আগ্রাসী ক্রিকেটের এই ধারা ভারতের উইকেটেও ইংল্যান্ড ধরে রাখতে পারবে বলে বিশ্বাস এই ওপেনারের।
Published : 04 Aug 2023, 11:55 AM
অ্যাশেজ ফিরিয়ে আনা যায়নি, সিরিজ জয় করা হয়নি। তবে বাজবলের জয়গান থামেনি। বরং আরও সুরেলা ও উচ্চকিত হয়েই বেজেছে তা। ২-০তে পিছিয়ে পড়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ ড্র করার পথে বাজবলের দুর্দান্ত প্রদর্শনী দেখিয়েছে ইংল্যান্ড। তাদের সামনে এখন ভারত সফরের চ্যালেঞ্জ। ওপেনার জ্যাক ক্রলির বিশ্বাস, ভারতেও তারা ধরে রাখতে পারবেন একই ধারা।
কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও অধিনায়ক বেন স্টোকসের জমানায় যে আগ্রাসী ঘরানার ক্রিকেট খেলছে ইংল্যান্ড, ম্যাককালামের ডাক নাম ‘বাজ’ অবলম্বনে এটি নাম পেয়ে গেছে ‘বাজবল।’ বৈপ্লবিক এই ঘরানা দিয়ে গত ১৪ মাসে টেস্ট ক্রিকেটকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে ইংল্যান্ড।
এবারের অ্যাশেজকে মনে করা হচ্ছিল এই ঘরানার ক্রিকেটের বড় এক পরীক্ষা। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এত চাপের সিরিজে এবং এমন দুর্দান্ত বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে বাজবলের কার্যকারিতা দেখার কৌতূহল ছিল ক্রিকেট বিশ্বের। শেষ পর্যন্ত সিরিজ জিততে না পারলেও সেই পরীক্ষায় উতরে গেছে ইংল্যান্ড। বাজবল তাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আরেকটু পোক্ত হয়ে।
বাজবলের এই ধরনকে মাঠের ক্রিকেটে মেলে ধরায় গুরুত্বপূর্ণ সেনানিদের একজন জ্যাক ক্রলি। এবারের অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের সফলতম ব্যাটসম্যান তিনিই। এই ওপেনার এখন তাকিয়ে ভারত সফরে।
যদিও সেই সফরের দেরি আছে এখনও মাস ছয়েক। ৫ টেস্ট ম্যাচের সেই সিরিজ শুরু আগামী ২৫ জানুয়ারি। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারতের কন্ডিশন ও উইকেটে বাজবলের আরেকটি কঠিন পরীক্ষা আসছে। তবে এই লম্বা বিরতি শেষে ভারতেও বাজবল জ্বলে উঠবে বলেই বিশ্বাস ক্রলির।
“আগে কখনও ৬ মাসের বিরতি ছিল কি না, মনে করতে পারি না। এই সময়টায় কিছু টি-টোয়েন্টি খেলব এবং আশা করি, সাদা বলে আরও কিছু খেলার সুযোগ পাব। এরপর আবার ফিরে ভারতে আমাদের দলের জন্য অসাধারণ এক সুযোগ যে, সেখানকার কন্ডিশনে আমরা কীভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারি।”
ভারত সফরে সবসময়ই দলগুলির বড় দুর্ভাবনার জায়গা সেখানকার উইকেট। ইংল্যান্ডের জন্য কন্ডিশন হবে পুরোপুরি বিরুদ্ধ, উইকেটও মন্থর ও টার্নিং হওয়ার কথা। এবার চ্যালেঞ্জটি তাদের জন্য আরও কঠিন হবে, কারণ প্রথাগত বড় শহর ও বিখ্যাত ভেন্যুগুলোর কোনোটিতেই রাখা হয়নি কোনো টেস্ট ম্যাচ। তাই ইংল্যান্ডের ধারণাও থাকবে কম। এই সিরিজের ম্যাচগুলি হবে হায়দরাবাদ, বিশাখাপাত্নাম, রাজকোট, রাঁচি ও ধর্মশালায়।
ক্রলি অবশ্য চ্যালেঞ্জটা নিতে মানসিকভাবে তৈরি এখন থেকেই।
“তাদের মাঠগুলো সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নেই আমার। ভারতে কখনও কখনও কিছু উইকেটে সিম ও সুইং করে কিছুটা। তাদের অবিশ্বাস্য সব পেসার আছে এখন। আশা করি, পেস উপযোগী কিছু পিচ থাকবে, যা আমাদেরও হয়তো কিছুটা সহায়তা করবে।”
“তবে যদি স্পিনিং উইকেট হয়, আমার মনে হয়, আমরা স্পিনও ভালো খেলি। উইকেট যেমনই হোক, আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। তবে মাঠগুলো অনেকটাই অচেনা। জানি না, গতবার আহমেদাবাদ ও চেন্নাইয়ে যেমন ছিল (টার্নিং), এবার তেমন হবে কি না।”
উইকেট টার্নিং হলে ব্যাটসম্যান হিসেবেও ক্রলির জন্য হবে বড় পরীক্ষা। অবশ্য তার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল অ্যাশেজও। তার টেকনিক ও কার্যকারিতা নিয়ে ইংলিশ ক্রিকেটেই সংশয় ছিল অনেক। অ্যাশেজের দলে তাকে নেওয়ায় প্রশ্নও কম হয়নি। কিন্তু কোচ ও অধিনায়ক তার ওপর আস্থা রাখেন ভয়ডরহীন মানসিকতার কারণে। সেই ভরসার প্রতিদানও দেন তিনি।
সিরিজে ৫৩.৩৩ গড়ে ৪৮০ রান করেন তিনি। ১৯৯৩ সালে মাইক আথারটনের পর দেশের মাঠে অ্যাশেজে এত রান করতে পারেনি আর কোনো ইংলিশ ওপেনার। দুই দল মিলিয়ে এবার ক্রলির চেয়ে বেশি রান করেন কেবল উসমান খাওয়াজা। তবে রান করার ধরনে পার্থক্যটা স্পষ্ট। খাওয়াজা ৪৯৬ রান করেন ৩৯.২৭ স্ট্রাইক রেটে। ক্রলির সিরিজ স্ট্রাইক রেট সেখানে ৮৮.৭২।
২৫ বছর বয়সী এই ওপেনার বললেন, বাইরের আলোচনা-সমালোচনায় তিনি কান দেননি।
“ওসব কথায় আসলে আমার খুব একটা মনোযোগ ছিল না। আমার ভাবনাজুড়ে কেবল থাকে, কোচ কী ভাবছেন… যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি আমার ওপর আস্থা রাখছেন, সেটিই আমার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান।”