Published : 30 Aug 2015, 10:05 AM
আন্দোলনরত অন্তত সাতজন শিক্ষক সরকারসমর্থক এই ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের’ আহ্বায়ক অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল ইসলাম।
রোববার সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা ছিল গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলনরত শিক্ষকদের এই সংগঠনের।
উপাচার্য আমিনুল হক ভূইয়া একই দিনে বিকাল ৩টায় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক ডাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়।
এরইমধ্যে উপাচার্যকে সমর্থন দিয়ে আসা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভোর সাড়ে ৫টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। আন্দোলনরত শিক্ষকরা ব্যানার নিয়ে সেখানে যান সকাল সাড়ে ৭টার দিকে।
সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে উপাচার্য প্রশাসনিক ভবনের সামনে এলে ছাত্রলীগ কর্মীরা ব্যানার কেড়ে নেয় এবং শিক্ষকদের গলা ধাক্কা দিয়ে এবং মারধর করে সরিয়ে দেয়। এ ফাঁকে উপাচার্য ভবনে ঢুকে দোতলায় নিজের কার্যালয়ে চলে যান।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানকে এ সময় হাত বিশেক দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সিনিয়র সহসভাপতি আবু সাঈদ, সহ সভাপতি অঞ্জন রায় ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সবুজ হামলায় অংশ নেন।
ছাত্রলীগ কর্মী ধনী রাম রায়, আব্দুল বাতেন তন্ময়, আরিফুর রহমান রনি, আব্দুস সালাম মঞ্জু, কামরুল ইসলাম, জুয়েল, আরিফুর রহমান কেনেডি, ফয়সাল আহমদ, তমালও জাহিদকেও প্রত্যক্ষভাবে হামলায় অংশ নিতে দেখা যায়।
কেড়ে নেওয়া হচ্ছে শিক্ষকদের ব্যানার
জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন দুই পক্ষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলেও ছাত্রলীগ কর্মীদের কাছে পাত্তা পাননি তিনি।
শিক্ষকদের ওপর হামলাকারীরা এ সময় স্লোগান দেন- ‘শাবিপ্রবির মাটি/ছাত্রলীগের ঘাঁটি’।
উপাচার্য ভেতরে ঢুকে যাওয়ার পর ছাত্রলীগ কর্মীরা শিক্ষকদের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে নতুন করে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। তাদের ধাক্কায় অধ্যাপক ইয়াসমীন হক মাটিতে পড়ে যান। এক ছাত্রলীগ কর্মীকে এ সময় এক শিক্ষকের গায়ে লাথি মারতেও দেখা যায়।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের নেতা অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল ইসলাম পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেছে। আমাদের অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। উপাচার্য ছাত্রদেরকে আমাদের ওপর লেলিয়ে দিয়েছে।”
তিনি নিজে এবং অধ্যাপক ইয়াসমীন হক ছাড়াও মারধরের শিকার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গণি, অধ্যাপক এ ন ক সমাদ্দার, মোস্তফা কামাল মাসুদ, সহযোগী অধ্যাপক মো. ফারুক উদ্দিন।
হামলার পর অধ্যাপক ইয়াসমীন হক।
সকালে হামলা করার জন্য উপাচার্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে রাতে বৈঠক করেন বলেও অভিযোগ করেন পদার্থবিদ্যার এই শিক্ষক।
অন্যদিকে উপাচার্য আমিনুল হক ভূইয়া বলেন, শিক্ষকরা তাকে কার্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়ার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপনারা তো সবই দেখছেন। আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না। নো কমেন্টস।”
শিক্ষকদের মারধরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি পার্থ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাধা দেওয়ার বিষয়টি সাংগঠনিক কোনো সিদ্ধান্ত না। যারা যার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে এতে অংশ নিয়েছে।”
শিক্ষকদের ওপর হামলার খবর ও ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে কয়েকজন সাংবাদিককেও ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়।
যমুনা টেলিভিশনের সিলেট ব্যুরো প্রধান মাহবুবুর রহমান রিপন বলেন, “সারা দেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাদের বিচার না হওয়ায় আজ তারা এ ঘটনা ঘটাল।”
সাংবাদিক লাঞ্ছিত করার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব।