ঢাকার ফার্মগেইট মোড় থেকে ইন্দিরা রোডের পুরোটা জুড়েই এখন শীতবস্ত্রের দোকান। কিছুদিন আগেও ফুটপাতের এসব দোকানে ছিল পালাজ্জো, বাচ্চাদের ঘরে পরার পাতলা কাপড়ের পসরা। সেগুলো এখন ফুল হাতা টিশার্ট, সোয়েটারের মত গরম কাপড়ে ভরে উঠেছে।
দুদিন আগেই প্রায় ১০ হাজার টাকার শীতের পোশাক বঙ্গবাজার থেকে এনেছেন জানিয়ে শামীম আহমেদ নামের এক দোকানি বলেন, “এখন তো হালকা শীত, এগুলার চাহিদা এখন একটু বেশি।”
ঢাকায় থাকার অভিজ্ঞতা থেকেই জানেন এখানকার আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি; জানেন কখন কোন পোশাকের বিকিকিনির চল। তার মত অন্য দোকানিরাও এখন শীতের হালকা পোশাকই বেশি তুলেছেন। তবে কম্বলসহ ভারী শীতের কাপড়ও মজুদ করতে শুরু করেছেন দোকানে।
তাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিল রয়েছে আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসেরও।
নভেম্বরের মাঝামাঝি দেশের আনাচে-কানাচে কুয়াশামাখা ভোরের দেখা মিললেও, জনবহুল ঢাকায় এবারও মধ্য ডিসেম্বরের আগে এমন দৃশ্য মিলবে না বলেই আভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বৃহস্পতিবার জানান, পঞ্চগড়ের মানুষ শীতে জবুথবু হয়ে পড়লেও রাজধানীতে পুরোপুরি শীত অনুভব করতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।
“এ মাসের ২০-২২ তারিখের পর আরেকটু তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি শীত ভালোই অনুভব হবে। সেই শীত চলবে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত,” যোগ করেন তিনি।
রাজধানীবাসী এমন আবহাওয়ার সঙ্গে পরিচিত বলেই এখন শীতের পোশাকের কেনাকাটায় হালকা গরম পোশাকের কাটতিই বেশি বলে জানালেন দোকানিরা।
তবে ফুটপাত থেকে শুরু করে ছোট-বড় দোকানপাট কিংবা শপিং মল- সবখানেই চোখে পড়বে বাহারি রঙ ও নকশার শীতবস্ত্র। হালকা গরম কাপড়ের সঙ্গে ভারী শীতবস্ত্রও তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
গত কয়েকদিনে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, ধানমণ্ডি, নিউমার্কেট এলাকার বিভিন্ন মার্কেটের পোশাকের দোকানে শীতের হাওয়া লাগতে দেখা গেছে। দোকানিদের আশা, আগামী এক সপ্তাহের মাঝে কেনাবেচা আরও বাড়বে।
হালকা শীতের পোশাকের মধ্যে বাচ্চাদের কাপড়ের বিক্রি বেশি বলে জানালেন দোকানিরা। এরপরই রয়েছে কম্বলের চাহিদা।
মিরপুরের ৬০ ফিট এলাকার জিএস মার্ট দোকানের অন্যতম সত্ত্বাধিকারী দীলন মণ্ডল জানান, হালকা গরম কাপড়ই বেশি চলছে। আর যারা বিদেশ যাবেন তারা কিনছেন ভারী শীতবস্ত্র।
তার দোকানে একটু ভারী সোয়েটার পাওয়া যাচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকায়। জ্যাকেটের ক্ষেত্রে দাম একটু বেশি, মানভেদে ১৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। এক্সপোর্ট কোয়ালিটির জ্যাকেটের কাটতি বেশি বলে জানালেন তিনি।
তার কাপড়ের উৎস দেশের পোশাক কারখানাগুলোই। তিনি বলেন, “গার্মেন্টসের যে সারপ্লাস প্রোডাক্ট, ওটা যারা নামায়, তারা বিভিন্নভাবে ওটা গ্রেডিং করে বিভিন্ন হাউজের কাছে দেয়। তারপর সেই হাউজগুলোর থেকে আমরা সর্টিং করে বেস্টটা নিয়ে আসার চেষ্টা করি।”
মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গেলেই দেখা যাবে, ভ্যানে ও ফুটপাতে শীতের কাপড়ের পসরা সাজিয়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর নিউমার্কেটে হাঁটলেও চোখে পড়বে একই দৃশ্য।
গরম কাপড়ের সঙ্গে কম্বল ও কমফোর্টারের কেনাবেচাও একটু একটু করে বাড়ছে। ফুটপাতের দোকানগুলোতে বেশি বিক্রি হচ্ছে পাতলা কম্বল, যেগুলোর দাম গড়ে ২০০-২৫০ টাকা করে। কম্বল গায়ে দেওয়ার মত শীত না পড়লেও পরে দাম বেড়ে যাওয়ার আগে কেউ কেউ সংগ্রহে রাখছেন বলে জানান দোকানিরা।
ফার্মভিউ সুপার মার্কেটের রাজীব শাড়ি অ্যান্ড বেডিং এর ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম মাসখানেক আগে কম্বল তোলার তথ্য দিলেন। গুলিস্তানের পাইকাররা আরও মাস তিনেক আগেই বিক্রিতে নামছে। খুচরায় এখন দিনে দুই-তিনটা বিক্রির মধ্যেই সীমাবদ্ধ বলে জানান তিনি।
তার দোকানে ৫০০ থেকে শুরু করে ৭০০০ টাকা দামের কম্বল পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানির কমফোরটারও এনেছেন যেগুলির দাম শুরু ১৫০০ টাকা থেকে।
সীমিত আয়ের ক্রেতাদের বাইরে যাদের বাজেট একটু বেশি- যারা হালের সাথে তাল মিলিয়ে পোশাক পরতে ভালোবাসেন, তারা ঝুঁকছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে।
বসুন্ধরা শপিং মলের দোকানে দোকানে শীতের নতুন সংগ্রহ আনার তোড়জোড়ের মধ্যে চলছে আগের পোশাকে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় মূল্যছাড়।
রাইজ ব্র্যান্ডের এক দোকানের বিক্রেতা হাসানুর রহমান পিয়াস তেমন তথ্য দিয়ে জানালেন, তারা গত মাস পর্যন্ত মূল্যছাড় দিয়েছেন যাতে দোকানে শীতের নতুন কালেকশন নিয়ে আসতে পারেন।
তারা দোকানে পুরনো ডিজাইনের কিছু শীতবস্ত্রের পাশাপাশি নতুন নকশার কাপড়ও উঠিয়েছেন। এ মাসের শেষে আরও নতুন পোশাক আনবেন।
সারা লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডের বিক্রয়কর্মী সজল হোসেনও জানান, পুরো অক্টোবরজুড়ে তাদের ৫০ শতাংশ মূল্যছাড় ছিল। এখন একেবারে নতুন ডিজাইনের সোয়েটার, জ্যাকেট, হুডি আসতে শুরু করেছে।
দোকানিদের পসরার ভিড়ে পিছিয়ে নেই অনলাইন ও ফেইসবুককেন্দ্রিক উদ্যোক্তারাও। শীতের আগমনে তারাও হাজির নতুন নতুন নকশার শীতবস্ত্র নিয়ে।