কারওয়ান বাজারে নতুন আলু পাওয়া যাচ্ছে ৫০ টাকায়; দুই সপ্তাহ আগে যা ছিল ৭০ টাকার ঘরে।
Published : 11 Jan 2024, 09:20 PM
শীত মৌসুমে নতুন আলুর বিস্ময় তৈরি করা দাম অবশেষে কমতে শুরু করেছে; তবে এখনও তা বছরের এ সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
শীতকালীন সবজি, মুরগি ও ডিমের উচ্চমূল্যের ভিড়ে আটা ও ময়দার দাম নতুন করে দিয়েছে লাফ।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি আটায় ৩ থেকে ৫ টাকা এবং ময়দার দাম বেড়েছে ৫ টাকা পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার নতুন সরকারের শপথের দিন মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
বিক্রেতারা জানান, এক সপ্তাহ আগেও খোলা আটার কেজি ছিল ৪৫ টাকা, এবং প্যাকেটজাত আটার ক্ষেত্রে দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এখন খোলা আটা ৫০ টাকা কেজিতে এবং প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা তরে।
গত সপ্তাহে খোলা ময়দা ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। প্যাকেটজাত ময়দার দাম ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা।
কৃষি মার্কেটের মুদি দোকানি জলিল হোসেন বলেন, “এক মাস আগে বসুন্ধরার ২ কেজির প্যাকেট কিনতাম ৯৫ টাকা দিয়ে, তার আগে কিনতাম ৯০ টাকায়। আর এখন কিনতেছি ১০৫ টাকা করে৷ আর দুই কেজির এই প্যাকেট খুচরা বিক্রি করতেছি ১২০ টাকায়।”
কারওয়ান বাজারের খুচরা দোকান আনসার আলী স্টোরের বিক্রেতা আব্দুস সালাম বলেন, “৫০ কেজির বস্তায় ১০০ টাকা বাড়ছে। বেশি দামে না বেচলে দেহা যায় আমাগো লোকসান হইতাছে।”
পাশের দোকানি গাফফার হোসেন বলেন, “খোলা ময়দা ছিল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা, এখন বেছি মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে।”
“আটা ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা প্রতি কেজি, এখন বেছি ৫০ টাকা কেজি দরে। আর প্যাকেট ছিল ৫০ টাকা, এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বেছি।”
কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা পঞ্চাশোর্ধ ওয়াদুদ মিয়া বলেন, “ডায়াবেটিসের রোগী হওয়ায় আটার রুটি খাওয়া লাগে। দুইদিন ধরে শুনি দাম নাকি বাড়ছে। একেক দোকানে দেখি একেক দাম।”
নতুন আলুর দাম কমছে
কারওয়ান বাজারের মুন্সীগঞ্জ বাণিজ্যালয়ে পাইকারিতে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা দরে নতুন আলু পাওয়া যাচ্ছে। পুরান আলুর দাম ৮০ টাকা।
এই বাজারে খুচরায় নতুন আলু ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেল।
সপ্তাহ দুয়েক আগে নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে। এই দাম দেখে বিস্মিত ক্রেতারা বুঝতে পারছেন না, এবার আলুর ক্ষেত্রে কী হয়েছে। গত বছর এই সময়ে আলুর দাম ছিল ২০ টাকার আশেপাশে।
ফেরি করে কাপড় বিক্রি করা নুরজাহান বেগম কারওয়ান বাজার থেকে আলু কিনলেন দুই কেজি। তিনি বলেন, “কয়ডা দিন আগেই আলুর যে দাম আসিল, অনেক ডরাইছিলাম কী খায়া বাছুম। এহন মনে হইতাছে দাম কমছে। আরেকটু কমুক।”
বেড়েছে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম
বিক্রেতাদের তথ্য বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আদার দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। গত সপ্তাহে চায়না আদার দাম ছিল ২২০ টাকা কেজি, যা এখন কিনতে হচ্ছে ২৪০ টাকায়। দেশি আদা ছিল ২০০ টাকা কেজি, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে।
রসুন প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা কেজি দরে, আর চায়না রসুন ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা সপ্তাহ্খানেক আগে ছিল যথাক্রমে ২৫০ ও ২৩০ টাকা।
পেঁয়াজ-রসুনের দোকানি মো. জাকির হোসেন বলেন, “নির্বাচনের পর সবকিছু কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা করে দাম বাড়ছে।”
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে দেশি নতুন পেঁয়াজ ছোট-বড়ভেদে বিক্রি হতে দেখা গেছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে। যা কয়েকদিন আগেও ৭৮ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত আনিছুর রহমান এসেছেন পেঁয়াজ কিনতে। তিনি হতাশার সূরে বলেন, “আগে শুকনা পেঁয়াজ ছিল ৮০ টাকা কেজি। আর এখন ভেজা পেয়াজের দামই চায় ৯০ টাকা কেজি।”
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. আলামিন বলেন, “আমাদেরটা পাবনার পেঁয়াজ। তাই ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। ফরিদপুরের টা আরো কম, ৭৫ টাকা।”
তবে আলামিনের দাবি পেঁয়াজের দাম বাড়েনি। তিনি বলেন, “পেঁয়াজের বাজার এখন কম। এক টাকাও বাড়ে নাই।”
চড়ছে মুরগির বাজারও
ডিমের দাম স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে ব্রয়লারের দাম। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে ক্রেতাদের ব্রয়লারে মুরগি ২১০ টাকা কেজি দরে কিনতে দেখা গেছে।
‘জনতা ব্রয়লার’ দোকানে মুরগি কিনতে এসে বিস্ময় প্রকাশ করছেন মো. আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, “শুনেছি ব্রয়লারে শরীরের একটু ক্ষতি আছে। তবুও খাই। কারণ শরীরে আমিষের দরকার। আবার মাংসের মধ্যে এটারই দাম কম। এখন এটারও দাম বাড়ল।”
বিক্রেতা রবিন আহমেদ বলেন, “এক সপ্তাহ আগে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বেচছি। পরে ২০০ টাকা হইল। গতকাল আমি নিজেই আড়তে গিয়া ২০০ টাকাতেই কিনতে হইছে। তাই বেচি ২১০ টাকা কেজি।”
উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে ডিমের বাজার। ৪৫ টাকা হালি প্রতি বিক্রি হচ্ছে।
কিছুটা কমেছে টমেটো-শসার দাম
মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে দেখা যায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে টমেটো ও শসা। গত সপ্তাহে টমেটোর দাম ছিল ৭০ টাকার বেশি।
সিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে, বিচিসহ সিমের দাম আরও বেশি। গত বছর এই সময়ে ৩০ টাকার আশেপাশে সিম পাওয়া গেছে।
সবজি কিনতে আসা নাছিমা খাতুন বলেন, “শীতকালীন সবজি হিসাবে আরেকটু কমলে ভাল হইত।”