বাজার তদারকি নিয়ে ‘ট্রল’, খেদ টিটুর

“বলি একটা, সেটা ট্রান্সফার হয়ে আরেক জায়গায় কোট হয়ে যায়," বলেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2024, 11:27 AM
Updated : 12 March 2024, 11:27 AM

বাজার তদারকি করতে গিয়ে একটি পক্ষের ‘ট্রল’ ও সমালোচনার নিশানায় পরিণত হচ্ছেন জানিয়ে খেদ প্রকাশ করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

তার ভাষ্যে, “অনেকেই আমাদের বাজার পরিদর্শন কাজকে লম্ফঝম্প মনে করছেন। কেউ বলতেছে, ‘নতুন আসছে, শিক্ষানবিশ হিসেবে বাজার দেখতেছে’। আমরা এসব ক্রিটিসিজমকে গুরুত্ব দিয়ে দেখি না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করে যাচ্ছি।

“হোলসেল মার্কেটে যাচ্ছি, রিটেইল মার্কেটে যাচ্ছি। এটা নিয়েও দেখলাম কালকে একজন ট্রল করল। একজন বলতেছে আগে কি সাপ্লাই চেইন ছিল না? আমি কখনোই বলি নাই যে সাপ্লাই চেইন ছিল না বা ভ্যালু চেইন ছিল না...।"

মঙ্গলবার সচিবালয়ে জাপানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন টিটু।

রোজা শুরুর পর প্রতিপিস লেবুর দাম ২০ টাকা হয়ে গেছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমার নিজের লেবুর বাগান আছে, আমার দেলদুয়ারে (টাঙ্গাইল) প্রচুর লেবু হয়। সেখানে লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৪ টাকায়। এখানে লুকানোর কিছু নাই, ৬/৭ টাকার লেবু ঢাকায় ২০ টাকা হয় কেন? এখানেই ভ্যালু চেইন বা সাপ্লাই চেইন ইমপ্রুভ করার জায়গা রয়েছে।

“এটা কি পরিবহন খরচের কারণে বাড়ছে নাকি এখানে অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে? পরিবহন ব্যবস্থা যেন স্বচ্ছ থাকে, সেজন্য আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে কথা বলে এসেছি। হোলসেল মার্কেটে দেখেছি অনেকগুলো মধ্যস্বত্বভোগী আছে। তাদেরকে নিয়মের মধ্যে আনতে হবে।"

আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, “কালকে আমি বলেছি, যারা হোলসেল মার্কেটে থাকবে- তাদের আইডেন্টিফিকেশন, ট্রেড লাইসেন্স থাকার কথা। এইটা নিয়েও দেখি এক জায়গায় টকশো হচ্ছে।

“আমি নাকি এখন রিটেইল বাজারেও সবার ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে মুদি দোকান চালাইতে বলেছি। বলি একটা, সেটা ট্রান্সফার হয়ে আরেক জায়গায় কোট হয়ে যায়।"

রোজা শুরুর পর বাজার পরিস্থিতি কেমন দেখছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “চালের বাজারে কোনো অস্থিরতা দেখতে পাই নাই, আপনাদের কাছ থেকেও কোনো অভিযোগ পাইনি। সয়াবিন তেলের দাম লিটার ১৭৩ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬৩ টাকা করতে পেরেছি। খোলাবাজারে ১৪৯ টাকায় তেল বিক্রি হচ্ছে।

“বাজারে চিনি, ডালসহ কোন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের স্বল্পতা দেখতে পাইনি। এটাকে আমি অবশ্যই স্বস্তিদায়ক বলব।”

ভোক্তারা স্বস্তিতে আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা স্বস্তিতে আসার চেষ্টা করছি এবং আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। যতদিন বাজার আছে, যতদিন সরকার আছে, আমাদের উদ্যোগগুলো চলতে থাকবে।”

গত ২ মার্চ বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ওই সপ্তাহেই ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আসবে।

তবে এখনো সেই পেঁয়াজ না আসার বিষয়ে জানতে চাইলে টিটু বলেন, “আমরা পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন পেয়ে গেছি। এখন দামের বিষয়ে নেগোসিয়েশন চলছে। ভারতের পেঁয়াজের ট্যারিফ বাংলাদেশের জন্য প্রতিটন ৮০০ ডলার; আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য প্রতিটন ১২০০ ডলার।

“এই প্রাইসটা যেন আরেকটু কমানো যায়, সেজন্য আমাদের বাণিজ্য সচিব গত ৩ দিন ধরে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখছেন। আগামী ২/১দিনের মধ্যে দামের বিষয়টি যখন হবে, তখন থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু করবে। সেটা সরকারিভাবেও হতে পারে, বেসরকারি উদ্যোগেও হতে পারে।”

খেজুরের দাম সম্পর্কে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সাধারণ মানুষ যে খেজুরটা খায়, সেটার দাম প্রতিকেজি ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে রাখার জন্য আমরা মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবসায়ীদের চিঠি দিয়েছি। ব্যবসায়ীরা আজকের মধ্যে খুচরা মূল্য ঘোষণা না করলে আমরা কালকের মধ্যে ঘোষণা দিয়ে মূল্য জানিয়ে দেব। সর্বোচ্চ মূল্য ঘোষণা করে দেব; এর চেয়ে বেশি দামে কেউ বিক্রি করতে পারবে না।

“এখানে একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। সব খেজুরের ট্যারিফ কমানো হয়নি। বস্তায় যে খেজুরটা আসে, সেই খেজুরের ট্যারিফ কমানো হয়েছে। আমরা কিন্তু লাক্সারিয়াস খেজুর বা উঁচু জাতের খেজুর বা দামি খেজুরের ট্যারিফ কমাইনি।”

চিনি প্রসঙ্গে টিটু বলেন, “পর্যাপ্ত চিনি আছে। খোলা বাজারে চিনির এমআরপি প্রতিকেজি ১৪০ টাকার বেশি হবে না। তারা আমাদের কথা দিয়েছে। প্যাকেটজাত চিনিও ১৪৫ টাকার বেশি হবে না।

“আর ভারতের সঙ্গেও চিনির বিষয়ে কথা চলছে। কোনো অগ্রগতি থাকলে জানাব। আসলে চিনির দামটা সর্বোচ্চ বেশি। ডলারে কনভার্ট করলে দামটা কোনো জায়গায় কম পড়বে না। ৫ টাকা এদিক-সেদিক ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারেও চিনির দাম ঊর্ধ্বমুখী।”