে এক ছক্কা ও তিন চারে তার রান ৩১।
অন্য প্রান্তে বেশ সাবধানী মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞ এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান খেলছেন দেখেশুনে। সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছেন মিরাজকে। ৩৭ বলে দুই চারে তার রান ২৬।
৩০ ওভারে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ১২৪।
প্রথম পঞ্চাশ এসেছিল ৭৮ বলে, পরেরটি ৭৭ বলে। তৃতীয় পঞ্চাশ এলো কেবল ৫৭ বলে।
এক সময়ে একশ মনে হচ্ছিল দূরের পথ। সেখান থেকে দুইশ রানের পথ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে আগের সেরা ৬৬ ছাড়িয়ে গেছে এরই মধ্যে।
৩৬ ওভারে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ১৫৫। জুটির রান ৮৬।
মেহেদী হাসান মিরাজ যখন ক্রিজে যান দল তখন ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে কাঁপছে। যাত্রা শুরুর ওয়াশিংটন সুন্দরের হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দিয়ে। এরপর সাবলীল গতিতে এগিয়ে ৫৫ বলে বলে স্পর্শ করেছেন পঞ্চাশ, তার ক্যারিয়ারের তৃতীয়।
এই সময়ে মিরাজের ব্যাট থেকে এসেছে দুটি ছক্কা ও তিনটি চার।
শুরু থেকেই আস্থার সঙ্গে খেলছেন। প্রয়োজনে কিছুটা ঝুঁকিও নিচ্ছেন। স্পিনের বিপক্ষে পা ব্যবহার করছেন। এগিয়ে এসে ছক্কা মেরেছেন। পেস বোলিংও সামলাচ্ছেন দারুণ দক্ষতায়।
মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে চমৎকার জুটিতে এগিয়ে নিচ্ছেন দলকে।
দ্রুত ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যাওয়া দলকে টানছেন মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ১২৭ বলে দুই জনে উপহার দিয়েছেন শত রানের জুটি।
ভারতের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে এটাই বাংলাদেশের প্রথম শতরানের জুটি। ২০১৯ বিশ্বকাপে সাব্বির রহমান ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের ৬৬ ছিল আগের সেরা।
শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে খেলছেন মিরাজ। জুটিতে অগ্রণী তিনিই। ৫৯ বলে দুই ছক্কা ও তিন চারে তার রান ৫৩। ৭০ বলে চারটি চারে ৪৭ রানে তার সঙ্গী দিচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ।
৪০ ওভারে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ১৬৯।
খাদের কিনারা থেকে দলটে টেনে তুলছেন মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে করেছেন ফিফটি, ৭৪ বলে। এই সময়ে তার ব্যাট থেকে এসেছে চারটি চার।
একশ রান এসেছিল ২৬তম ওভারে। বাংলাদেশের রান দুইশ স্পর্শ করল ৪৫তম ওভারে।
৮৯ বলে ৬৫ রানে ব্যাট করছেন মাহমুদউল্লাহ। মেহেদী হাসান মিরাজ ৭০ বলে খেলছেন ৬৫ রানে।
৪৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ২০৩।
৬৯ রানে ৬ উইকেট হারানো দলকে কক্ষপথে পথে ফেরাতে ভারতের বিপক্ষে রেকর্ড গড়া জুটি উপহার দিলেন মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
২০১৪ সালে ফতুল্লায় তৃতীয় উইকেটে এনামুল হক ও মুশফিকুর রহিমের ১৩৩ রান ছিল এত দিন সর্বোচ্চ। সেটা ছাড়িয়ে দেড়শর পথে ছুটছে মাহমুদউল্লাহ-মিরাজের জুটি।
৪৬তম ওভারে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ২১৭। জুটির রান ১৪৮।
এক সময়ে উমরান মালিকের গতি দারুণ ভোগাচ্ছিল বাংলাদেশকে। শেষ দিকে এসে উল্টো তার উপর চড়াও হয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাসুম আহমেদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের পঞ্চাশ পঞ্চাশ এসেছে কেবল ২৬ বলে!
আগের সেরা ৮১ ছাড়িয়ে মিরাজ খেলছেন ৮৫ রানে। তার সঙ্গী নাসুমের রান ১০ বলে ১৮।
সেঞ্চুরির জন্য শেষ ওভারে মেহেদী হাসানের প্রয়োজন ১৫ রান। স্ট্রাইকে তখন নাসুম আহমেদ। ব্যাটে ছোঁয়াতে না পারলেও কোনোমতে প্রান্ত বদল করে নিতে পারলেন তিনি।
শার্দুল ঠাকুরের নাকল বল ফাইন লেগ দিয়ে গ্যালারিতে পাঠিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথমবার নব্বইয়ের ঘরে গেলেন মিরাজ। পরের বল ছিল শর্ট, ব্যাটে খেলতে পারেননি তিনি।
চতুর্থ বল ডিপ মিডউইকেট দিয়ে গ্যলারিতে পাঠিয়ে সেঞ্চুরির কাছে পৌঁছে যান মিরাজ। পরের বল সীমানা থেকে থামিয়ে সেঞ্চুরির অপেক্ষা বাড়ান বিরাট কোহলি। দুই নিয়ে অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার পৌঁছে যান ৯৯ রানে।
৮৩ বলে চার ছক্কা ও আট চারে ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন মিরাজ।
শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে মাতেন প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির উল্লাসে! তিন যখন ক্রিজে যান তখন কে ভাবতে পেরেছিল এমন চিত্র!
ক্রিজে গিয়েই বোলারদের উপর চড়াও হন নাসুম আহমেদ। এতক্ষণ বলে-বলে রান করা মেহেদী হাসান মিরাজও বাড়ান রানের গতি। ২৩ বলে তারা উপহার দেন ৫৪ রানের জুটি!
১১ বলে এক ছক্কা ও দুই চারে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন নাসুম। চার ছক্কা ও আট চারে ৮৩ বলে মিরাজ করেন ১০০ রান।
১৯ ওভারে ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে কী ভীষণ বিপদেই না পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে কী দুর্দান্তভাবেই না ঘুরে দাড়াল। পরের ৩১ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে যোগ করল ২০২ রান!
এতে সবচেয়ে বড় অবদান ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজের। তার সঙ্গে ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ- ১৪৮ রানের জুটি উপহার দেওয়া মাহমুদউল্লাহর অবদানও কম নয়। শেষ দিকে মিরাজ ও নাসুম আহমেদের ২৩ বল স্থায়ী ৫৪ রানের জুটি সংগ্রহ হয় আরও সমৃদ্ধ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭১/৭ (এনামুল ১১, লিটন ৭, শান্ত ২১, সাকিব ৮, মুশফিক ১২, মাহমুদউল্লাহ ৭৭, আফিফ ০, মিরাজ ১০০*, নাসুম ১৮*; চাহার ৩-০-১২-০, সিরাজ ১০-০-৭৩-২, শার্দুল ১০-১-৪৭-০, উমরান ১০-০-৫৮-২, ওয়াশিংটন ১০-০-৩৭-৩, আকসার ৭-০-৪০-০)
ফিল্ডিংয়ের সময় আঙুলে চোট পাওয়ায় ব্যাটিংয়ে নামেননি রোহিত শর্মা। ভারত অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমেছেন বিরাট কোহলি।
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে সবশেষ ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন তিনি।
রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে ওপেনিংয়ে নেমে সুবিধা করতে পারলেন না বিরাট কোহলি। দ্বিতীয় ওভারেই ফিরে গেলেন ভারতের এই ব্যাটিং ভরসা।
ইবাদত হোসেনের গতিময় স্কিডি শর্ট বল পুল করতে চেয়েছিলেন কোহলি। ঠিক মতো পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে এলোমেলো হয়ে যায় স্টাম্প!
৬ বলে এক চারে ৫ রান করেন কোহলি।
২ ওভারে ভারতের রান ১ উইকেটে ৭। ক্রিজে শিখর ধাওয়ানের সঙ্গী শ্রেয়াস আইয়ার।
এলবিডব্লিউয়ের রিভিউয়ে ব্যর্থ হওয়ার দুই বল পরেই শিখর ধাওয়ানকে ফিরিয়ে দিলেন মুস্তাফিজুর রহমান।
অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন ধাওয়ান। বাঁহাতি ওপেনারের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বাউন্স করে ছুঁয়ে যায় গ্লাভস। পয়েন্টে সহজ ক্যাচ নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
১০ বলে এক চারে ৮ রান করেন ধাওয়ান।
৩ ওভারে ভারতের রান ২ উইকেটে ১৩। ক্রিজে শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গী ওয়াশিংটন সুন্দর।
দশম ওভারে আক্রমণে এলেন সাকিব আল হাসান। ভেঙে দিলেন ভারতের জুটি গড়ার চেষ্টা
বাঁহাতি স্পিনারের অফ স্টাম্প ঘেঁষা বল লেগে ঘুরাতে চেয়েছিলেন ওয়াশিংটন। ঠিক মতো পারেননি। মিডউইকেটে ক্যাচ নেন লিটন দাস।
১৯ বলে ১ চারে ১১ রান করেন ওয়াশিংটন।
পাওয়ার প্লেতে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গেল ভারত।
১০ ওভারে সফরকারীদের রান ৩ উইকেটে ৩৯। ক্রিজে শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গী লোকেশ রাহুল।
সেই প্রথম ওভার করেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর আর লম্বা সময় বল হাতে পাননি তিনি। ১৯তম ওভারে ফিরেই সাফল্য পেলেন। চমৎকার এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ করে দিলেন লোকেশ রাহুলকে।
২৮ বলে খেলে ১৪ রান করে ভারত সহ-অধিনায়ক। তার ইনিংসে নেই কোনো বাউন্ডারি।
অফ স্পিনারের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে লেগে ঘুরাতে চেয়েছিলেন রাহুল। বলের লাইন মিস করা মাত্র হাঁটা ধরেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
১৯ ওভারে ভারতের রান ৪ উইকেটে ৬৫। ক্রিজে শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গী আকসার প্যাটেল।
বোলিং করার সময় দুইবার নন স্ট্রাইকার প্রান্তের স্টাম্পে পা লাগল মিরাজের। দুটি ‘নো’ বলে দুটি ফ্রি হিট পেয়ে গেল ভারত। প্রথমটি কাজে লাগাতে পারলেন না আকসার প্যাটেল। পরের বলে ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারি পেয়ে গেলেন শ্রেয়াস আইয়ার।
আগের ওভারে নাসুম আহমেদ দিয়েছিলেন ১৫ রান। এবার মিরাজ দিলেন ১৪।
২১ ওভারে ভারতের রান ৪ উইকেটে ৯৪।
সাকিব আল হাসানের বল উড়িয়ে গ্যালারিতে ফেললেন আকসার প্যাটেল। তার সঙ্গে শ্রেয়াস আইয়ারের জুটির রান পঞ্চাশ স্পর্শ করল, ৩৫ বলে।
মুস্তাফিজুর রহমানের করা পরের ওভারে সিঙ্গেল নিয়ে ফিফটিতে পৌঁছালেন শ্রেয়াস। তার ৬৯ বলের ইনিংসে এক ছক্কার পাশে চারটি চার।
২৫ ওভারে ভারতের রান ৪ উইকেটে ১১৭। শেষ ২৫ ওভারে ১৫৫ রান চাই তাদের।
বেরিয়ে এসে মেহেদী হাসান মিরাজকে ছক্কায় ওড়িয়ে জুটির রান তিন অঙ্কে নিয়ে গিয়েছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার। স্ট্রাইক ফিরে পেয়ে পুনরাবৃত্তির চেষ্টায় টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেললেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। সীমানায় চমৎকার ক্যাচ নিলেন আফিফ হোসেন।
১০১ বল স্থায়ী ১০৭ রানের জুটি ভাঙলেন মিরাজ।
১০২ বলে তিন ছক্কা ও ছয় চারে শ্রেয়াস করেন ৮২ রান।
৩৫ ওভারে ভারতের রান ৫ উইকেটে ১৭২। ক্রিজে আকসার প্যাটেলের সঙ্গী শার্দুল ঠাকুর।
ক্রিজে যাওয়ার পর থেকে দ্রুত রান তোলা আকসার প্যাটেল পেয়েছেন পঞ্চাশের দেখা, ৫০ বলে। নিজের জোনে বল পেলেই চড়াও হচ্ছেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। এক-দুই করে নেওয়ার পাশাপাশি মারছেন বাউন্ডারি। তিনিই এখন ভারতের সবচেয়ে বড় আশা।
৩৬ ওভারে ভারতের রান ৫ উইকেটে ১৮১।
লম্বা সময় পর বোলিংয়ে এসেই সাফল্য পেলেন ইবাদত হোসেন। ফিরিয়ে দিলেন দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় থাকা আকসার প্যাটেলকে।
আগের ওভারটি শার্দুল ঠাকুরকে মেডেন খেলান সাকিব আল হাসান। সে কারণে হয়তো রানের জন্য একটু ছটফট করছিলেন আকসার। তাই বেরিয়ে এসে চড়াও হতে চাইলেন ইবাদতের উপর।
ঠিক মতো শট খেলতে পারেননি আকসার। এক্সট্রা কাভারে একটু সরে গিয়ে ক্যাচ নেন সাকিব।
৫৬ বলে তিন ছক্কা ও দুই চারে ৫৬ রান করেন আকসার।
৩৯ ওভারে ভারতের রান ৬ উইকেটে ১৯১। ক্রিজে শার্দুলের সঙ্গী দিপক চাহার।
সাকিব আল হাসানকে বেরিয়ে এসে খেলার চড়া মাশুল দিলেন শার্দুল ঠাকুর। স্টাম্পড হয়ে ফিরে গেলেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
ফ্লাইটে বিভ্রান্ত হয়ে বলের নাগাল পাননি শার্দুল। এতো এগিয়ে গিয়েছিলেন যে ফেরার কোনো সুযোগই ছিল না। বেশ বাউন্স করা বল গ্লাভসে নিয়ে বাকিটা সারেন মুশফিকুর রহিম।
শার্দুলের বিদায়ের পর ক্রিজে এসেছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। আঙুলে চোট পাওয়ায় ম্যাচের দ্বিতীয় ওভার থেকে আর মাঠে ছিলেন না তিনি। হাসপাতাল ঘুরে এমন সময়ে ব্যাটিংয়ে নেমেছেন যখন দল ভীষণ বিপদে।
বুড়ো আঙুলে ট্যাপ প্যাচানো। এনামুল হকের ক্যাচ ধরার চেষ্টায় ওই আঙুলে চোট পেয়েছিলেন তিনি।
৪৩ ওভারে ভারতের রান ৭ উইকেটে ২০৮। দিপক চাহার ৯ ও রোহিত ১ রানে ব্যাট করছেন।
ওভার প্রতি প্রয়োজন প্রায় ১২ করে। সময়ের দাবি বড় শট। সেটা মেটানোর চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন দিপক চাহার।
অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট লেংথের বল পুল করে ওড়াতে চেয়েছিলেন চাহার। টাইমিং করতে পারেননি। মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
কীভাবে খেলা উচিত ছিল সেটাই যেন দেখিয়ে চমৎকার পুলে দুটি ছক্কা মারেন রোহিত শর্মা।
৪৬ ওভারে ভারতের রান ৮ উইকেটে ২৩১।
৪৭তম ওভার করতে এসেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রথম বল করার পর আর চালিয়ে যেতে পারলেন না তিনি। ফিজিওর সঙ্গে মাঠ ছাড়লেন অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার।
ওভারটি শেষ করেন মাহমুদউল্লাহ। ওভার থেকে আসে কেবল একটি সিঙ্গেল।
রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করলেন ইবাদত হোসেন। ফাইন লেগে ছেড়ে দিলেন বেশ উঁচুতে উঠে যাওয়া ক্যাচ। সে সময় ২৬ রানে ছিলেন ভারত অধিনায়ক।
পঞ্চম বলে আবার ক্যাচ দেন তিনি। এবার সীমানায় ক্যাচ ছাড়েন এনামুল হক। সে সময় ৩৬ রানে ছিলেন রোহিত।
দুই ছক্কায় ওভার থেকে আসে ২০ রান। শেষ বলে মোহাম্মদ সিরাজকে বোল্ড করে দেন মাহমুদউল্লাহ।
শেষ ২ ওভারে ৪০ রানের সমীকরণ প্রায় মিলিয়ে ফেলেছিলেন রোহিত শর্মা। দুইবার জীবন পেয়ে জাগিয়েছিলেন অবিশ্বাস্য এক জয়ের সম্ভাবনা।
শেষ ২ বলে প্রয়োজন ছিল ১২ রান। ছক্কা মেরে আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন রোহিত। কিন্তু মুস্তাফিজের ইয়র্কার ঠিক মতো খেলতে পারেননি তিনি।
নয়ে নেমে ২৮ বলে অপরাজিত ৫১ রানের ইনিংসে ম্যাচ প্রায় ঘুরিয়েই দিচ্ছিলেন তিনি। অবশ্য ইবাদত হোসেন ও এনামুল হক সহজ ক্যাচ না ছাড়লে জয় হয়তো এতটা কঠিন হতো না।
শেষ দিকে দারুণ জমে যাওয়া ম্যাচে ৫ রানে জিতল বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে টানা দুই সিরিজে হারাল ভারতকে।
২৭১ রান তাড়ায় ৯ উইকেটে ২৬৬ রান করে রোহিত শর্মার দল।
প্রথম ম্যাচ ১ উইকেটে জেতা বাংলাদেশ তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল ২-০ ব্যবধানে। তাদের সামনে এখন ভারতকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করার হাতছানি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭১/৭ (এনামুল ১১, লিটন ৭, শান্ত ২১, সাকিব ৮, মুশফিক ১২, মাহমুদউল্লাহ ৭৭, আফিফ ০, মিরাজ ১০০*, নাসুম ১৮*; চাহার ৩-০-১২-০, সিরাজ ১০-০-৭৩-২, শার্দুল ১০-১-৪৭-০, উমরান ১০-০-৫৮-২, ওয়াশিংটন ১০-০-৩৭-৩, আকসার ৭-০-৪০-০)
ভারত: ৫০ ওভারে ওভারে ২৬৬/৯ (কোহলি ৫, ধাওয়ান ৮, শ্রেয়াস ৮২, ওয়াশিংটন ১১, রাহুল ১৪, আকসার ৫৬, শার্দুল ৭, চাহার ১১, রোহিত ৫১, সিরাজ ২, উমরান ০*; মিরাজ ৬.১-০-৪৬-২, ইবাদত ১০-০-৪৫-৩, মুস্তাফিজুর ০-০-০-০, নাসুম ১০-০-৫৪-০, সাকিব ১০-১-৩৯-২, মাহমুদউল্লাহ ৩.৫-০-৩৩-১)
ফল: বাংলাদেশ ৫ রানে জয়ী
২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে দেশের মাটিতে সিরিজ জয়ের দিক থেকে সফলতম বাংলাদেশ। এই সময়ে ভারতকে দ্বিতীয়বার হারাল তারা। ২০১৫ সালে জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে।
এবার ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছে লিটন দাসের দল।
দ্বিতীয়বারের মতো ভারতের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। দুই জয়েই সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতলে মেহেদী হাসান মিরাজ।
সেঞ্চুরির সঙ্গে দুই ম্যাচ আর দারুণ ফিল্ডিংয়ে ম্যাচ সেরার লড়াইয়ে সেভাবে আর কেউ ছিলেন না।
কাছে গিয়েও ভারতের বিপক্ষে অনেক ম্যাচ হারা বাংলাদেশ চার দিনের মধ্যে দুবার উল্টো চিত্র দেখল। প্রথম ম্যাচে ভারতের মুঠোয় থেকে ছিনিয়ে আনল জয়। এবার ভারতকে মেলাতে দিল না শেষ বলে ছক্কার সমীকরণ।
২-০ ব্যবধানে সিরিজ এগিয়ে থাকার পর বাংলাদেশের একটাই লক্ষ্য থাকা সম্ভব। অধিনায়ক লিটন দাস বললেন, আগামী শনিবার চট্টগ্রামে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই নামবেন তারা।