ভালো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি লিটন কুমার দাস, একই পথ অনুসরণ করেনএনামুল হক।
Published : 10 Mar 2025, 06:00 PM
চমৎকার শুরু করে দ্রুতই পঞ্চাশ পেরোলেন লিটন কুমার দাস। কিছু শটে নিজের সেরা সময়ের ছাপ রাখলেন স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান। কিন্তু ইনিংস বেশি দূর টেনে নিতে পারলেন না। তার বিদায়ের পর বড় হলো না গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের সংগ্রহ। রান তাড়ায় সহজ জয় পেল অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সোমবারের আরেক ম্যাচে লিটনের মতো ভালো শুরু করেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি এনামুল হক। তবে সম্মিলিত পারফরম্যান্সে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব পায় প্রথম পরাজয়ের তেতো স্বাদ।
লিটনের জবাবে ইমরান-অমিতের ফিফটি
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে গুলশানকে ৬ উইকেটে হারায় অগ্রণী ব্যাংক। ২২৩ রানের লক্ষ্য ৬ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বাধীন দল।
তিন ম্যাচে অগ্রণী ব্যাংকের এটি দ্বিতীয় জয়। প্রথম ম্যাচ জেতার পর টানা দুটি হারল নবাগত গুলশান।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারায় গুলশান। টানা তিন ম্যাচ রানের দেখা পাননি বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান আজিজুল হাকিম তামিম।
আগের ম্যাচে ইনিংস শুরু করলেও এ দিন তিন নম্বরে নামেন লিটন। খালিদ হাসানের সঙ্গে জুটি বেধে শুরুর চাপ সামাল দেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে দুজন মিলে ৭৮ বলে যোগ করেন ৭১ রান।
দলের একশ হওয়ার আগেই ফেরেন খালিদ। তবে অন্যপ্রান্তে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৫১ বলে ফিফটি করেন লিটন। নাঈম হাসানের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ওয়াইড লং অন দিয়ে ছক্কাটি মারেন তিনি।
ফিফটি ছুঁয়ে তাইবুর রহমানের বলে আরেকটি বাউন্ডারি মারেন লিটন। তবে বাঁহাতি স্পিনারের পরের বলেই টার্ন বুঝতে না পেরে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি। সমাপ্তি ঘটে সম্ভাবনাময় ইনিংসের।
পরে হাবিবুর শেখ, মইনুল ইসলামদের ছোট ছোট ইনিংসে দুইশ পেরোয় গুলশান।
রান তাড়ায় শুরুতে সাদমান ইসলাম ও ইমরুলের উইকেট হারায় অগ্রণী ব্যাংক। দলের বিপদ আর বাড়তে দেননি ইমরানউজ্জামান ও অমিত হাসান। দুজন মিলে তৃতীয় উইকেটে গড়ে তোলেন ১৩৪ রানের জুটি।
ভুল বোঝাবুঝিতে ইমরানউজ্জামান রান আউট হলে ভাঙে এই জুটি। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৯৮ বলে ৭৫ রান করে ফেরেন কিপার-ব্যাটসম্যান। এরপর অমিতও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৯৪ বলের ইনিংসে ৬৩ রান করেন তিনি।
পরে আর উইকেট পড়তে দেননি মার্শাল আইয়ুব ও তাইবুর রহমান। ৭৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। মার্শাল ৫৪ বলে ৪০ ও তাইবুর ৩৯ বলে করেন ৩৫ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
গুলশান ক্রিকেট ক্লাব: ৪৯ ওভারে ২২২ (জাওয়াদ ৩, আজিজুল ১২, লিটন ৬০, খালিদ ২৩, ইফতেখার ১৮, হাবিবুর ২১, মইনুল ২২, নিহাদউজজামান ১৯*, আসাদুজ্জামান ০, রনি ৭; রবিউল ৮-১-৩৭-২, শুভাগত ১০-০-৪০-০, রুয়েল ৭-০-৩৭-২, নাঈম ৭-০-৪৩-০, ৯-০-২৮-৩, তাইবুর ৮-০-৩২-১)
অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪৯ ওভারে ২২৬/৪ (সাদমান ০, ইমরানউজ্জামান ৭৫, ইমরুল ৩, অমিত ৬৩, মার্শাল ৪০*, তাইবুর ৩৫*; মেহেদি ৯-১-৪০-২, আসাদুজ্জামান ১০-১-৪৫-০, নিহাদউজজামান ১০-০-৪১-০, মইনুল ৩-১-১৪-০, রনি ৩-০-১৪-০, ইফতেখার ৩-০-১৩-০, আজিজুল ১০-০-৫২-১, খালিদ ১-০-৫-০)
ফল: অগ্রণী ব্যাংক ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ইমরানউজ্জামান
ধানমন্ডিকে গুঁড়িয়ে গাজী গ্রুপের বড় জয়
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে গাজী গ্রুপের বিপক্ষে পাত্তাই পায়নি ধানমন্ডি। ২৯৮ রানের পুঁজি নিয়ে ১৭৫ রানের বড় জয় পায় গাজী গ্রুপ। ব্যাটিং ব্যর্থতায় মাত্র ১২৩ রানে গুটিয়ে যায় ধানমন্ডি।
তিন ম্যাচে ধানমন্ডির এটি প্রথম পরাজয়। চলতি লিগে আর কোনো দল অপরাজিত রইল না। পরাজয়ে যাত্রা শুরু করে পরপর দুই ম্যাচ জিতল গাজী গ্রুপ।
দলকে বড় এনে দেওয়ার কারিগর এনামুল হক ও শামসুর রহমান। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানই অবশ্য ফিফটি পেরিয়ে ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সাদিকুর রহমানের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে ৮৩ রান যোগ করেন এনামুল। ৩০ রান করে ফেরেন সাদিকুর।
চেনা ব্যাটিংয়েই ৪ চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা মেরে ৬৩ বলে ফিফটি করেন এনামুল। পরে যেন খোলসে ঢুকে যান তিনি। পরের ৩১ বলে মাত্র একটি বাউন্ডারি মারতে পারেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ড্রেসিং রুমে ফেরার আগে ৯৪ বলে তিনি করেন ৬৯ রান।
চতুর্থ উইকেটে আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের সঙ্গে ৭৪ রানের জুটি গড়েন শামসুর। ৭২ বলে ৬০ রান করে সানজামুল ইসলামের বলে বোল্ড হন শামসুর। আমিনুলের ব্যাট থেকে ৬ চার ও ১ ছক্কায় আসে ৩০ বলে ৪৪ রান।
শেষ দিকে ঝড় তোলেন তোফায়েল আহমেদ ও আব্দুল গাফফার সাকলাইন। সপ্তম উইকেটে ২৮ বলে ৬৯ রান যোগ করেন তারা। ৩ ছক্কায় ২০ বলে ৩৩ রান করেন তোফায়েল। সাকলাইন ২ চার ও ৩ ছক্কায় ১৭ বলে করেন ৩৩ রান।
বাঁহাতি স্পিনে ৪ উইকেট নেন সানজামুল ইসলাম।
বড় লক্ষ্যে একবারের জন্যও জয়ের আশা জাগাতে পারেনি ধানমন্ডি। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল একশর আগেই গুটিয়ে যাবে তারা। মইন খানের ২৪ রানের সৌজন্যে কোনোমতে একশ পেরোয় তারা।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান।
ধানমন্ডির লেজ মুড়িয়ে ৩ উইকেট নেন তরুণ লেগ স্পিনার ওয়াসি সিদ্দিকি। ব্যাটিংয়ে ক্যামিও ইনিংসের পর বল হাতে ২ উইকেট নেন সাকলাইন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৫০ ওভারে ২৯৮/৭ (সাদিকুর ৩০, এনামুল ৬৯, শামসুর ৬০, সালমান ৫, আমিনুল ৪৪, তোফায়েল ৩৩*, পারভেজ ০, সাকলাইন ৩৩, হাশিম ৭*; মুরাদ ১০-১-৩১-০, কামরুল ১০-১-৭৬-২, মইন ১০-০-৫৩-১, মারুফ ৯-০-৬৩-০, সানজামুল ১০-০-৫১-৪, ফজলে মাহমুদ ১-০-১২-০)
ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব: ৩৪.২ ওভারে ১২৩ (আশিকুর ০, হাবিবুর ৮, ফজলে মাহমুদ ১০, ইয়াসির ১৮, সোহান ৩৩, সানজামুল ৮, মইন ২৪, জিয়াউর ৭, কামরুল ০, মুরাদ ১২, মারুফ ০*; সাকলাইন ৪-১-৮-২, হাশিম ৭-১-২৪-১, পারভেজ ৪-০-২৯-০, তোফায়েল ২-০-৫-১, আরিদুল ১০-১-২৭-২, ওয়াসি ৭.২-০-২৯-৩)
ফল: ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব ১৭৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আব্দুল গাফফার সাকলাইন