‘অস্তিত্বহীন’ প্রতিষ্ঠান খুলে ফারমার্স ব্যাংকের ৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
Published : 23 Oct 2024, 06:58 PM
সুলতানা মৎস্য খামার নামে ‘অস্তিত্বহীন’ প্রতিষ্ঠান খুলে ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
সংস্থার উপপরিচালক সৈয়দ আতাউল কবির বুধবার জামালপুরে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এ মামলা করেন।
মহিউদ্দিন ছাড়াও মামলায় আর সি এল প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক রাশেদুল হক চিশতি, মোহাম্মদ ফারুক, হিরণ রহমান, ইব্রাহিম খান, ফারমার্স ব্যাংকের বকশীগঞ্জ শাখার প্রধান মাসুদুর রহমান খান এবং একই শাখার সাবেক সহকারী অফিসার মো. ফখরুজ্জামানকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা যোগসাজশে অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করে সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। ফলে তারা মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের ৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা (সুদ ব্যতীত) আত্মসাতের মাধ্যমে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান সুলতানা মৎস্য খামারের নামে হিসাব খুলে সেখানে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করে প্রায় ৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, অবৈধ উৎস থেকে এই টাকা এসেছে।
“অবৈধ উৎস গোপন করার জন্যই এই টাকা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় স্থানান্তর, রূপান্তরের ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনার সময়কাল ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত।”
ফারমার্স ব্যাংকের অন্যান্য কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদক আগে মামলা করলেও সেখানে মহিউদ্দিন খানকে আসামি করা হয়নি; কিন্তু এখন ক্ষমতার পালাবদলের কারণে তাকে আসামি করা হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নে আক্তার হোসেন বলেন, “ফারমার্স ব্যাংকের অনেকগুলো ঘটনা আছে সেগুলো নেয়ে ধারাবাহিকভাবে মামলা হয়েছে। এই ঘটনাটির সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত, অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন মামলা অনুমোদন করেছে।”
আসামিদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তিনি বলেন, “আসামিদের কে কোন প্রক্রিয়ায় এই অপরাধ সংঘটিত করেছেন, তার বিস্তারিত বিবরণ মামলার এজাহারে রয়েছে।
“মামলা হয়েছে কমিশনের অনুমোদনক্রমে। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে, তদন্তকালে যাদের গ্রেপ্তার করার প্রয়োজন হবে, কিংবা আইনানুগ আরও যে কার্যক্রম গ্রহণ করার প্রয়োজন হবে, সবই তদন্তকারী কর্মকর্তা গ্রহণ করবে।”
সাবেক আমলা মহীউদ্দীন খান আলমগীর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১২-১৩ সময়ে তিনি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১৩ সালে ফারমার্স ব্যাংক অনুমোদন পেলে মহীউদ্দীন খান আলমগীর হন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। নজিরবিহীন ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠার চার বছর না যেতেই মুখ থুবড়ে পড়ে ব্যাংকটি।
ধারাবাহিকভাবে গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৭ সালে ফারমার্স ব্যাংকে হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বছরই মহীউদ্দীন খান আলমগীর ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ ছাড়েন।
ক্ষমতার পালাবদলের পর মহীউদ্দীন, তার স্ত্রী সিতারা আলমগীর এবং ছেলে জয় আলমগীরের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ।