“স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীরা কীভাবে এদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছে, সেটি জানতে হবে,” বলেন তিনি।
Published : 27 May 2024, 10:40 PM
একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছে, তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য বিস্তৃত ডেটাবেজ প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
তিনি বলেছেন, “একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন কোন অঞ্চলে কী মাত্রায় গণহত্যা হয়েছে, সেই নির্মম সত্যকে বের করে আনা। সারাদেশে জরিপ চালিয়ে গণহত্যার স্থান, বধ্যভূমি, গণকবর, নির্যাতন কেন্দ্র চিহ্নিত করে একটি বিস্তৃত ডেটাবেজ তৈরি করতে হবে।"
সোমবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়ার আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তব্য রাখছিলেন ওবায়দুল হাসান।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমরা খুলনার চুকনগর, গল্লামারী বধ্যভূমির কথা শুনেছি। কিন্তু আজও আমাদের দেশে অসংখ্য বধ্যভূমি অনাবিষ্কৃত। আমার নিজ জেলা নেত্রকোণায় রয়েছে ১৬টি বধ্যভূমি, যার প্রতিটিতে একাধিকবার হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল পাক হানাদার বাহিনী। নেত্রকোণার মতো এই ছোট জেলায় যদি এই চিত্র হয়, তাহলে সারা বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে দেখুন।
“আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটা শক্তিশালী ডকুমেন্টেশন থাকা অত্যন্ত জরুরি। সেজন্য প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে জেনোসাইড স্টাডিজকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাহলেই তরুণদের আগ্রহ সৃষ্টি হবে৷ তারা এ বিষয়ে গবেষণা করতে এগিয়ে আসবে।"
সম্মিলিত প্রয়াস থাকলে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় সম্ভব মন্তব্য করে ওবায়দুল হাসান বলেন, “মাত্র ৯ মাসে ৩০ লক্ষ শহীদ হওয়ার নজির সারা পৃথিবীতে নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চার বছরে ৬০ লক্ষ মারা গেছে। মুক্তিযুদ্ধে দৈনিক গড়ে ১১ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আধুনিক ইতিহাসে এটা সর্বোচ্চ রেকর্ড। ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের এমন কোনো ধারা নেই যা পাকিস্তানি বাহিনী সংগঠিত করে নাই। অথচ স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও আমাদের গণহত্যার স্বীকৃতির দাবি জানাতে হচ্ছে।
“আমরা কেন এত পিছিয়ে পড়লাম, সেটির কারণ খুঁজে বের করতে হবে। স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীরা কীভাবে এদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছে, সেটি জানতে হবে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। এখনো সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।"
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, “আমরা ১৯৭১ সালে সংঘটিত গণহত্যার পরিপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত নিয়ে একটি সমৃদ্ধ ডেটাবেজ তৈরির কাজ করছি।
“এই ডেটাবেজ বিশ্ববাসীর কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে, যাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট' অভিযানের নামে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী পরিচালিত নারকীয় গণহত্যা সম্পর্কে সকলে জানতে পারে।”
ব্রিটিশ একাডেমি এ ডেটাবেজ তৈরির প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা করবে বলে জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল) যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন) এবং ইউসিএলের সহযোগী অধ্যাপক ড. বায়েস আহমেদ কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন।