এনসিএল টি-টোয়েন্টি
অভাবনীয় ব্যাটিংয়ে ৫ বলে ২৫ রানের সমীকরণ মিলিয়ে বরিশালকে রোমাঞ্চকর এক জয় এনে দিলেন সালমান হোসেন।
Published : 15 Dec 2024, 06:35 PM
জয়ের জন্য বরিশালের প্রয়োজন ৬ বলে ২৫ রান। বোলিংয়ে ইফরান হোসেন, আগের তিন ওভারে যিনি দিয়েছেন মাত্র ১৯ রান। শেষের শুরুটাও ভালো করলেন তিনি, প্রথম বলে রান নিতে পারলেন না সালমান হোসেন। চট্টগ্রামের জয় ছাড়া অন্য কিছু তখন ভাবনার অতীত। কিন্তু সালমান ভাবলেন সেই ভিন্ন কিছুই। অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে অকল্পনীয় কিছুকেই বাস্তব রূপ দিলেন তিনি।
পরের চার বলে তার ব্যাট থেকে এলো তিনটি ছক্কা ও একটি চার। এর মধ্যে একটি আবার 'নো বল।' দুই বলে দরকার তখন মোটে দুই রান। কিন্তু নাটকীয়তা যেন শেষ হওয়ার নয়। ফ্রি হিটে রানই করতে পারলেন না সালমান। তবে শেষ বলের রোমাঞ্চে শেষ পর্যন্ত তিনিই নায়ক।
শেষ ডেলিভারিতে থার্ড ম্যান দিয়ে বল সীমানার দিকে যেতেই হুঙ্কার ছুড়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লেন ২৭ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন অন্য প্রান্তে থাকা মইনুল ইসলাম। ডাগ আউট থেকে ছুটে আসা সতীর্থদের উল্লাসের মধ্যমণি সালমানই।
অথচ ম্যাচের প্রথম ভাগে আলোড়ন ছিল তামিম ইকবালের ৯১ রানের ইনিংস নিয়ে। কিন্তু তাকে আড়াল করে প্রায় হারতে থাকা ম্যাচে বরিশালকে একাই জেতালেন সালমান।
সালমানের বীরত্বের দিনে অন্য ম্যাচে সিলেটকে জিতিয়েছেন জিসান আলম। বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে আসর শুরু করা তরুণ ওপেনার এবার খেলেছেন ৭৩ রানের ইনিংস। সিলেট পেয়েছে নিজেদের প্রথম জয়।
তামিমের ৯১ ছাপিয়ে সালমানের শেষের ঝড়
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শেষের ঝড়ে বরিশালকে ৫ উইকেটের জয় এনে দেন সালমান হোসেন। ১৮৩ রানের লক্ষ্যে ম্যাচের শেষ বলে ম্যাচ জিতে নেয় বরিশাল।
চার ম্যাচে বরিশালের এটি দ্বিতীয় জয়। সমান ম্যাচে চট্টগ্রামের জয়ও দুটি।
শেষ ওভারে রোমাঞ্চকর জয় এনে দেওয়া সালমান ২ চারের সঙ্গে ৪ ছক্কায় খেলেন ২৮ বলে ৫৩ রানের ইনিংস। দলকে জিতিয়ে তিনিই ম্যাচ-সেরা।
সালমানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বিফলে যায় ম্যাচের প্রথমভাগে খেলা তামিম ইকবালের ৯১ রানের ইনিংস। চলতি টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংসে ৭ চারের সঙ্গে ৬টি ছক্কা মারেন অভিজ্ঞ ওপেনার।
টস জিতে ব্যাট করতে নামা চট্টগ্রামকে এগিয়ে নেন মূলত তামিমই। দলের আর কেউ ২৫ রান করতে পারেনি। মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাট থেকে আসে ১৬ বলে ২২ রান।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মইনুল ইসলামের বলে প্রথম ছক্কা মারেন তামিম। এরপর নিয়মিত বাউন্ডারি মেরে ৩৭ বলে তিনি পৌঁছান পঞ্চাশে। পরের ১৭ বল থেকে নেন আরও ৪১ রান। অল্পের জন্য তিন অঙ্ক ছোঁয়া হয়নি টুর্নামেন্টে নিজের সম্ভাব্য শেষ ম্যাচে।
তামিমকে বোল্ড করা মেহেদি হাসান ৪ ওভারে মাত্র ২৫ রানে নেন ৩ উইকেট।
বড় লক্ষ্য উদ্বোধনী জুটিতে ৭২ রান যোগ করেন ইফতেখার হোসেন ও আব্দুল মজিদ। ১৯ রান করতে মজিদ খেলেন ১৯ বল। বাঁহাতি ওপেনার ইফতেখার ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৩৯ বলে করেন ৫৬ রান।
এরপর শামসুল ইসলাম, সোহাগ গাজীরা দ্রুত ফিরলে কঠিন হতে থাকে বরিশালের সমীকরণ। ছয় নম্বরে নেমে মইন খান ৩ চার ও ১ ছক্কায় করেন ১৬ বলে ২৬ রান।
মইনের বিদায় নেওয়ার পর নতুন ব্যাটসম্যান মইনুল যখন সিঙ্গল নিলেন, তখনও ১০ বলে ৩৬ রান লাগে বরিশালের। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এরকম সমীকরণ থেকে ম্যাচ জেতার নজির বিরল। সালমান দেখালেন তেমন কিছুই।
তখনও পর্যন্ত তিনি খেলছিলেন ১৭ বলে ১৬ রান নিয়ে। ১৯তম ওভারে ফাহাদ হোসেনের দুই বলে ডাবলস নিলেন টানা। পরের বলে ছক্কা। শেষ বলে সিঙ্গল নিয়ে ধরে রাখেন স্ট্রাইক। এরপর শেষ ওভারের বীরত্বে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটকে তিনি উপহার দেন অনেক দিন মনে রাখার এক জয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
চট্টগ্রাম: ২০ ওভারে ১৮২/৭ (জয় ২২, তামিম ৯১, শাহাদাত ৩, সাব্বির ২১, ইয়াসির ১২, মুমিনুল ১৩, নাঈম ১, শামিম ৬*; কামরুল ৪-০-৪০-১, রুয়েল ২-০-১৮-০, তানভির ৪-০-৩২-১, মইনুল ১-০-১৫-১, সোহাগ ৪-০-৩৭-০, মইন ১-০-১৩-০, মেহেদি ৪-০-২৫-৩)
বরিশাল: ২০ ওভারে ১৮৫/৫ (ইফতেখার ৫৬, মজিদ ১৯, শামসুল ১২, সালমান ৫৩*, সোহাগ ১২, মইন ২৬, মইনুল ১*; ফাহাদ ৪-০-৩৬-১, ইফরান ৪-০-৪৬-১, নাঈম ৪-০-৩৫-১, শামিম ৪-০-৪১-০, শরিফ ৪-০-২৭-২)
ফল: বরিশাল ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সালমান হোসেন
জিসানের ব্যাটে সিলেটের প্রথম জয়
মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির লেংথ ডেলিভারি ক্রিজ ছেড়ে খেলার চেষ্টায় পরাস্ত জিসান আলম। কিছুটা স্কিড করে ব্যাটের নিচ দিয়ে বল আঘাত করে অফ স্টাম্পে। হতভম্ব হয়ে একবার পিচে, আরেকবার স্টাম্পে তাকান তরুণ ওপেনার।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওই মুহূর্তটুকুই শুধু জিসানের ছিল না। বাকি সময় খুলনার বোলারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে তিনি খেলেন বিধ্বংসী ইনিংস। খুলনাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে সিলেট পায় টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম জয়।
জিসানের ঝড়ো ফিফটিতে ১৪৫ রানের লক্ষ্য ১০ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলে সিলেট। চার ম্যাচে খুলনার এটি তৃতীয় পরাজয়। আপাতত পয়েন্ট টেবিলে সবার নিচে তারা।
ঢাকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি দিয়ে আসর শুরু করা জিসান এবার করেন ৭৩ রান। ৪৮ বলের ইনিংসে ৪ চারের সঙ্গে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬টি ছক্কা।
রান তাড়ায় তৃতীয় ওভারে আল আমিন হোসেনের বলে প্রথম ছক্কা মারেন জিসান। পরের বলে মারেন বাউন্ডারি। এক ওভার পর জিয়াউর রহমানের বলে চারের পর তিনি মারেন দুটি ছক্কা।
দশম ওভারে ভাঙে ৭৮ রানের উদ্বোধনী জুটি। ২৮ বলে ২৪ রান করে ফেরেন তৌফিক খান।
১৩তম ওভারে আল আমিনের বলে ছক্কা মেরে ৩৫ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন জিসান। দুই বল পর মারেন আরেকটি ছক্কা। পরের ওভারে নাহিদুল ইসলামের বল ছক্কায় ওড়ান তিনি। মনে হচ্ছিল দলকে জিতিয়েই ফিরবেন জিসান। মৃত্যুঞ্জয়ের দারুণ ডেলিভারিতে সেটি আর হয়নি।
শেষ দিকে ৩ ছক্কায় ১২ বলে ২৩ রানের ইনিংসে সিলেটের জয় ত্বরান্বিত করেন তোফায়েল আহমেদ।
ম্যাচের প্রথমভাগে হতাশ করেন খুলনার ব্যাটসম্যানরা। সিলেটের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকে তারা। পাঁচ নম্বরে নেমে একপ্রান্ত আগলে রাখেন নুরুল হাসান সোহান। তার শেষের ঝড়ে দেড়শর কাছে যায় খুলনা।
২ চারের সঙ্গে ৩ ছক্কায় ৩৪ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন সোহান।
সিলেটের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন ইবাদত হোসেন চৌধুরি ও নাবিল সামাদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
খুলনা: ২০ ওভারে ১৪৪/৭ (এনামুল ৯, ইমরুল ১৪, আজিজুল ৯, মিঠুন ২০, সোহান ৪৮*, নাহিদুল ৬, জিয়াউর ২১, মেহেদি ৪*; ইবাদত ৪-০-২৮-২, নাবিল ৪-০-১৭-২, জিসান ১-০-১৪-১, খালেদ ৪-০-২৬-১, তোফায়েল ৩-০-৩৫-০, রাব্বি ৪-০-১৬-০)
সিলেট: ১৮.২ ওভারে ১৫০/৪ (তৌফিক ২৪, জিসান ৭৩, পিনাক ৬, অমিত ১১, তোফায়েল ২৩*, রাব্বি ১*; মেহেদি ৪-০-৩০-০, জায়েদ ৪-০-২০-১, আল আমিন ৩-০-৩৫-০, জিয়াউর ১-০-১৮-০, মৃত্যুঞ্জয় ৩.৩-০-২০-১, নাহিদুল ৩-০-২৪-১)
ফল: সিলেট ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: জিসান আলম