এলাকার বাজারে খুচরা বিক্রেতারা বেশি দাম চান। পাইকারি বাজার দাম কমার তথ্য ক্রেতারা জানেন না, এই সুবিধা নিয়ে থাকেন তারা।
Published : 16 Feb 2024, 08:24 PM
শীতের সবজির অস্বাভাবিক দর দেখে শীতকাল পার করা ক্রেতারা বসন্তে এসে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন।
বছর জুড়ে ভোগানোর পর আলুর দাম অবশেষে গত বছরের একই সময়ের কাছাকাছি নেমেছে। ৩০ টাকা বা তার চেয়ে কমে চলে আসার পর শীতকালীন অন্য সব সবজির দামই পড়েছে।
তবে পেঁয়াজের ‘মান’ ভাঙছেই না। আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজের শেষ সময়ে ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় দাম কমার সম্ভাবনাও দেখছেন না ব্যবসায়ীরা। মাসের শেষে বা মার্চের শুরুতে হালি পেঁয়াজ বাজারে এলেই দাম কমবে বলছেন তারা।
শুক্রবার কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে আলু বিক্রি হয়েছে ২২ থেকে ২৩ টাকা কেজিতে। খুচরায় ২৫ থেকে ২৬ টাকা। তবে টাউনহল বাজারে খুচরায় আলুর কেজি ৩০ টাকা, যা কারওয়ানবাজার থেকে ২০ শতাংশ বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার শীতে আলুর উৎপাদন এক মাস পিছিয়েছে। যে কারণে মৌসুমেও ৬০ বা ৭০ টাকা কেজি আলু বিক্রি হয়েছে। এখন যে দাম সেটি গত বছরের একই সময়ের কাছাকাছি।
সরকারি বিপণন প্রতিষ্ঠান টিসিবির হিসাব বলছে, গত বছর একই সময়ে আলুর কেজি ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। এবার তা ২৪ শতাংশ বেশি, যদিও দুই সপ্তাহ আগে গত বছরের তুলনায় ৯০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।
কারওয়ান বাজারে খুচরায় আলু বিক্রি করেন আকবর আলী। তিনি বলেন, “দুই দিনে দুই থেকে তিন টাকা কমছে। এর আগে ২৮ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতাম। আর এখন ২৬ থেকে ২৭ টাকা কেজি। পাইকারিতে আমরা কিনি ২২ থেকে ২৩ টাকায়।”
আলুর দাম কমে আসার পর দুই সপ্তাহ আগের ৫০ টাকার ফুলকপি নেমেছে ৩০ টাকায়, কারওয়ানবাজারে তা আরো কম, ২৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
টমেটোর দাম একইভাবে ৭০ থেকে ৮০ টাকা থেকে নেমেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। বিচিওয়ালা শিমের দাম ১০০ টাকা থেকে নেমেছে ৫০ টাকায়, আর বিচি ছাড়া শিম ২৫ থেকে ৩০ টাকাতেই পাওয়া যাচ্ছে কারওয়ানবাজারে।
ভালোমানের ভাজির বেগুনের দাম নেমেছে ৫০ টাকায়, লাউয়ের দাম নেমেছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
সবজি বিক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, “দাম ভালোই কমছে। ৩ থেকে ৪ দিন আগে ছিল লাউয়ের দাম ছিল ১০০ টাকার উপরে।”
কৃষিপণ্য: বিধিমালা কিতাবে রেখে ‘ভুল পথে’ বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা
রোজায় স্থিতিশীল বাজারে পণ্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে কমবে: সংসদে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
শিমের বিচি গত রোববার রাতে কারওয়ানবাজারে পাইকারিতেই দেখা গেছে ১৫০ থেকে ১৬০, বৃহস্পতিবার রাতে সেই বিচি খুচরাতেই দেখা গেছে ১০০ থেকে মানভেদে ১৩০ টাকা।
এলাকার বাজারে খুচরা বিক্রেতারা অবশ্য একজোট হয়ে বেশি দাম রাখার চেষ্টা করে থাকেন। পাইকারি বাজার দাম কমার তথ্য ক্রেতারা জানেন না, এই সুবিধা নিয়ে থাকেন তারা।
পেঁয়াজের ‘মান ভাঙবে’ কবে?
শুক্রবারও পাইকারিতে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে মান ভেদে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি। খুচরায় তা কারওয়ানবাজারে ১১৫, এলাকার বাজারে ১২০ টাকা পর্যন্ত।
অথচ টিসিবির তথ্য বলছে এক বছর আগে বছরের এই সময়ে দেশি পেঁয়াজের দর ছিল ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ পাওয়া গেছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার দাম তিন গুণ।
ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর এবার আমদানি করা পেঁয়াজ নেই, যেটি বাজারে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজ চাষিরা ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকার তথ্য জানেন। তারা কম দামে বিক্রি করতে চাইছেন না।
কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি দোকান মেসার্স মাতৃ ভান্ডারের বিক্রেতা সজিব শেখ বলেন, “কৃষক চাইলে দাম কমে, না চাইলে বাড়ে। কৃষক যখন দেখে দাম কম, তখন ক্ষেত থেকে তোলে না। তখন একটা সংকট তৈরি হয়, দাম বেড়ে যায়। আর দাম বাড়লে কৃষক মাল আনে বাজারে।”
একই বাজারে খুচরা বিক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, “আগের রাতে ১১৫ টাকায় কিনতে হইছে পাইকারিতেই, খুচরায় বেচছি ১২০ টাকা। গত রাতে পাইকারি ছিল ১০৫ থেকে ১০৬ টাকা, খুচরা বেছতাছি ১১০ টাকায়।”
মাঠের কী চিত্র- সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, “মেহেরপুরের গত বছরে যে পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি গেছে, সে পেঁয়াজ এখন ১০০। নিয়ন্ত্রণ কৃষকের হাতে।”
মোহাম্মদপুরের টাউনহল বাজারে আলু-পেঁয়াজের খুচরা বিক্রেতা মো. রুহুল আমিন বলেন, “পাঁচ দিন আগে দাম ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা, এখন আবার ১১০-১২০। আমাদের কেনা লাগছে ১০৫ টাকার উপরে।”
মুড়িকাটার শেষ সময়ে পেঁয়াজের ‘তিন গুণ দর’, ‘আগের অবস্থানে’ গরুর মাংস
খুচরায় চালে কেজিতে ১০ টাকা, মাছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা
পেঁয়াজের না কমলেও কমেছে রসুনের দর। এই বিক্রেতা জানিয়েছেন, আগের সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে কমেছে ২০ টাকা।
একই বাজারের সাব্বির আহমেদ বলেন, “দেশি পুরান রসুন ২৫০ টাকা কেজি আর নতুনটা ১৬০ টাকা। ইন্ডিয়ান লাল রসুন বেচি ১৮০ টাকায়।”
দাম কিছুটা কমলেও টিসিবির হিসাব অনুযায়ী দেশি রসুনের দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬২ শতাংশ বেশি। আমদানি করা রসুন কিনতে ২৭ শতাংশ বেশি খরচ করতে হচ্ছে।