এই ছাত্রীর অভিযোগ আমলে না নিয়ে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম অভিযুক্তের পাশে দাঁড়ান বলে নিহতের মা অভিযোগ করছেন।
Published : 19 Mar 2024, 06:46 PM
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার অভিযোগকে গুরুত্ব না দেওয়ায় প্রক্টর অফিসকে জবাবদিহি করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম।
তিনি বলেছেন, “অবন্তি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রক্টর দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করে। দপ্তরের কে সেটা গুরুত্ব দিয়েছে, কে দেয়নি- তার সবকিছু তদন্ত কমিটি বের করবে।
“কেন তার অভিযোগকে অবহেলা করা হলো, তারও জবাব দিতে হবে। আমি শুধু আমার শিক্ষার্থীদের কাছে মাফ চাই, আর কারো কাছে মাফ চাই না।”
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে আইন বিভাগ আয়োজিত অবন্তিকার স্মরণসভায় তিনি এ কথা বলেন।
গত ১৫ মার্চ রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা শহরের বাগিচাগাঁও ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন এলাকার বাসায় আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। এর আগে নিজের ফেইসবুক আইডিতে তার এমন মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন দুইজনকে। তারা হলেন-সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকী আম্মান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।
অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনমের ভাষ্য, আম্মান নানাভাবে হেনস্তা করতে থাকলে অবন্তিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের কাছে নালিশ করেছিলেন।
“কিন্তু সহকারী প্রক্টর এর বিচার করেননি, উল্টো আমার মেয়েকে ডেকে নিয়ে বাজে কথা বলেন। আম্মানের পক্ষ নেন। এতে আম্মান আরও বেপরোয়া হয়ে পড়ে। আপত্তিকর মন্তব্য করত, হুমকি দিত। এসব ঘটনার বিচার চেয়ে না পেয়ে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।”
ঘটনার পরদিন রায়হান সিদ্দিকী আম্মানকে বহিষ্কার ও দ্বীন ইসলামকে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের পদ থেকে দ্বীনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
উপাচার্য সাদেকা হালিম বলেন, “অনেকেই আমাকে বলেছে, এত তাড়াতাড়ি আপনি কেন সাময়িক বহিষ্কার করলেন? কারণ সাময়িক বহিষ্কার না করলে তদন্ত সঠিক পথে আগায় না। তখন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল, তাই করেছি।
“…একটি তদন্ত একদিনে হয় না। তদন্তের খুঁটিনাটি উঠে আসবে এই তদন্তে। আইন বিভাগের তার সহপাঠীদেরও ডাকা হবে। যারা তাকে হলে দেখেছে, মেসে দেখেছে- তাদের সবার সাক্ষ্য নেওয়া হবে।”
অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে শনিবার পাঁচ সদস্যের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেই কমিটি যাতে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয় সেদিকে নজর রাখবেন বলে জানান অধ্যাপক সাদেকা।
শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের অভিযোগ জানাতে পারে, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় অবহেলায় পড়ে থাকা অভিযোগ বক্সগুলোকে সংস্কার করতে ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে নির্দেশ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন উপাচার্য।
তিনি বলেন, “আমি প্রতিটি বাক্সের তালা খুলে দেখব, কী কী অভিযোগ আসছে। অভিযোগ বাক্সে শুধু নারী শিক্ষার্থী নয়, সবাই অভিযোগ দিতে পারবেন।”
অবন্তিকার মৃত্যু সংবাদমাধ্যমে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে যাতে তাকে ‘মানসিক রোগী’ হিসেবে বিবেচনা করা না হয়, সেই অনুরোধ জানিয়ে অধ্যাপক সাদেকা বলেন, “নারীর আত্মহননের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সমাজ। আমি গত ৩০ বছর যাবত আমাকে বুলিং করা সহ্য করেছি, কিন্তু অবন্তি সেসব বুলিং নিতে পারেনি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষক গত ৩০ নভেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান।
তিনি বলেন, “যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেল গঠনের সময় আমি সহযোগী অধ্যাপক ছিলাম। আমিও একজন সদস্য। আমি প্রভাষক থেকেই কিন্তু নারীদের জন্য কাজ করি। অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়েই আমরা কাজ করছি।”
অবন্তিকার মৃত্যু নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন, তাদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, “চলমান এই আন্দোলনকে ঘিরে কাউকে রাজনৈতিক মোড় নিতে দেব না। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে।”
অবন্তিকার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে অধ্যাপক সাদেকা বলেন, “তার মাকে আমি কী বলব, আমি এখনও উনার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে খুব শিগগিরই আমি তার সাথে দেখা করব, তিনি আমার একজন বোন।”
অবন্তিকার আত্মহত্যা: আম্মান ও দ্বীন রিমান্ডে
অবন্তিকার মৃত্যুর পর শনিবার রাতে তার সহপাঠী আম্মান ও সহকারী প্রক্টর দ্বীনকে আসামি করে কুমিল্লার কোতয়ালী থানায় মামলা করেন নিহতের মা তাহমিনা শবনম। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ওই রাতেই দুজনকেই গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। সোমবার আম্মানকে দুই দিনের ও দ্বীন ইসলামকে একদিনের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।