দলগুলোতে একই ক্রিকেটাররা টানা খেলতে থাকলে সমর্থকগোষ্ঠী বড় হতে থাকবে বলে মনে করেন তামিম ইকবাল।
Published : 08 Feb 2025, 10:59 AM
“(মাহমুদউল্লাহ) রিয়াদ জিতলেই হবে। আর কিছু দরকার নেই”- বিপিএল ফাইনালের আগে ফরচুন বরিশালের জয় কামনা করে বলছিলেন ষাট ছুঁইছুঁই ক্রিকেট অনুরাগী হাসান আলি। ম্যাচ শুরুর আগে চিটাগং কিংসের জার্সি পরিহিত একদল সমর্থককে বলতে শোনা যায়, “শামীমের (হোসেন) জন্য আমরা চিটাগংয়ের সমর্থনে।”
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার বিপিএল ফাইনালের এই টুকরো টুকরো ছবিগুলোই বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সাধারণ চিত্র। নিজ শহর আর প্রিয় ক্রিকেটার, এসব ঘিরেই গগে ওঠে দর্শকদের সমর্থন। ব্যতিক্রম শুধু বিপিএল। এই লিগে একাদশ আসর হয়ে গেলেও তেমন কোনো শক্ত সমর্থকগোষ্ঠী নেই। সেটি গড়ে তুলতেই একটি পরামর্শ দিলেন টানা দুই বারের চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
বিপিএলে বড় সমর্থকগোষ্ঠী গড়ে না ওঠার মূল কারণ, ফ্র্যাঞ্চাইজি ও ক্রিকেটারের ধারাবাহিকতা না থাকা। ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা ও নামে বদল আসে তো নিয়মিতই। ক্রিকেটারদের কোনো এক দলে লম্বা সময় থিতু হওয়ার সুযোগও রাখা হয়নি। তামিমের চাওয়া, প্রতি আসরে প্রতি দলে ৪ থেকে ৬ জন ক্রিকেটার ধরে রাখার নিয়ম যেন রাখা হয় বিপিএলে।
তামিম টানা দুই বছর যে দলকে চ্যাম্পিয়ন করালেন, কেবল সেই দলেরই অনুগত একটা সমর্থকগোষ্ঠী গড়ে উঠতে শুরু করেছে। গতবারের মতো এই আসরেও বরিশালে খেলেছেন তামিম, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, তাইজুল ইসলামরা। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়ের মতো তারকা ক্রিকেটারা।
বিপিএলের প্রতিটি ম্যাচে এই দলটির সমর্থন ছিল নজরকাড়া। ফাইনাল ম্যাচের গ্যালারিতে উপস্থিত ২৪ হাজার দর্শকের মধ্যে বিশ হাজারের বেশি হয়তো ছিল বরিশালের সমর্থক। লাল জার্সির সমুদ্রেই ফাইনাল জিতে আবারও উল্লাসে মেতেছেন তামিম, মুশফিকরা। কিন্তু বিপিএলের পরের আসরে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি এই দল থাকবে কি না, সেই নিশ্চয়তা নেই।
২০২২ সালে তিন আসরের জন্য বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজিকে দলের মালিকানা দিয়েছিল বিসিবি। যা শেষ হয়েছে এবার। সামনের আসর থেকে পাঁচ বছরের জন্য মালিকানা দেওয়ার কথা ভাবছে বিসিবি। সেক্ষেত্রে পুরোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিরা চাইলে নিজেদের দল ধরে রাখতে পারবেন অথবা যোগ দিতে পারবে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি।
ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক যারাই হোক, ক্রিকেটার পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক। গত দুই আসরে নিয়ম ছিল আগের দল থেকে সর্বোচ্চ তিনজন করে ক্রিকেটারকে ধরে রাখতে পারবে দলগুলো। সেক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন দলের অনেককে হয়তো ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে টানা দুই শিরোপা জেতা বরিশাল।
ফাইনাল ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে ধরে রাখা ক্রিকেটারের নিয়মে পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে রাখলেন তামিম।
“এত কষ্ট করে একটা ফ্যানবেইজ তৈরি করেছি আমরা। প্রথম বিপিএল থেকে সবাই চায় যে, সব ফ্র্যাঞ্চাইজির একটা ফ্যানবেইজ হোক। আইপিএলের উদাহরণ দেই আমরা। সেখানে নিয়ম কখনও পরিবর্তন হয় না। তাই মূল ক্রিকেটাররা একই দলে থেকে যায়। (বিপিএলে) তিন বছরের একটা চক্র শেষ হয়েছে। পাঁচ বছরের চক্র আসবে। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে তাদের মূল ক্রিকেটারদের ধরে রাখার একটা সুযোগ দেওয়া উচিত।”
“আপনি যদি মাত্র একজনকে ধরে রাখেন তাহলে তো এত দিন ধরে যে (ফ্যানবেজ) গড়েছেন, সব শেষ হয়ে যাবে। তাই যদি ৫টা, ৬টা বা ৪টা... কমপক্ষে ৪ জন ধরে রাখার সুযোগ যদি দেয়, তাহলে ফ্যানবেইজ যে তৈরি হয়েছে, তা আরও বড় হবে। ক্রিকেটাররাও ওই ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। তাই আমি আশা করি, যখনই পরের আসরের নিয়মকানুন করবেন উনারা (বিসিবি), এই জিনিসটা যেন মাথায় রাখেন।”
বিসিবির পক্ষ থেকে তিন বছরের মালিকানা দেওয়া হলেও এই সময়েও নানা কারণে বেশ কয়েকটি দলের মালিকানা বদলে গেছে। শুধুমাত্র বরিশাল, খুলনা টাইগার্স ও রংপুর রাইডার্স ধারাবাহিকতা দেখিয়েছে। এই তিন দলই এবার প্লে-অফ খেলেছে।
মালিকানা বদলের কারণে ক্রিকেটার ধরে রাখা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টির বিষয়টি ভাবনায় রেখে সম্ভাব্য সমাধানের পথও বাতলে দেন তামিম।
“এখন যেটা সমস্যা হয়, মালিকপক্ষ বদলে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চিটাগং এবার এক মালিক, পরের বছর আরেক মালিক। কিন্তু এটাতেও দল তো একই থাকছে, ক্রিকেটাররা একই থাকছে। তাই মালিক পরিবর্তন হোক বা না হোক, অন্য কেউ আসুক বা না আসুক, কেউ যদি চিটাগংয়ের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে, তাহলে তাকে একই স্কোয়াডে ধরে রাখার অনুমতিটা রাখা উচিত।”
“তাদের যদি ইচ্ছে হয় যে ধরে রাখবে না, সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। শুধু মালিক বদলে যাওয়ার কারণে অন্য দলগুলো ভুগবে, এটা ঠিক নয়। তাই আমার মনে হয়, অন্তত যদি ৬ জন ক্রিকেটারকে ধরে রাখার সুযোগ যদি দেয়, তাহলে এই ধরনের ফ্যানবেজ, আপনারা যা দেখছেন, এটা আরও বড় হবে।”