চাঁদ রাতের ঈদবাজারে

ঈদের আগ মুহূর্তে তুলনামূলক কম দামে পণ্য ছেড়ে দেন দোকানিরা। তাই অনেকেই চাঁদ রাতে ভিড় করেন বিপণি বিতানে।  

শেখ আবু তালেববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2023, 04:45 AM
Updated : 22 April 2023, 04:45 AM

সোনার গয়নার দাম নাগালের বাইরে; ঈদে পোশাকের রঙে মানাসই চুরি, কানের দুল, ব্রেসলেটের মতো গয়না কিনতে নারীদের ভরসা এখন ইমিটেশনে; দূর থেকে সোনার মতই দেখতে এসব পণ্যর রয়েছে মনলোভানো নকশা।

অলঙ্কার আর প্রসাধনী কিনতে চাঁদ রাতে, অর্থাৎ ঈদের আগের রাতে বাজারে ভিড় করেছিলেন কিশোরী, তরুণী আর নারা বয়সের নারীরা।

আবার কেউ এসেছিলেন ঈদের দিনের সাজের জন্য মেহেদী রাঙাতে। সঙ্গে আসা ভাই, স্বামী, পিতা-মা এই সুযোগে সেরে ফেলছেন বাকি রয়ে যাওয়া কেনাকাটা।

শুক্রবার সন্ধ্যায় শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার ঘোষণা দেয় চাঁদ দেখা কমিটি। ২৯ রমজান শেষে শনিবার ঈদ উদযাপন করছে বাংলাদেশের মুসলমানরা।

সেই সন্ধ্যায় ঈদের চাঁদ দেখা যায়, সেটাই চাঁদ রাত। এই রাতে বিপণি বিতানগুলোতে বেচাকেনা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। পুরো রোজার মাস ঈদের বিকিকিনি সেরে ঈদের আগ মুহূর্তে তুলনামূলক কম দামে পণ্য ছেড়ে দেন দোকানিরা। তাই অনেকেই চাঁদ রাতে ভিড় করেন বিপণি বিতানে।  

অনেক ব্যবসায়ীও এই রাতেই কেনা-কাটা সারেন। ফলে রাজধানীর শপিং মলগুলো ভোর পর্যন্ত খোলা থাকে।

রাজধানীর অন্যতম পুরনো শপিং মল মালিবাগের মৌচাক মার্কেট, ফরচুন শপিং কমপ্লেক্স, এর আশপাশের বাজার ও শান্তি নগরের টুইনটাওয়ার কনকর্ড শপিং কমপ্লেক্সে রাত গভীর হলে জমে উঠে কেনাকাটা।

শুক্রবার রাতে এসব বিপণিবিতানে ঘুরে কসমেটিকস পণ্য, হাত ব্যাগ, ওড়না ও ইমিটেশনের গয়নার দোকানে ভিড় দেখা গেল বেশি। অবশ্য পাঞ্জাবি, জুতা, থ্রি-পিসের দোকানেও ক্রেতা সমাগম ছিল চোখে পড়ার মত।

শেষ মহূর্তের কেনাকাটায় মৌচাক শপিং কমপ্লেক্সের কোনো দোকানি ক্রেতাকে ফেরাচ্ছিলেন না। ক্রেতার বলা দরের সঙ্গে মিল রেখে দরদাম করে পণ্য ছেড়ে দিচ্ছিলেন।

এমনও দেখা গেল, দরদামে না মেলায় ক্রেতা দোকান থেকে বাইরে চলে গেছেন, পরে দোকানের কর্মী পিছু পিছু গিয়ে ক্রেতাকে ফিরিয়ে আনছেন।

মৌচাক শপিং কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় সব বয়সী নারী-পুরুষের জুতা ও স্যান্ডেলের দোকান ‘মাস্টার সু-কালেকশস’ এর ব্যবস্থাপক আবুল হাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার তো ক্রেতা আগের বছরের চেয়ে কম। করোনার পরের বছর ২০২১ সালেও বিক্রি ভালো ছিল। টাকা যে কোথায় গেল জানি না।

“তাই কেনা দাম আর সামান্য মুনাফা হলেই বিক্রি করে দিচ্ছি। পণ্য জমিয়ে তো লাভ নেই। কর্মীদের বলে দিয়েছি, কোনো ক্রেতাই যেন ফিরে না যায়।”

খিলগাঁও থেকে স্ত্রীকে সঙ্গে করে মৌচাকে এসেছিলেন কাওছার হোসেন। স্ত্রীর পছন্দ করা দুই জোড়া জুতার দাম ২ হাজার টাকা দিতে রাজি তিনি। দোকানি চান আরো ৩০০ টাকা।

দাম না বাড়িয়ে দোকান থেকে বাইরে চলে যান কাওছার হোসেন। কিছু দূর যাওয়ার পর মাস্টার সু কালেকশনের এক কর্মী পিছু পিছু গিয়ে ফেরত আনেন তাকে। শেষ পর্যন্ত ২ হাজার টাকাতেই রফা হয়। কাওছার হোসেনের মত আরো কয়েকজনকে এভাবেই দোকানে ফেরত নিয়ে আসতে দেখা যায়।

গয়না মেলাতে যায় সময়

মালিবাগ চৌধুরী পাড়া থেকে মৌচাক শপিং কমপ্লেক্সে ঈদ পোশাকের রঙের সঙ্গে ‘ম্যাচ করে’ হাতের চুরি ও কানের দুল কিনতে আস শারমিন আরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “কাচের কারুকাজ করা কানের দুল কিনতে এসেছি, যেটা পুরো কানের উপরে ভেসে থাকবে। অনেক খুঁজে এক দোকানে পেলাম। এখন কিনছি ব্রেসলেট।”

ফরচুন শপিং কমপ্লেক্সে অলঙ্কার কিনে দোকান থেকে বেরিয়ে আয়শা জামান বললেন, “ওড়নার সঙ্গে ম্যাচ করে চুরি কিনতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে, সহজে পাইনি।”

ইমিটেশনে আগ্রহী হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “চমৎকার সব ডিজাইন। স্বর্ণ দিয়ে এসব ডিজাইন করতে গেলে ম্যালা খরচ। বছর শেষে এক ডিজাইন আর পড়তে ভালো লাগে না। ইমিটেশন ফেলে দিলে বা কাউকে দিয়ে দিলেও সমস্যা নাই।”

মেহেদী সাজে গভীর রাতে

মৌচাক শপিং কমপ্লেক্সের বিপরীত দিকেই ফরচুন কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় প্রতি ঈদে মেহেদী দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় দোকান মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে। এবারও সেখানে মোবাইলে ডিজাইন ঠিক করে হাত রাঙাতে হাজির হয়েছেন কাসফিয়া। আর মোবাইলের ছবি দেখে সুনিপুণভাবে তার হাতে মেহেদী রাঙিয়ে দিচ্ছিলেন অধরা।

হাতে বানানো কেক সরবরাহকারী অধরা একজন নারী উদ্যোক্তা। রমজানে কেকের চাহিদা কম থাকে। প্রতি ঈদের সময়ে তিনি চলে আসেন মেহেদীর সাজে সাজাতে। নকশাভেদে একহাতে মেহেদী রাঙাতে ৫০০ টাকা পর্যন্ত নেন তিনি।

এই আয়ের একটি অংশ চলে যায় আয়োজকদের পকেটে, যারা তাদের চুক্তিতে নিয়ে আসেন। তবে বেশিরভাগ থেকে যায় বলে জানান অধরা।

মেহেদী পণ্য বিক্রেতারা মূলত এ আয়োজনটি করে থাকেন দোকান মালিকদের ডাকে। মেহেদী বিক্রি ও সাজিয়ে দেওয়া বাবদ আয় থেকে তারা কমিশন নিয়ে থাকেন।

এই ফ্লোরে কাসফিয়ার মত নিজ হাতে মেহেদী রাঙাতে এসেছেন কিশোরী সুমাইয়া শিমু, শামসুন্নাহার ও গৃহিণী মুমতাহিনা বেগম।

চাঁদ রাতে রাজারবাগ থেকে নিজের জন্য পাঞ্জাবি ও জুতা কিনতে আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সে এসেছিলে হামিদুর রহমান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চাঁদ রাতেই নিজের জন্য কিছু কিনি। দরদাম করে যখন মেলে তখনই কিনি। কি করব, নিজেরও তো ছোট-খাটো ব্যবসা আছে।’’

টুইন-টাওয়ার কনকর্ড শপিং কমপ্লেক্সের ‘ট্রাস্ট মি’ দোকানের কর্ণধার মাহবুব রহমান বললেন, “কসমেটিকস পণ্যর মধ্যে লিপস্টিক, আইলাইনার, ফেসিয়াল ও ফারফিউম বিক্রি হচ্ছে বেশি। তবে গতবারের মত গ্রাহক নেই। ২০ রমজানের পর কোনো পণ্য উঠাইনি। যা উঠাইছি, তাই শেষ হয়নি। এবার বেচা-কেনা অর্ধেকে নেমেছে।”