মুড়িকাটার শেষ সময়ে পেঁয়াজের ‘তিন গুণ দর’, ‘আগের অবস্থানে’ গরুর মাংস

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দর ৮০ থেকে হয়ে গেছে ১২০ টাকা। এক বছর আগে ছিল সর্বোচ্চ ৪০। শীতের আগে পড়তে থাকা গরুর মাংস চড়েছে ৭৫০ এ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2024, 01:59 PM
Updated : 9 Feb 2024, 01:59 PM

আলোচিত দুই পণ্যের মধ্যে আলুর দাম অবশেষে ৩০ টাকার ঘরে নামলেও পেঁয়াজের দর আবার লাফ দিয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুম শেষের পথে, ‘হালি’ নামে মূল পেঁয়াজটা আসতে আরো সপ্তাহ তিনেক সময় লেগে যাবে। এই সময়ে ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকার কারণে দামে দিয়েছে লাফ।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার বাজারে গিয়ে ক্রেতারা ১২০ টাকা কেজি পেঁয়াজ দেখে অবাক হয়েছেন। বছরের এই সময়ে শতকের ঘর পার করা পেয়াঁজের দাম দেখার অভিজ্ঞতা নেই কারো।

সরকারি সংস্থা টিসিবির দৈনিক বাজারদরের হিসাব বলছে, এক বছর আগে আজকের এই দিনে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় তিন গুণ দরে রান্নার উপকরণটি কিনতে বাধ্য হচ্ছে ক্রেতারা।

টিসিবিই জানাচ্ছে, পণ্যটির দাম এক সপ্তাহেই বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

বিক্রেতারা বলছেন, বৃহস্পতিবার পাইকারিতে পেঁয়াজের কেজি ছিল ১০০ টাকা, যা শুক্রবার হয়েছে ১১৫ টাকা। গত সপ্তাহে ছিল ৮০ টাকা কেজি।

কারওয়ান বাজারের খুচরায় পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. আব্দুল জব্বার বলেন, “আজ ১২০ টাকা কেজি। কিন্তু গতকাল বেচছি ১০৫ টাকা থেকে ১০৮ টাকা।”

একই বাজারে পাইকারি দোকান মেসার্স আনোয়ার এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা মো. হৃদয় বলেন, “আমার কাছে ফরিদপুরের যে পেঁয়াজটা আছে, সেটা আজ ১১৫ টাকা কেজি। গতকাল বেচছি ১০০ টাকা থেকে ১০৫ টাকায়।”

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মোকামে দাম বাড়ছে। আমাদেরটা গতকাল আনা। কিন্তু মোকামে আজকের দাম আরও বেশি। মোকামেই আজ ১১৫ টাকা শুনলাম।”

কেন দাম বাড়ছে- এই প্রশ্নে তিনি বরেন, “এটা মুড়িকাটা পেঁয়াজ, সিজন এখন শেষ তাই সংকট হবে। এই সংকট ২০ থেকে ২৫ দিনের মত থাকবে। এর মধ্যে ‘হালি পেঁয়াজ’ বাজারে আসলে দাম একেবারেই কমে যাবে।”

ফরিদপুর থেকে পেঁয়াজ কিনে ঢাকার কারওয়ান বাজারে সরবরাহ করেন রশিদ বিশ্বাস। তিনি বলেন, “মুড়িকাটা পেঁয়াজের এখন শেষ সময়। মোকামে কমে গেছে। আজ ফরিদপুরে আমার কেনা পড়েছে ১১৩ টাকা। ঢাকায় যাতায়াতসহ সব খরচ মিলিয়ে ১১৭ টাকা পড়বে।”

এই বাড়তি দর বেশিদিন থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১০ থেকে ১৫ দিন পরে ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকায় নেমে আসবে। হালি পেঁয়াজ বাজারে আসলে এই সংকট তখন থাকবে না। তাই রমজানের আগে এবার দাম কমবে।”

তবে পেঁয়াজ কিনতে আসা নাজমুল আলমের ধারণা এবার রোজায় এই পণ্যটি ভোগাবে। তিনি বলেন, “চার-পাঁচদিন আগেও আমি ৯৫ টাকায় কিনছি। সরবরাহ তো আছে। তাহলে দাম বেশি কেন? এভাবে তারা বাড়ানোর সুযোগ পেতে থাকলে রোজায় ২০০ টাকায় বিক্রি করবে।”

টাউনহল বাজারে আলু-পেঁয়াজের বিক্রেতা মো. রুহুল আমিন বলেন, “রমজানকে কেন্দ্র করে পেঁয়াজের বাজারকে স্থিতিশীল রাখার জন্য মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আনা উচিত। না হলে পেঁয়াজের দাম আরও লাফাবে। দেশি পেঁয়াজ এখন বাজারে যা আছে তাতে কাভার করা যাবে না। পেঁয়াজের সংকট আছে। বর্তমানে বাজারে যে পেঁয়াজ আছে তাতে ১৫ দিনও যাবে না।” 

আলুর দাম কমলেও লাউয়ের ‘আজাইরা দাম’

শীতে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে আলু কিনে বিস্মিত ক্রেতারা অবশেষে দাম নামতে দেখেছে।

টাউনহল বাজারের বিক্রেতা মো. রুহুল আমিন বলেন, “আলু এখন একেবারেই সস্তা। ৩০ টাকা কেজি। পাইকারিতে তো ২৫ টাকা কেজি। এটার দাম আর বাড়বে না। বাজারে পর্যাপ্ত আলু আছে।”

কারওয়ান বাজারে ছোট আকারের আলু ২০ টাকা থেকে ২২ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

তবে এখনো পণ্যটির দর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত বেশি বলে জানাচ্ছ টিসিবি।

তাদের হিসাব বলছে, শুক্রবার সবজিটির দর মানভেদে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ২২ থেকে ২৫ টাকা।

আলুর পড়তি দর সবজির দামও কিছুটা কমিয়েছে। শিমের দাম নেমেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, যা দুই সপ্তাহ আগেও ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকার ঘরে। বিচিওয়ালা শিমের দাম ১০০ টাকা থেমে নেমেছে ৭০ এর ঘরে।

ফুলকপি ও পাতাকপি ৪০ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে, মরিচের দর ৬০ থেকে ৮০ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে কারওয়ানবাজার।

তবে লাউয়ের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা দেখে মেজাজ খারাপ ক্রেতাদের।

মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে বিক্রেতা আসিফের কাছে দাম শুনে বিরক্তি প্রকাশ করে

আসমা আক্তার বললেন, “ধুরো লাউ-ই নিমু না। আজাইরা দাম। আগুন ধরাইছেন বাজারে।” 

গরুর মাংসের দর বেড়ে আগের অবস্থানের কাছে

শীতের আগে আগে গরুর মাংসের দাম কমানোর যে ধারা দেখা দিয়েছিল, তার উল্টো স্রোত দেখা যাচ্ছে বাজারে।

চাহিদা কমে আসার কথা বলে দেশের বিভিন্ন এলাকা, এমনকি ঢাকাতেও ৬০০ টাকা বা তার চেয়ে কমে মাংস বিক্রি শুরু হয়েছিল।

এর মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ‘বাজারে শৃঙ্খলা’ ফেরানোর কথা বলে মাংস ব্যবসায়ীদের ডেকে মত বিনিময় সভা করার পর ব্যবসায়ীদের একাংশ একজোট হয়ে দাম ঠিক করে ৬৫০ টাকা। তারা ঘোষণা দেয়, এই দর থাকবে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত।

ভোট শেষেই দাম বাড়াতে থাকে তারা। প্রথম সপ্তাহে ৩০ টাকা বাড়িয়ে ৬৮০, পরের সপ্তাহে ৭০০, তার পরের সপ্তাহে ৭২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায় ঢাকার বাজারগুলোতে।

ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় শুক্রবারে মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজারে সাত্তার গোস্ত বিতান ও মো. ইউসুফের গরুর মাংসের দোকানে দাম দেখা গেল ৭৫০ টাকা। দাম আরো বাড়বে, সেটাও বলছিলেন তারা।

সাত্তার গোস্ত বিতানের বিক্রেতা রহিজ মিয়া বলেন, “গত সপ্তাহ থেকে গোশতের দাম বাড়তি। আর ৭৫০ টাকা হইছে ৩ দিন আগে থেকে। কয়েকদিন পরে দাম তো আরও বাড়ব।”

ক্রেতাদের মনেও একই আশঙ্কা।

মাংস কিনতে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, “আগের মত আটশতে পৌঁছাবে মনে হচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়াই এবার দাম বাড়াচ্ছে তারা। তাদের লাগাম টানা উচিত।”

গরুর মাংসের পড়তে দাম ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৫০ এ নামিয়ে এনেছিল। এখন গরুর বাড়তি দর দাম বাড়াচ্ছ মুরগিরও।

শুক্রবার টাউনহল বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। দামাদামি করে কেউ কেউ ২০০ টাকাতেও কিনতে পেরেছেন।

গত মঙ্গলবার মগবাজারের চারুলতা বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম দেখা গেছে ১৯০ টাকা। 

মাংসের পাশাপাশি চড়েছে ডিমের দামও। ডিসেম্বরে ৪০ টাকা হালিতে নেমে আসা ডিম আবার চড়েছে ৫০ এ। অর্থাৎ ডজন ১৫০। অথচ গত মঙ্গলবার চারুলতা বাজারে ১৪০ টাকা ডজন দেখা গেছে।