বিপিএল
ছক্কা মারতে না পারলেও শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে রোমাঞ্চকর জয়ে চিটাগং কিংসকে বিপিএলের ফাইনালে তোলেন আলিস আল ইসলাম।
Published : 06 Feb 2025, 08:49 AM
পায়ের চোটে যখন মাঠে ছেড়ে বের হলেন আলিস আল ইসলাম, নিজেও হয়তো ভেবেছিলেন, ম্যাচে তার পালা শেষ। কে জানত, দুই বল পরই আবার তাকে নামতে হবে!
তার জায়গায় ব্যাট করতে নেমে শরিফুল ইসলাম প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে আউট হয়ে গেলেন পরের বলেই। চিটাগং কিংসের ডাগআউটে টিভি ক্যামেরা ধরতেই দেখা গেল, তড়িঘড়ি করে প্যাড পরে তৈরি হচ্ছেন আলিস। এরপর কিছুটা খুঁড়িয়ে এগিয়ে গেলেন ক্রিজের দিকে।
দল তখন তাকিয়ে আলিসের ব্যাটে। সেই ব্যাটই দলকে ভাসাল উল্লাসে। শেষ বলে যখন প্রয়োজন চার রান, চমৎকার লফটেড ড্রাইভে কাভার দিয়ে বাউন্ডারি মেরে চিটাগং কিংসকে ফাইনালে পৌঁছে দিলেন আলিস।
যদিও ব্যাটিং তার মূল কাজ নয়। তবে সময় আর প্রয়োজনই তো নায়কের জন্ম দেয়!
আলিস ও আরফাত সানি যেমন দেখালেন। দুজনই মূলত স্পিনার, ব্যাটের হাত খুব ভালো বলে পরিচিতি ছিল না কারও। কিন্তু এই দুজনের বীরোচিত ব্যাটিংয়ে বিপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে শেষ বলে খুলনা টাইগার্সকে হারায় চিটাগং। ২০১৩ সালের আসরের ফাইনাল খেলা ফ্র্যাঞ্চাইজি এক যুগ পর বিপিএলে ফিরেই আবার পৌঁছে গেল শেষের মঞ্চে।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার এই দুজন যখন ক্রিজে জুটি বাঁধেন, তিন ওভারে তখন ৩৪ রান প্রয়োজন চিটাগংয়ের। দুজনর লড়াইয়ে সেই সমীকরণ নেমে আসে শেষ ওভারে ১৫ রানে।
মুশফিক হাসানে প্রথম বলে বাউন্ডারি মারেন সানি। পরের দুই বল থেকে আসে আরও তিন রান। তৃতীয় বলেই সিঙ্গল নেওয়ার সময় পায়ে চোট পান আলিস। মাঠ ছেড়ে যেতে হয় তাকে।
ক্রিজে গিয়ে প্রথম বল ব্যাটের কানায় লেগে চার পান শরিফুল। তবে পরের বলেই আউট হয়ে যান তিনি। চোটাক্রান্ত পায়েই আবার নামতে হয় আলিসকে। শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে তিনিই শেষের নায়ক।
সব মিলিয়ে ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রানে ১ উইকেট ও ৭ বলে ১৭ রানের ম্যাচ জেতানো ক্যামিও খেলে আলিসই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
শেষের ওই উথালপাথাল সময়ে উইকেটে সঙ্গী সানির সঙ্গে কথোপকথনের গল্প ম্যাচের পর শোনালেন আলিস।
"রান নিতে গিয়ে যখন চোটে পড়লাম, আমি যেহেতু দৌড়াতে পারব না, সানি ভাই বললেন যে, 'যদি দৌড়াতে না পারো, তাহলে বাইরে যাওয়াই ভালো হবে।' ওই সময় তিন বলে ৮ রান প্রয়োজন ছিল। তাই দ্রুত রান নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রথমে বললাম, 'আমি চেষ্টা করি।' সানি ভাই বললেন, 'দরকার নেই। কপালে থাকলে হবে। শরিফুলও মারতে পারবে।' শরিফুল প্রথম বলেই চার মারল। তখন আমাদের মাঝে বিশ্বাস ছিল যে, এই ম্যাচ আমাদের পক্ষে আছে।"
"শেষ বলে আমি আবার যখন ফিরে এলাম, সানি ভাইকে বলছিলাম, 'ভাই আসলেই দেখেন, কপালে যদি থাকে ছয় মেরে দেব।' সানি ভাই বলছিলেন যে, ছয় দরকার নেই, তুই চারই মার (হাসি)।"
ম্যাচে ১৬৪ রানের লক্ষ্যে একপর্যায়ে মাত্র ২ উইকেটে ১০৫ রান করে ফেলে চিটাগং। এরপর নামে ধস। মাত্র ১২ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় তারা। কিছুক্ষণ পর সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন মোহাম্মদ মিঠুন।
তখনও জয়ের জন্য ১৮ বলে প্রয়োজন ৩৪ রান। অষ্টম উইকেটে জুটি বাঁধেন আলিস ও সানি। অষ্টাদশ ওভারে জেসন হোল্ডারের বলে ছক্কার পর চার মেরে দেন আলিস। সমীকরণ নেমে আসে ১২ বলে ২১ রানে। দারুণ বোলিংয়ে হাসান মাহমুদ দেন মাত্র ৬ রান।
পরে সানি, শরিফুল ও আলিসের কাছে একটি করে বাউন্ডারি হজম করে শেষ ওভারে ১৫ রান আটকাতে পারেননি মুশফিক। দুই দফায় জুটি বেঁধে ১৬ বলে ৩০ রান যোগ করেন আলিস ও সানি।
আলিস বললেন, জুটির শুরু থেকেই জয়ের বিশ্বাস ছিল তাদের।
"না (মনে হয়নি জিততে কষ্ট হবে)…। আমি আর সানি ভাই যখন ব্যাটিং করছিলাম, সানি ভাই আমাকে শুধু এই কথাটা বলছিলেন যে, 'আলিস বিশ্বাস রাখ। তোর ব্যাটিং আমি দেখেছি। তুই পারবি।"
"আমিও অনেক দিন যাবত চেষ্টা করছিলাম ব্যাটসম্যান হওয়ার বা ব্যাটিং করার। কিন্তু হচ্ছিল না কখনও। আমি সেন্টারে (উইকেটে) গিয়ে পারছিলাম না। সিলি সিলি আউট হয়ে যাচ্ছিলাম। সানি ভাই বলছিলেন যে, 'বিশ্বাস রাখ। ক্রিকেট যে কোনো কিছুর খেলা। যে কোনো কিছু হতে পারে।"
সেই বিশ্বাসের মন্ত্রেই ফাইনাল নিশ্চিত করে চিটাগং। শেষ বলে বাউন্ডারির পর আলিস যখন সতীর্থদের আলিঙ্গনে, তখনও পায়ের চোটে ঠিকমতো হাঁটতে পারছেন না তিনি। চোখে তার তখন অশ্রু। এই ব্যথা, এমন কান্না বড্ড সুখের!