দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা সিরিজ
প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার সাড়ে তিনশ রানের জবাব ভালোই দিচ্ছে শ্রীলঙ্কা।
Published : 06 Dec 2024, 10:07 PM
দক্ষিণ আফ্রিকার অষ্টম উইকেট পড়ল যখন, কাইল ভেরেইনার রান তখন পঞ্চাশও হয়নি। ১০ ও ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানকে নিয়ে লড়াইয়ে চমৎকার সেঞ্চুরিতে দলকে সাড়ে তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহ এনে দিলেন তিনি। জবাবে সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে উইকেট ছুড়ে এলেন পাথুম নিসাঙ্কা। দারুণ এক মাইলফলক স্পর্শ করলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস।
গেবেখায় দারুণ ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে শুক্রবার আলো ছড়ান দুই দলের ব্যাটসম্যানরাই। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৩ উইকেটে ২৪২ রান। ৭ উইকেট হাতে রেখে সফরকারীরা পিছিয়ে আছে কেবল ১১৬ রানে।
শেষ ২ উইকেটে ৮৯ রান যোগ করে দক্ষিণ আফ্রিকা এদিন অল আউট হয় ৩৫৮ রানে। ১২ চার ও ৩ ছক্কায় ১৩৩ বলে ১০৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ভেরেইনা।
ক্যারিয়ারের প্রথম ১৮ টেস্টে তার সেঞ্চুরি ছিল স্রেফ একটি। সেখানে পরের চার টেস্টেই করে ফেললেন দুটি। গত অক্টোবরে মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছিলেন ১১৪ রানের ইনিংস। ওই ম্যাচে, এমনকি ২০২২ সালে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিও করেছিলেন তিনি লেজের ব্যাটসম্যানের নিয়ে।
সেঞ্চুরির সুযোগ ছিল নিসাঙ্কার সামনেও। ৮৯ রান করে আউট হয়ে যান শ্রীলঙ্কান ওপেনার। তার ১৫৭ বলের ইনিংসটি গড়া ১১ চার ও একটি ছক্কায়।
শ্রীলঙ্কার তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এই সংস্করণে আট হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়ে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন ম্যাথিউস।
৭ উইকেটে ২৬৯ রান নিয়ে এদিন খেলা শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকা। ওই রানেই দিনের শুরুতে তারা হারায় কেশভ মহারাজকে। ভেরেইনার রান তখন আগের দিনের ৪৮।
নবম উইকেটে তিনি ৫৬ রানের জুটি গড়েন কাগিসো রাবাদাকে নিয়ে। ২৩ রান করে রাবাদা ফেরার সময়ও সেঞ্চুরি থেকে ভেরেইনা ১৯ রান দূরে। সেই পথ তিনি পাড়ি দেন ড্যান প্যাটারসনকে সঙ্গে নিয়ে।
৮৮ থেকে আসিথা ফার্নান্দোকে ছক্কায় উড়িয়ে নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে যান এই কিপার- ব্যাটসম্যান। ওই ওভারেই আরেকটি ছক্কায় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১৩২ বলে। পঞ্চাশ থেকে একশতে যেতে তার লাগে কেবল ৩৭ বল।
দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসেবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সেঞ্চুরি করলেন তিনি। ২০১৭ সালে সেঞ্চুরি করেছিলেন কুইন্টন ডি কক।
পরের ওভারে পরপর দুই চারের পর প্যাটারসনের বিদায়ে ভাঙে ১৭ বলে ৩৩ রানের দশম উইকেট জুটি, শেষ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।
৭৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার সফলতম বোলার পেসার লাহিরু কুমারা।
জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে নিসাঙ্কা ও দিমুথ কারুনারাত্নে যোগ করেন ৪১ রান। রাবাদার বাড়তি বাউন্সে কিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাবেক অধিনায়ক কারুনারাত্নে (৪৩ বলে ২০)।
২২ রানে জীবন পান নিসাঙ্কা, রাবাদার বলে স্লিপে দুই-তিনবারের চেষ্টায় ক্যাচ নিতে পারেননি ডেভিড বেডিংহ্যাম।
সুযোগ কাজে লাগিয়ে দিনেশ চান্দিমালের সঙ্গে শতরানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন নিসাঙ্কা। ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি ১০৭ বলে।
চান্দিমালকে ফিরিয়ে ১০৯ রানের জুটি ভাঙেন প্যাটারসন। অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন ৯৭ বলে ৪৪ রান করা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দ্বিতীয় উইকেটে শ্রীলঙ্কার প্রথম শতরানের জুটি এটি।
ম্যাথিউসকে সঙ্গে নিয়ে নিসাঙ্কা ছুটছিলেন সেঞ্চুরির পথে। দারুণ খেলতে থাকা ব্যাটসম্যান হঠাৎই হারিয়ে ফেলেন ধৈর্য। স্পিনার মহারাজকে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করেন তিনি, খানিকটা নিচু হয়ে যাওয়া বল ছোবল দেয় অফ স্টাম্পে।
মহারাজকে চার মেরেই ৮ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন ম্যাথিউস। ৭ হাজার ৯৬৬ রান নিয়ে এই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন এই অলরাউন্ডার।
তার আগে শ্রীলঙ্কার হয়ে আট হাজার বা এর বেশি রান করেছেন কেবল কুমার সাঙ্গাকারা (১২ হাজার ৪০০) ও মাহেলা জায়াওয়ার্দেনে (১১ হাজার ৮১৪)।
দিন শেষে ৭১ বলে ৪০ রানে অপরাজিত আছেন ম্যাথিউস। ৩৮ বলে ৩০ রানে খেলছেন কামিন্দু মেন্ডিস।
তৃতীয় সেশনে ২ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রান তোলে শ্রীলঙ্কা, ওভারপ্রতি রান আসে চারের বেশি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৬৯/৭) ১০৩.৪ ওভারে ৩৫৮ (ভেরেইনা ১০৫*, মহারাজ ০, রাবাদা ২৩, প্যাটারসন ৯; ভিশ্ব ২২-৬-৬৫-২, আসিথা ২৪-২-১০২-৩, কুমারা ১৭.৪-৩-৭৯-৪, জায়াসুরিয়া ৩১-৪-৮৪-১, ধানাঞ্জয়া ৯-১-২৬-০)
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৬৭ ওভারে ২৪২/৩ (নিসাঙ্কা ৮৯, কারুনারাত্নে ২০, চান্দিমাল ৪৪, ম্যাথিউস ৪০*, কামিন্দু ৩০*; রাবাদা ১৫-৫-৪০-১, ইয়ানসেন ১৮-২-৭৫-০, প্যাটারসন ১৫-৩-৫১-১, মহারাজ ১৫-১-৪৬-১, মার্করাম ৪-০-১৫-০)