কাজী ফার্মসের ডিম 'নিলাম' পদ্ধতি দেখে প্রতিযোগিতা কমিশনের ‘বিস্ময়’

“আপনারা যেটা করছেন তাতে মনে হচ্ছে নিলাম শেষে নিজেরাই দাম ঠিক করছেন। এটা অদ্ভুত,“ মন্তব্য প্রতিযোগিতা কমিশন চেয়ারপারসনের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2022, 04:15 PM
Updated : 26 Sept 2022, 04:15 PM

ডিম ও মুরগি উৎপাদনকারী কোম্পানি কাজী ফার্মসের ডিমের দর নির্ধারণে নিলাম পদ্ধতি, বাজারজাতের কার্যক্রম ও মুরগি ব্যবসার বিভিন্ন দিক আলোচনা করতে গিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।

সোমবার ছিল ডিম ও মুরগির বাজারে অস্বাভাবিক মূল্য বাড়ানোর অভিযোগে কাজী ফার্মসের বিরুদ্ধে করা দুই মামলার শুনানির দিন।

ঢাকার ইস্কাটনে প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যালয়ে শুনানির এক পর্যায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থার চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম কাজী ফার্মসের প্রতিদিন ডিমের দাম ঠিক করার জন্য চালু নিলাম পদ্ধতিকে ‘অদ্ভুত’ মন্তব্য করে বলেন, “আপনাদের বিজনেস পলিসি আমার পক্ষে বোঝা কঠিন। আমরা আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি।“

পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে বাজার ‘অস্থিতিশীল’ করার অভিযোগে নিত্যপণ্য প্রস্তুতকারক ও সরবরাহকারী ৪৪টি কোম্পানি ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার মামলা করে প্রতিযোগিতা কমিশন।

প্রতিযোগিতা কমিশন আইনে কমিশনেই চাল, তেল, সাবান, আটা, ডিম ও মুরগি উৎপাদন ও সরবরাহ খাতের এসব কোম্পানি ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে দাম বাড়ানোসহ আরও কিছু অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় পৃথকভাবে এসব মামলা করা হয়।

পর্যায়ক্রমে এসব মামলার শুনানি হবে কমিশনে, যা শুরু হল কাজী ফার্মসকে দিয়ে। মঙ্গলবার ৯ কোম্পানির বিরুদ্ধে করা অভিযোগের শুনানি হবে।

এদিন শুনানিতে কাজী ফার্মস কমিশনের চাওয়া অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে পারেনি। এজন্য আরও দুই সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন করেন কোম্পানির আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব। পরে কমিশন আগামী ৬ অক্টোবর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করে।

গত জুলাইতে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ার ফলে পণ্য বাজারে অস্থিরতার মধ্যে কাজী ফার্মস নিজস্ব নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রতিটি ডিমের দাম ২ টাকা ৭০ পয়সা করে বাড়িয়ে দেয়। একইভাবে ব্রয়লার মুরগির দামও কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা করে বাড়িয়ে দেয় বলে সেসময় অভিযোগ ওঠে।

ওই সময় আরও কিছু ডিম ও মুরগি উৎপাদনকারী কোম্পানি প্রায় একইভাবে দাম বাড়ায়। এতে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে বাজার লাগামহীন হয়ে যায়।

এমন মূল্য বাড়ানোকে ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবে চিহ্নিত করে কাজী ফার্মস, প্যারাগন, সিপি, ডায়মন্ড এগ, পিপলস ফিডসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে প্রতিযোগিতা কমিশন।

Also Read: ‘অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি’: ৪৪ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা প্রতিযোগিতা কমিশনের

Also Read: ডিমের অস্বাভাবিক দর: সন্দেহ পোল্ট্রি ‘করপোরেটদের’ দিকে

এদিন কাজী ফার্মসের শুনানি শুরুর মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া সচল হয়েছে।

শুনানিতে প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মফিজুল ছাড়াও সদস্য জি.এম. সালেহ উদ্দিন,  এ.এফ.এম মনজুর কাদির ও নাসরিন বেগম উপস্থিত ছিলেন। কাজী ফার্মসের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব ও পরিচালক কাজী জাহিন হাসান।

যেভাবে দাম নির্ধারণ

বিভিন্ন ডিম উৎপাদনকারী কোম্পানি ও খামার দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগের দিন ডিমের একটি ভিত্তিমূল্য ঘোষণা করে সেই অনুযায়ী ডিলার বা ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছ থেকে দর নিয়ে থাকে, যেটি এ খাতে নিলাম হিসেবে পরিচিত। এরপর ডিলারদের দর শোনার পর কোম্পানিগুলো একটি দর নির্ধারণ করে দেয়।

খামারি ও পাইকাররা বড় কোম্পানিগুলোর নির্ধারিত দরকে অনুসরণ করে থাকেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এদিন শুনানিতে কাজী ফার্মসের আইনজীবী ও পরিচালক জানান, তারা প্রতিদিন নির্ধারিত ডিলারদের কাছে ডিমের ভিত্তিমূল্য ঘোষণা করেন। নিলামে অংশগ্রহণকারীরা অনেক বেশি দাম হাঁকলেও নিজেরা মাঝামাঝি একটা মূল্যকে ওই দিনের জন্য ঠিক করে দেন। এভাবেই বাজারে কোম্পানি প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করে বলে তাদের ভাষ্য।

তাদের বক্তব্য শুনে কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, “এটা অদ্ভুত ধরনের নিলাম। নিলামে সাধারণত সর্বোচ্চ দরদাতার দরের ওপর ভিত্তি করে দাম ঠিক হয়। কিন্তু আপনারা যেটা করছেন তাতে মনে হচ্ছে নিলাম শেষে নিজেরাই দাম ঠিক করছেন। এটা অদ্ভুত।“

এ কোম্পানির নিজস্ব ব্র্যান্ডের ব্রয়লার মুরগির দাম নির্ধারণ, উচ্চমূল্যের ডিমের ক্ষেত্রে দাম বেশি হওয়ার কারণ, ডিলারদের তালিকাসহ আরও কিছু তথ্য চেয়েছে কমিশন।