ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, “ছাত্রলীগ মাঠে থাকবে এবং শিবিরের কোনো ধরনের কার্যকলাপ ক্যাম্পাসে হতে দেবে না।”
Published : 13 Mar 2024, 10:49 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের আবাসিক ভবন বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে এক আলোচনা সভা ছাত্রলীগের বাধায় পণ্ড হয়েছে। এ সময় অংশগ্রহণকারীদেরকে পেটানোর ভিডিও ধরা পড়েছে সিসিটিভি ক্যামেরায়।
ছাত্রলীগের একজন নেতা বলেছেন, ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা কৌশলে সেখানে সভা করতে চেয়েছিলেন। তারা তা প্রতিহত করেছেন।
বুধবার যোহরের নামাজের পর বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম সুজনের নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের পাঁচ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তারা হলেন, রেজওয়ান আহমেদ রিফাত, শাহিনুর আলম রাসেল, সাকিব তূর্য, ফাহিম দস্তগীর ও রাফিদ হাসান সাফওয়ান। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
‘আইন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে ‘প্রোডাক্টিভ রামাদান’ শীর্ষক সেই আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, সেমিনার শুরু করার পর টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সভাপতি সিরাজুল হক ও শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুজন তাদেরকে বাধা দেন। সেখান চলে আসার সময় সুজনসহ একদল ছাত্রলীগ কর্মী তাদের উপর হামলা করেন।
হামলাকারীরা মোবাইল ও মানিব্যাগও নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা।
আহত রেজোয়ান আহমেদ রিফাত বলেন, “আমি বঙ্গবন্ধু টাওয়ারে সাবলেট থাকি, ক্লাস শেষে মসজিদে নামাজ শেষে আলোচনা হচ্ছে দেখে বসি। পরে কল্যাণ সমিতির সভাপতি এসে প্রশাসনের নিষেধ আছে বলে জানায়।
“বের হয়ে যাওয়ার সময় বাইকে করে ২০-২৫ এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বলার পরও তারা থামেনি।”
হামলার একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়। এতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পেটাচ্ছে। একজন দৌড়ে পালাতে চাইলে তাকে ধরে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারা হয়।
যারা পিটাচ্ছিলেন, তাদের মধ্যে সুজনকে শনাক্ত করা যায়।
এ বিষয়ে জানতে সুজনকে কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সভাপতি সিরাজুল হক বলেন, সকালে তাকে ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাছির হোসেনকে প্রক্টর অফিসে ডাকা হয়। সেখানে প্রোগ্রামটির ব্যানার দেখিয়ে এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে বলা হয়। তাই তিনি শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম করতে নিষেধ করে অন্যত্র প্রোগ্রাম করতে বলতে যান। পরে কারা হামলা চালিয়েছে তিনি জানেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারীদের ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তার অনুসারীদেরও ফেসবুকে সরব দেখা যায়।
তার ভাষ্য, “আহতরা জামায়াত-শিবিরের কর্মী, তাই স্থানীয়রাই তাদেরকে প্রতিহত করেছে।”
ছাত্রলীগ মাঠে থাকবে এবং শিবিরের কোনো ধরনের কার্যকলাপ ক্যাম্পাসে হতে দেবে না বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
জানতে চাইলে তানভীর হাসান সৈকত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত কয়েকদিন থেকে ক্যাম্পাসে নামে বেনামে শিবির কার্যক্রম চালিয়েছে। আজকে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ মাঠে থাকবে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে হলেও শিবিরের কার্যক্রম প্রতিহত করবে।”
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হামলার ঘটনাটি আমরা শুনেছি। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে আমরা নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেব।”
প্রতিবাদ
এই ঘটনার প্রতিবাদে বিকেলে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করেছেন আইন অনুষদের একদল শিক্ষার্থী।
সেখানে আইন বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী সুলাইমান বলেন, “আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদেরকে বহিরাগত বলা হয়েছে। নিজের ক্যাম্পাসে নিজেরাই আমরা বহিরাগত। কোনো রাজনৈতিক পরিচয় না থাকার পরেও আমরা হামলার শিকার। এর দায় কে নেবে? আমরা একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই।”
এ ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এদেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কিংবা যেকোনো সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি পালনের পূর্ণ অধিকার রাখে এবং বাংলাদেশের সংবিধান তার নিশ্চয়তা প্রদান করেছে।
“কিন্তু ‘বাকশালি স্বৈরাচার’ শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনায় ছাত্রলীগ প্রগতিশীলতার একক ইজারাদার সেজে সকল বিপরীত মতামতকে দমন করতে চায়।”