কাগজপত্রের কার্যক্রম গুছিয়ে আনার পাশাপাশি উড়োজাহাজ সংগ্রহ থেকে অবকাঠামোগত অন্যান্য প্রস্তুতিও চলছে।
Published : 23 Apr 2024, 08:40 AM
অনাপত্তিপত্র পাওয়ার পর আকাশে ওড়ার প্রস্তুতি ধাপে ধাপে এগিয়ে নিতে শুরু করেছে দেশের উড়োজাহাজ খাতে নতুন নাম লেখাতে যাওয়া ’ফ্লাই ঢাকা এয়ারলাইন্স’; চলছে উড়োজাহাজ কেনার প্রক্রিয়া ঠিকঠাক করার কাজও।
মাস খানেক আগে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি-অনাপত্তিপত্র) পাওয়ার পর নতুন কোম্পানিটি এখন অপেক্ষায় এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেটের (এওসি)। এ সনদ পাওয়ার পরই অভ্যন্তরীণ রুটে ডানা মেলার অনুমোদন পায় কোনো এয়ারলাইন্স।
কাগজপত্রের এসব কার্যক্রম গুছিয়ে আনার পাশাপাশি উড়োজাহাজ সংগ্রহ থেকে অবকাঠামোগত অন্যান্য প্রস্তুতিও চলছে।
শুরুর দিকের ফ্লাইট চালাতে ফ্লাই ঢাকা পরিকল্পনা করছে ফ্রান্সভিত্তিক উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি এটিআর এর এটিআর ৭২-৬০০ মডেলের উড়োজাহাজ ব্যবহারের। এজন্য বিদেশে রয়েছে কোম্পানিটির একটি প্রতিনিধিদল। পাশাপাশি চলছে পাইলটদের প্রশিক্ষণ শুরুর কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার কাজ।
অভ্যন্তরীণ গন্তব্যের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রুটেও মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়ানোর পরিকল্পনাও শুরু থেকেই করছে জাতীয় পার্টির সিনিয়ার কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের মালিকাধীন এ কোম্পানি।
বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাবের সাবেক এই সভাপতি ২০২১ সালে এটি পরিচালনা করতে এনওসি চেয়ে বেবিচকের কাছে আবেদন করেছিলেন। চলতি বছর মার্চে মেলে এই অনুমোদন।
ফ্লাই ঢাকা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোল্লা ফজলে আকবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সব ঠিক থাকলে এ বছরের শেষ দিকে আকাশ পথে সেবা দিতে যুক্ত হতে চায় ফ্লাই ঢাকা।
কতদূর এগোল কাজ
বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে বন্ধ হয়েছে অন্তত আটটি এয়ারলাইন্স। বর্তমানে চলছে তিনটি; নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও এয়ার অ্যাস্ট্রা। সেই ইতিহাস মাথায় রেখেই ২০২১ সালে গঠন করা হয় ফ্লাই ঢাকা এয়ারলাইন্স নামের এ কোম্পানি। তিন বছরের প্রস্তুতি নিয়ে এখন যা আকাশে ওড়ার বাকি কাজ গুছিয়ে আনছে।
বেবিচকের এওসি (এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট) পেলেই আকাশে ডানা মেলতে পারবে কোম্পানিটি। এওসি পাওয়ার পর যেকোনো এয়ারলাইন্সকে অন্তত এক বছর অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হয়। এরপর আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালানোর অনুমতি মেলে।
এয়ারলাইন্সটির মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মো. আমিনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফ্লাই ঢাকা এয়ারলাইন্স ২০২১ সালের ৪ মে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে নিবন্ধিত হয়। পরে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে ওই বছরের ১ জুলাই। এখন এওসি প্রক্রিয়া চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম ও ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
কোম্পানির ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের প্রধান ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে শিগগিরই পাইলটদের প্রশিক্ষণ শুরু করা হবে। প্রশিক্ষণের প্রতিটি ধাপে পাইলটদের দক্ষতা নিরূপণের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ সেবা নিশ্চিতসহ পরিচ্ছন্নতা, আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য, খাবার-দাবারের সরঞ্জাম পৌঁছানো, জরুরি ইকুইপমেন্ট, ফার্স্ট এইডের মতো বিষয়গুলো কেবিন ক্রুদের নিশ্চিত করতে হয়।
সেদিকেও এয়ারলাইন্সটি লক্ষ্য রাখছে জানিয়ে হেড অব কেবিন সেফটি ও সার্ভিস খালেদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেবিন সেফটি এবং সার্ভিস যে কোন এয়ারলাইন্সের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ডিপার্টমেন্ট। সেই বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ফ্লাই ঢাকা এয়ারলাইন্স এক ঝাঁক তরুণ এবং অভিজ্ঞ কেবিন ক্রুদের নিয়োগ সম্পন্ন করেছে।”
ফ্লাই ঢাকার কর্মকর্তারা বলেন, এটিআর ৭২-৬০০ মডেলের এয়ার ক্রাফট দিয়ে আভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট শুরু করলেও পরে বহিঃবিশ্বে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বহরে এয়ারবাস বা বোয়িংয়ের এয়ারক্রাফট ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে ফ্লাই ঢাকা এয়ারলাইন্স।
নতুন এ এয়ারলাইন্সের আগমনকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বেবিচকও। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মো. মুফিদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশে ভালো মার্কেট আছে। সেটা তো অনেকটাই বিদেশিরা নিয়ে নিচ্ছে। এজন্য যদি লোকাল উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসেন, সেটা আমি ইতিবাচকভাবেই দেখছি। আমরা ফ্লাই ঢাকাকে এনওসি দিয়েছি, পরবর্তীতে এওসি দিব তারা যদি কমিটেড হয়।”
অনেকগুলো এয়ারলাইন্স ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, তারপরও নতুন এ এয়ারলাইন্স ভালো করবে কী? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “যেসব এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের বিজনেস ম্যানেজমেন্টের সমস্যা ছিল। টিকে থাকতে হলে শুধু বাণিজ্যিক চিন্তা করলে হবে না, প্যাশনও থাকতে হবে। অনেকেই তো টিকে আছে। আই ফিল প্রাউড অব দেম। আমি মনে করি প্রপার বিজনেস ম্যানেজমেন্ট থাকলে এবং দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার পরিকল্পনা থাকলে তারা অবশ্যই ভালো করতে পারবে।”