দামি ডিম কেন দামি? তদারকিতে নেই কেউ

প্যারাগন বলছে, তারা নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে ডিম পরীক্ষা করেছে, তবে তৃতীয় পক্ষের কোনো ল্যাবরেটরিতে সেগুলোর পরীক্ষা হয়নি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2022, 06:42 AM
Updated : 28 Sept 2022, 06:42 AM

প্রচলিত মুরগির ডিমের চেয়ে অর্গানিক, ওমেগা থ্রি ও ব্রাউন নামে প্রক্রিয়াজাত ডিম বেশি দামে বিক্রি হলেও এসবের পুষ্টি গুণ ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারি কোনো নজরদারির ব্যবস্থা নেই।

উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করে ডিমের পুষ্টিমান নির্ধারণ ও উৎপাদন খরচ অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করছে বলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের এক শুনানিতে উঠে এসেছে।

অ্যাগ্রো ও পোল্ট্রি ব্যবসার কোম্পানি প্যারাগনের বিরুদ্ধে ডিমের বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগে মামলা হয়েছে প্রতিযোগিতা কমিশনে। মঙ্গলবার কমিশন কার্যালয়ে ওই মামলার শুনানি হয়।

বাজারে ওমেগা থ্রি প্লাস ও ব্রাউন নামে দুই ধরনের ডিম রয়েছে প্যারাগনের, যা কিনতে বাড়তি দাম দিতে হয়। তাদের ই-কমার্স সাইট প্যারাগন ফুডে প্রতি ডজন ব্রাউন ডিম ১৭০ টাকা এবং প্রতি ডজন ওমেগা থ্রি প্লাস ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।

অন্যদিকে খোলা বাজারে এখন প্রতি ডজন সাধারণ ডিম সর্বোচ্চ ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার আগে এই ডিম পাওয়া যেতে ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকায়।

মঙ্গলবারের শুনানিতে প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য জি এম সালেহ উদ্দিন প্যারাগন প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চান, ভিন্ন নামে বাজারজাত করা এসব ডিমে ভ্যালু এডিশনের মান কোনো সরকারি সংস্থা যাচাই-বাছাই করে কিনা?

জবাবে প্যারাগনের প্রতিনিধি জানান, উৎপাদন খরচ অনুযায়ী তারা এই দামটা ঠিক করেন। প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর তাদের কারখানা ঘুরে দেখেছে। কিন্তু ডিমের দামের বিষয়ে কিছু বলেনি।

যেসব গুণাগুণের জন্য ডিমের বাড়তি দাম চাওয়া হচ্ছে, তা কোনো সরকারি বা স্বাধীন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে প্যারাগন প্রতিনিধি বলেন, তারা নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে এসব পরীক্ষা করেছেন। কিন্তু তৃতীয় পক্ষের কোনো ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়নি।

প্রতিযোগিতা কমিশনের পক্ষ থেকে প্যারাগনের কাছে গত তিন মাসে ডিমের উৎপাদন খরচ ও বিক্রয়মূল্যসহ আরও কিছু তথ্য চাওয়া হলেও শুনানিতে তারা সেসব সরবরাহ করেননি।

আরও কিছু বাড়তি তথ্য চেয়ে কমিশন আগামী ১৬ অক্টোবর প্যারগনের মামলাটির পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছে। এই সময়ের মধ্যে সব তথ্য জমা দেওয়ার আদেশ দিয়েছে কমিশন।

ডিমের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে প্যারাগনের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে কোম্পানির পক্ষ থেকে কমিশনে জানানো হয়, দেশে দৈনিক সাড়ে ৬ কোটি ডিম উৎপাদন হয়, প্যারাগনে উৎপাদন করে মাত্র ৪ লাখ। ফলে বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি কিংবা মূল্যবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার মত সক্ষমতা তাদের নেই।

গত জুলাই মাসে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পর ডিমের দাম কেন বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, প্যারাগন কর্তৃপক্ষের কাছে সেই প্রশ্ন করেন কমিশনের চেয়ারপারসন মফিজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “মুরগি তো হঠাৎ করে ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয়নি যে ডিমপ্রতি দাম ২ টাকা ৭০ পয়সা করে বেড়ে যাবে। আর এমনও না যে প্যারাগনে কম দামে ডিম বিক্রি হয়েছে। আমরা মনে করি, ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে।”

জবাবে প্যারাগনের প্রতিনিধি বলেন, কাঁচামালের দাম বাড়লে ডিমের দামও বাড়ে। তবে ওই সময়ে কী হয়েছিল সেটা তারা আগামী শুনানিতে উপস্থাপন করবেন।

একই দিন তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহকেও শুনানিতে ডাকা হয়।

ডিমের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে আমানত কমিশনকে বলেন, “প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে কাজী ফার্ম তাদের ডিমের বিক্রয়মূল্য ঘোষণা করে। নিলামের মাধ্যমে তারা এই দামটি ঠিক করে। এর কিছু সময়ের মধ্যে ডায়মন্ড, সিপি, প্যারাগনসহ অন্যান্য কোম্পানি তাদের সংশ্লিষ্ট ডিলারদের মাঝে দাম ঘোষণা করে।

“এসব বড় কোম্পানি যেসব দাম ঘোষণা করে তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন ডিম উৎপাদনকারী জেলাগুলোর বড় আড়ৎ ও মোকামে ডিমের দাম ঠিক করা হয়। সেই দামকে মেনে নিয়ে তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ীরা ডিম কিনে আনে। সুতরাং, ডিমের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় তেজগাঁওয়ের আড়ৎদারদের সংশ্লিষ্টতা বা ভূমিকা রাখা সম্ভব নয়।”

কমিশনকে তিনি বলেন, সমিতি ডিম ব্যবসা করে না। তবে সমিতির সদস্য হিসেবে যে ৬৭ জন আছেন, তারা ডিম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ২৭ জন দূরের জেলাগুলো থেকে ডিম সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে আসেন ।

আরও পড়ুন

Also Read: কাজী ফার্মসের ডিম 'নিলাম' পদ্ধতি দেখে প্রতিযোগিতা কমিশনের ‘বিস্ময়’

Also Read: ডিমের অস্বাভাবিক দর: সন্দেহ পোল্ট্রি ‘করপোরেটদের’ দিকে

Also Read: ডিমের দাম চোখ রাঙাচ্ছে পুষ্টিতে