শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের ক্ষোভের মুখে তিনজনকে সিন্ডিকেট সভা থেকে দূরে রাখা হয়।
Published : 02 Jan 2025, 10:19 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিন্ডিকেট সভায় 'আওয়ামীপন্থি'দের ডাকা নিয়ে আপত্তি তুলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নিয়ে শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হট্টগোলও হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সভায় আওয়ামী লীগ পন্থি তিন সিন্ডিকেট সদস্যের যোগ দেওয়ার খবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের সামনে জড়ো হন একদল শিক্ষার্থী। পরে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও সেখানে হাজির হবেন।
যাদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের আপত্তি, তারা হলেন– সাবেক উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সাবেক নেতা অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও নীল দল নেতা অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভুঁইয়া এবং আওয়ামী লীগ নেতা এস এম বাহালুল মজনুন চুন্নু।
তারা সবাই সিন্ডিকেট সভার চিঠি পেয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের ক্ষোভের মুখে তাদের সভা থেকে দূরে রাখা হয়।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সেখানে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীরা সিন্ডিকেটে আওয়ামী লীগ পন্থিদের অংশগ্রহণের বিরোধিতা করেন এবং দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানান।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সামন্বয়ক এবি জুবায়ের ফেইসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে লিখেন, "আজকে সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের মিটিং আছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভুইয়াসহ গণহত্যায় মদদ দেওয়া নীল দলের শিক্ষকরা এই মিটিংয়ে যোগ দেবেন।
"তাদের অপকর্মের বিচার না হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদেরকে আমরা সিন্ডিকেট মিটিংয়ে থাকতে দেব না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাদের সুযোগ আছে বিকেল ৫.৩০টার মধ্যে সবাই সিনেট ভবনের সামনে চলে আসেন।"
এ সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও সিন্ডিকেটে আওয়ামী লীগপন্থিদের রাখা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সিনেট ভবনের সামনে আসেন।
তবে ডাকসু নিয়ে যেন সিন্ডিকেটে কোনো আলোচনা না হয়, তা নিয়ে তারা উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের সাথে বিতণ্ডায় লিপ্ত হন।
উপাচার্য সিনেট ভবনের সামনে এলে সূর্য সেন হল ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক আবিদুর রহমান মিশু উপাচার্যকে বলেন, "ক্যাম্পাসে ছাত্রদল এখনো রাজনীতি শুরুই করতে পারেনি। অস্থিতিশীল এক পরিবেশে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ব্যানারে রাজনীতি করছে। এমন পরিস্থিতিতে কোনো পক্ষের চাপের মুখে অনির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্যদের সভায় এখনই ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।"
অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে জড়ো হওয়া ছাত্ররা তখন ডাকসু চেয়ে স্লোগান দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান সিন্ডিকেটে নীল দলের সদস্যদের বিষয়ে বলেন, "শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে আজকের সিন্ডিকেটে আওয়ামী পন্থিদের রাখা হয়নি। নিয়ম মেনে সিন্ডিকেট থেকে আওয়ামী পন্থিদের অনেককেই বাদ দেওয়া হয়েছে।”
প্রশাসনিক কার্যক্রমের অগ্রগতির জন্য সিন্ডিকেট সভা করতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের সহায়তা চান।
১৮ সদস্যের সিন্ডিকেটে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মনোনীত ৮ জন ইতোমধ্যে বাদ পড়েছেন।
প্রথমে রাষ্ট্রপতি মনোনীত তিনজন বাদ পড়েন এবং নতুন ৩ জন যুক্ত হন। পরে ডিন ও প্রভোস্ট এবং শিক্ষক ক্যাটাগরিতে ৫ জন সিন্ডিকেট সদস্য বাদ পড়েন।
ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, "আজকের সিন্ডিকেট সভার এজেন্ডার মধ্যেই ডাকসু সংক্রান্ত কিছু নেই। ডাকসুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সবার সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সবার ঐকমত্য না হলেও বৃহত্তর অংশের সমর্থন নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব।"