“আমি চাই না কোনো কিছুর পতন হোক। কিন্তু দেখুন, অসুখ হলে কখনও কখনও ওষুধ খেতেই হয়।”
Published : 07 Apr 2025, 11:09 AM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বিদেশি পণ্যের ওপর আরোপ করা চড়া হারের শুল্ককে বর্ণনা করেছেন ‘ওষুধ’ হিসেবে। আর তার জেরে সপ্তাহের প্রথম দিন আরেক দফা ধস নেমেছে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারে।
ট্রাম্প সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যেসব দেশ এখন দেন দরবার শুরু করেছে, আরোপিত শুল্ক উঠিয়ে নিতে হলে তাদের বছরওয়ারি ‘অনেক টাকা’ দিতে হবে।
সোমবার দিনের শুরুতেই বড় ধরনের দরপতন দেখেছে এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের ফিউচার মার্কেটেও পতনের আভাস মিলেছে। বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন; তারা ভাবছেন, ট্রাম্পের শুল্ক পণ্যের দাম আরো বাড়িয়ে দেবে, তাতে চাহিদা কমে যাবে, বাজারের ওপর মানুষের আস্থা কমবে, এমনকি বিশ্বজুড়ে মন্দাও দেখা দিতে পারে।
বিশ্বের শতাধিক দেশের পণ্যে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে গলফ খেলতে ফ্লোরিডায় চলে গিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। রোববার সেখান থেকে ফেরার পথে এয়ার ফোর্স ওয়ানে তিনি সাংবাদিকদের ইংগিত দেন, শুল্কের ঘোষণার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজার থেকে যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মূলধন হাওয়া হয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে তিনি চিন্তিত নন।
তিনি বলেন, “আমি চাই না কোনো কিছুর পতন হোক। কিন্তু দেখুন, অসুখ হলে কখনও কখনও ওষুধ খেতেই হয়।”
ট্রাম্প বলেছেন, এই সপ্তাহান্তে ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক নেতার সঙ্গেই তার কথা হয়েছে। এ সপ্তাহেই কার্যকর হতে যাওয়া উচ্চ হারের শুল্ক আটকাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, “তারা এখন আলোচনায় আসতে চায়। কিন্তু তারা যদি প্রতি বছর আমাদের অনেক টাকা না দেয়, তাহলে কোনো আলোচনা হবে না।”
গত সপ্তাহের শেষে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণা বিশ্ব অর্থনীতিতে রীতিমত কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে। মার্কিন শুল্কের জবাবে চীন পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ ও মন্দার শঙ্কা জেগে উঠেছে।
উঁচু হারের এই শুল্ক আসলে কতদিন স্থায়ী হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না বিনিয়োগকারী ও রাজনৈতিক নেতারা। ট্রাম্প বিশ্ব বাণিজ্যের ধারা পুরো পাল্টে দিতে চাইছেন, না এটা তার অন্য দেশের কাছ থেকে ছাড় আদায়ের কৌশল, সেটা তারা বুঝতে পারছেন না।
রোববার সকালে টেলিভিশনের বিভিন্ন আলোচনায় ট্রাম্পের শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টারা এসব শুল্ককে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কৌশলগত অবস্থান হিসেবে তুলে ধরেন।
অর্থ মন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এনবিসি নিউজকে বলেন, গত বুধবার ওই শুল্ক ঘোষণার পর ৫০টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। তার ভাষায়, এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্প নিজেকে ‘সর্বোচ্চ সুবিধাজনক অবস্থানে’ নিয়ে গেছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক সিবিএস নিউজকে বলেন, এসব শুল্ক ‘কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ’ বলবৎ থাকতে পারে।
হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কেভিন হাসেট বলেন, এই শুল্কগুলো ফেডারেল রিজার্ভকে সুদের হার কমাতে চাপ দেওয়ার কৌশল নয়। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর কোনো ‘রাজনৈতিক চাপ’ থাকবে না।
জেপিমর্গান-এর অর্থনীতিবিদদের মতে, এই শুল্কের ফলে ২০২৫ সালের যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক জিডিপি ০.৩ শতাংশ কমবে—যেখানে আগে ১.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে বেকারত্বের হার ৪.২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫.৩ শতাংশ হতে পারে।
মার্কিন বিলিয়নেয়ার ফান্ড ম্যানেজার বিল অ্যাকম্যান ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা সমর্থন করেছিলেন। সেই তিনিই এখন মনে করছেন, ট্রাম্পের প্রতি ব্যবসায়ী নেতাদের আস্থা কমে যাচ্ছে।
অ্যাকম্যান সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্প যদি না থামেন, তাহলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।