Published : 16 Oct 2024, 07:44 PM
ছেচল্লিশতম বিসিএস প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের একটি দল দ্রুত লিখিত পরীক্ষার রুটিন প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। ৯ মে প্রকাশিত ফলাফলে উত্তীর্ণ হন ১০ হাজার ৬৩৮ জন। পিএসসি বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন অনেকে।
সংবাদ সম্মেলনে সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের শাস্তি দাবি করে সিরাজুল ইসলাম সোহাগ নামে এক পরীক্ষার্থী বলেন, “৪৬তম বিসিএস বাতিলের মত সিদ্ধান্ত অভিশাপ হয়ে আসবে। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার পিএসসির কর্মচারীর জবানবন্দি সত্য হলে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
“কিন্তু পরীক্ষার্থীদের দাবি, যেন ন্যায্য বিচার হয়, যাতে তাদের পরিশ্রমের মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকে। বাতিল নয়, বরং দ্রুত লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হোক, যাতে প্রতিটি পরীক্ষার্থী তাদের স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে পারে।”
একটি চক্র প্রায় এক যুগ ধরে পিএসসির অধীনে বিসিএসসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত বলে গত জুলাইয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে। সেখান ওই চক্রের ছয়জনের ছবি প্রকাশ করা হয়।
এদের মধ্যে পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও তার পরিবারের বিলাসবহুল জীবনযাপনের বিভিন্ন ছবি ফেইসবুকে ঘুরতে থাকে।
পরে আবেদ আলীসহ পিএসসির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পল্টন থানায় একটি মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের পর পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে মো. সোহরাব হোসাইনসহ কমিশন।
তবে গত জুলাই-অগাস্টের গণআন্দোলনে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পদে পরিবর্তনের মধ্যে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইনসহ কমিশনের সদস্যরা গত ৮ অক্টোবর পদত্যাগ করেন। এর পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম পিএসসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান চারজন।
সিরাজুল ইসলাম সোহাগ বলেন, “প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তারদের মধ্যে কেউ কেউ জবানবন্দিতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এক কর্মচারী ৪৬তম প্রিলিতে চুক্তিতে ১৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৩ জনকে উত্তীর্ণ করানোর কথা বলেছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকে পুরো বিসিএস পরীক্ষা বাতিলের দাবি করছেন।
“যারা ৪৬তম প্রিলিমিনারিতে অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদের অনেকে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন। কেউ প্রেগন্যান্সির কঠিন সময়ে বইকে সঙ্গী করেছেন, ডাক্তারদের কেউ এফসিপিএসে ভর্তির সুযোগ পেয়েও ত্যাগ করেছেন, যেন এই রিটেন পরীক্ষার জন্য আরও একটু সময় দিতে পারেন। এই যে আত্মত্যাগ, প্রত্যাশা…একে কীভাবে বাতিলের খাতায় ফেলা যায়?”
নতুন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি নতুন কমিশন মনে করে স্বচ্ছতার স্বার্থে আবার তদন্ত হওয়া দরকার, সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাব। প্রশ্নফাঁসের তদন্ত করে করে যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে কমিশন যেন অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করে। কোনো পরিশ্রমী ও সৎ পরীক্ষার্থী যেন এই নতুন বাংলাদেশে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”
সংবাদ সম্মেলনে ৪৬তম প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ মেহেদী হাসান, নুরজাহান খানম, রাশেদুল ইসলাম, আনোয়ারুল হকসহ ৩০-৩৫ জন পরীক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন-
প্রশ্ন ফাঁস: সেই ১৭ জনের নামে মামলা, পিএসসির তদন্ত কমিটি
প্রশ্নফাঁস: পিএসসির ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত
পিএসসির প্রশ্নফাঁস: পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করতেন দুইভাই, চলতেন দামি গাড়িতে