‘সহায়তা চেয়েছে; দেওয়া হবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি”, বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র।
Published : 19 Dec 2024, 11:35 PM
‘গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে’ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১৩০০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা চেয়েছে পদ্মা ব্যাংক, যাদের ঘাড়ে বর্তমানে ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা আমানত ফেরত দেওয়ার দায় রয়েছে।
তীব্র তারল্যে সংকটে থাকা পদ্মা ব্যাংক গত সপ্তাহে এই আবেদন করে। সেখানে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার দায়কেই যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়।
ওই আবেদনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা ১৩০০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা চেয়েছে। দেওয়া হবে কিনা, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কাজি মোহাম্মদ তালহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছি না, তাই আমরাও তারল্য সহায়তা চেয়েছি। অন্যান্য ব্যাংক তারল্য সহায়তা পাচ্ছে। ৫ অগাস্টের পর বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের কোনো তারল্য সহায়তা দেয়নি।”
গেল নভেম্বরে ৬ ব্যাংককে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সঙ্গে গভর্নরের পক্ষ থেকে বার্তা আসে, একদিকে টাকা ছাপানো হচ্ছে, অন্যদিকে টাকা বাজার থেকে তুলেও নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে’ রাখার প্রচেষ্টা চলছে।
২০১৩ সালে চালু হওয়া ফারমার্স ব্যাংক তিন বছর পার করেই ধুঁকতে শুরু করে। ২০১৯ সালে ব্যবস্থানার সঙ্গে নাম পাল্টে হয় পদ্মা ব্যাংক। সে সময় ব্যাংকটি খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৭০ কোটি টাকা।
পুনর্গঠন করে আর নাম পাল্টে লাভ কিছু হয়নি। বরং চার বছর পর ২০২৩ সালে খেলাপি ঋণ আরও ছয়শ কোটি টাকা বেড়ে যায়।
গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমানত দাঁড়ায় ছয় হাজার ১৪১ কোটি টাকা। এই আমানতের মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবিরই এক হাজার কোটি টাকা।
কাজি মোহাম্মদ তালহা বলেন, “আমানতের দায় দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা। নতুন বোর্ড হয়েছে, আমরা পরিকল্পনা করছি কীভাবে টাকা পরিশোধ করা যায়।
“গ্রাহকদের টাকা দেওয়ার জন্য ৩ থেকে ৪ মাসের জন্য ১৩০০ কোটি টাকা চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আবেদন করা হয়েছে। গ্রাহকদের টাকা দিতে পারলেই ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমি মনে করি।”
টানা পাঁচ বছর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, যিনি আগে রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এবং কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডেরও চেয়ারম্যান ছিলেন।
নাফিজ সরাফাত দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার কোনো উন্নয়ন হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের দশটি দুর্বল ব্যাংকের তালিকাতেও ছিল পদ্মা ব্যাংক।
এমন অবস্থায় গত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মার একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। একীভূত হওয়ার শর্ত হিসেবে নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমাও দেয় দুই ব্যাংক।
কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন একীভূতকরণের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউ।
তীব্র অর্থ সংকট: নতুন করে সহায়তা চায় গ্লোবাল ইসলামী ও পদ্মা ব্যাংক
অর্থ আত্মসাৎ: সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও নাফিজ সরাফতের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পদ্মা ব্যাংকে জলবায়ু তহবিলের টাকা: ২০৩৮ নয়, আগেই ফেরতের পদক্ষেপ
সস্ত্রীক নাফিজ সরাফাত ও নজরুলের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
অর্থ লোপাট: অবশেষে নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক