গাজীপুরের পোশাক কারখানা টিএনজেডের চারটি কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
Published : 08 Apr 2025, 07:47 PM
ঈদের পর শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে নতুন করে অস্থিতিশীলতা ও উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে সরকার কঠোর হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শ্রম সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান।
এমন পরিস্থিতি তৈরির চক্রান্ত চলছে বলে সরকারকে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই ধরনের চেষ্টা হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ ঘটানো হবে। যারা পোশাক খাত নিয়ে চক্রান্ত করবে তারা দেশের প্রকৃত শত্রু।”
মঙ্গলবার তৈরি পোশাক বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (আরএমজি-টিসিসি) সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এমন হুঁশিয়ারি দেন শ্রম সচিব।
বৈঠক শেষে গাজীপুরের পোশাক কারখানা টিএনজেডের চারটি কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। এক্ষেত্রেও বেক্সিমকো গ্রুপের ‘মডেল’ প্রয়োগ করার কথা তুলে ধরেন তিনি।
শ্রমিক ছাঁটাই ও অসন্তোষেরন বিষয়ে তিনি বলেন, “গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট দিচ্ছে- ঈদের পর শ্রমিকরা যখন কাজে ঢুকবে তখন বড় ধরনের ছাঁটাই করা হবে, আরেকটা উত্তেজনা তৈরি করা হবে। এই কারণে আজকে মিটিং করেছি। ছাঁটাই করতে হলে আইন অনুযায়ী করতে হবে।
”শিল্প পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, আর্মি এবং কলকারখানা পরিদপ্তরের স্থানীয় কার্যালয়কে অবহিতকরণ ছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে যদি ছাঁটাই করা হয় তাহলে মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাব। ধরে নেব তিনি এই ছাঁটাই করে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি করে আরেকবার পানি ঘোলার চেষ্টা করছেন।”
পাশাপাশি ছাঁটাই নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে সরকারের দপ্তরগুলোতে তা জানানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে কেউ রাস্তা দখল করে বিক্ষোভ দেখানোর চেষ্টা করলেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিক্ষোভের অধিকার আছে, রাস্তা ব্লক করার অধিকার নেই। কেউ যদি করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সাম্প্রতিক শ্রমিক আন্দোলনে ’বিচিত্ররকমের’ উস্কানির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “অনেক শ্রমিক নেতা উস্কানি দিচ্ছে। উস্কানি যারা দিচ্ছে তাদেরকে খুঁজে বের করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শ্রমিকদের অসৎ উদ্দেশ্যের উদাহরণ দিয়ে সচিব বলেন, সোমবার টিএনজেডের শ্রমিকরা কারখানার কাছে সমাবেশ করেছে। তারা এ বৈঠকে না এসে ওখানে সমাবেশ করছে কেন? আবার তারা পানি ঘোলা করবে। সমস্যার সমাধানের জন্য যখন আলোচনা চলছে, তখন আরেক গ্রুপ শ্রমিক বিআরটিসি ডাবল ডেকার বাসে চড়ে এসে শ্রম ভবনের সামনে বসে আছে। এগুলো কেন হবে?
”পুরো বিষয়টা খুব সহজভাবে দেখলে হবে না। এটার পেছনে অনেক বিষয় আছে। একটি পক্ষ আছে যারা চাচ্ছে না যে আমাদের কারখানাগুলো চলুক। তারা পরিকল্পিতভাবে শ্রমিকদের দিয়ে নানা রকম সমস্যা তৈরি করছে। তারা সত্যিকার অর্থে এই দেশের শত্রু। আরএমজিটা ড্যামেজ করা গেলে এই দেশের ক্ষতি করা যাবে। ৪০ লাখ শ্রমিক যদি ভালো থাকে বাংলাদেশ ভালো থাকবে।
’টিএনজেড থাকছে না’
দুই দফায় গাজীপুরের পোশাক কারখানা ‘টিএনজেড অ্যাপারেলসকে’ টাকা দিয়েছে সরকার। কিন্তু কোম্পানিটির চারটি কারখানার শ্রমিকদের বেতন বকেয়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।
সচিব বলেন, “এই কোম্পানি আর চালানো যাচ্ছে না। নভেম্বরে ১৬ কোটি টাকা দিয়েছি, এখন আবার ১৭ কোটি টাকা বকেয়া হয়েছে। আবার কোরবানিতে ১৫ কোটি টাকা বকেয়া হবে, এটা তো হতে পারে না। সিদ্ধান্ত হয়েছে টিএনজেডের চারটি কারখানাই বন্ধ করে দেওয়া হবে। এসব কারখানার শ্রমিক সংখ্যা ৩২০০ জন।”
টিএনজেডের ক্ষেত্রে বেক্সিমকো মডেল প্রয়োগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেখানে ৪০ হাজার শ্রমিকের সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকদের বকেয়া যেভাবে মালিক পরিশোধ করেছে, টিএনজেডের বকেয়াও মালিক পরিশোধ করবে। তাকে দেশে ফিরতে সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
”তার রিবুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড এলার্ট জারি করব। তার ওপর কোনোরকম ট্রাস্ট রাখতে পারছি না। সে বিদেশে বসে আছে, দেশে আসার লক্ষণ নেই।”
টিএনজেডের সমস্যার সমাধানে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তাদের সম্পদ মূল্যায়ন করা হবে। শ্রমিকদের পাওনা কত আছে বের করা হবে। সম্পদ বিক্রি করলে কীভাবে কী হবে সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তারা দেবে। আজ থেকে কারখানাটি আমরা হেফাজতে নিয়েছি।”