চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
একপেশে ম্যাচে জোড়া গোল করেছেন রবের্ত লেভানদোভস্কি; জালের দেখা পেয়েছেন রাফিনিয়া ও লামিনে ইয়ামালও।
Published : 10 Apr 2025, 02:54 AM
বার্সেলোনার আক্রমণভাগ নিয়ে দলকে দেওয়া বরুশিয়া ডর্টমুন্ড কোচ নিকো কোভাচের সতর্কবার্তা কোনো কাজেই আসেনি। জালের দেখা পেয়েছেন বার্সেলোনার আক্রমণভাগের তিন তারকা। জার্মান ক্লাবটিকে একরকম উড়িয়ে দিয়ে সেমি-ফাইনালের পথে এগিয়ে গেছে হান্সি ফ্লিকের দল।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ার্টার-ফাইনালের প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ৪-০ গোলে জিতেছে বার্সেলোনা। বুধবার রাতে একপেশে ম্যাচে জোড়া গোল করেছেন রবের্ত লেভানদোভস্কি; জালের দেখা পেয়েছেন রাফিনিয়া ও লামিনে ইয়ামালও।
নতুন আঙ্গিকের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রাথমিক পর্বে দেখা হয়েছিল দল দুটির। ৩-২ গোলে জিতেছিল বার্সেলোনা। এবার জার্মান ক্লাবটিকে পাত্তাই দিল না তারা।
পঞ্চম মিনিটে প্রথম বড় সুযোগ তৈরি করে বার্সেলোনা। ডান দিক থেকে ইয়ামালের বাঁকানো শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন ডর্টমুন্ড গোলরক্ষক গ্রেগোয়া কোবেল।
পরের মিনিটে পায়ের কারিকুরিতে আরেকটি সুযোগ তৈরি করেন ইয়ামাল। তবে দুরূহ কোণ থেকে শট একটুর জন্য লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তরুণ ফরোয়ার্ড।
সপ্তম মিনিটে রাফিনিয়ার কাট ব্যাকে পেনাল্টি স্পটের কাছে বল পেয়ে যান রবের্ত লেভানদোভস্কি। পোলিশ স্ট্রাইকারের গতিময় শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন কোবেল।
প্রথম সাত মিনিটে তিনটি দারুণ সুযোগ তৈরি করা বার্সেলোনা ধরে রাখে চাপ।
২৫তম মিনিটে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। ফ্রি কিকে ইনিগো মার্তিনেসের হেডে বল পেয়ে যান পাউ কুবার্সি। তার শট কোবেলের হাতে লাগার পরও জালেই যাচ্ছিল, সহজাত প্রতিক্রিয়ায় ছুটে গিয়ে পা ছুঁয়ে গোল নিজের করে নেন রাফিনিয়া!
ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের পা ছোঁয়ানোর ব্যাপারটা শুরুতে অনেকে বুঝতে পারেননি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজের প্রথম গোল উদযাপনে মাতেন কুবার্সি। অভিনন্দন জানান সতীর্থরা। পরে রিপ্লে দেখে বোঝা যায়, লাইনে থাকার সময় রাফিনিয়ার পা স্পর্শ করেছিল বল।
চলতি আসরে বার্সেলোনা ফরোয়ার্ডের এটি ১২তম গোল।
৩৪তম মিনিটে প্রতি আক্রমণ থেকে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পান রাফিনিয়া। কিন্তু গোলরক্ষককে একা পেলেও তাড়াহুড়ায় ঠিক মতো শট নিতে পারেননি তিনি।
দুই মিনিট পর খেলার ধারার বিপরীতে সমতা ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ পায় ডর্টমুন্ড। আসরে ১০ গোল করা সেগু গেগাসি খুব কাছ থেকে বলে ঠিক মতো শটই নিতে পারেননি। নিশ্চিত গোল হজম থেকে বেঁচে যায় বার্সেলোনা।
৪০তম মিনিটে লেভানদোভস্কির বাইসাইকেল কিক যায় কোবেলের গ্লাভসে। পাল্টা আক্রমণে জেমি গিটেন্সের শট যায় সরাসরি বার্সেলোনা গোলরক্ষক ভয়চেখ স্ট্যান্সনির কাছে।
যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে ফের সুযোগ পান গেগাসি। জোরাল শটে পার্শ্ব জাল কাঁপান গিনির এই ফরোয়ার্ড।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্যবধান দ্বিগুণ করে বার্সেলোনা। ইয়ামালের ক্রসে রাফিনিয়া হেডে খুঁজে নেন লেভানদোভস্কিকে। অনেকটা ক্রসবারের নিচ থেকে হেডে বাকিটা সারেন অভিজ্ঞ পোলিশ স্ট্রাইকার।
প্রথম গোলে যেমন স্বার্থপরতা দেখান রাফিনিয়া, এই গোলে তেমন নিঃস্বার্থ ভূমিকা রাখেন। খুব ভালো জায়গায় থাকলেও নিজে গোলের চেষ্টা করেননি তিনি।
দুই গোল হজমের পর যেন আরও রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে ডর্টমুন্ড। একের পর এক আক্রমণে ভীতি ছড়াতে থাকে বার্সেলোনা। চার মিনিটের মধ্যে তৈরি করে চারটি বড় সুযোগ, এর একটি যায় জালে।
৬৩তম মিনিটে ফের্মিন লোপেসের গতিময় শট বেরিয়ে যায় পোস্টে লেগে। পরের মিনিটে লেভানদোভস্কির শট ফেরান গোলরক্ষক।
৬৫তম মিনিটে লোপেসের শট ব্লকড হয় বরুশিয়ার রক্ষণে। পরের মিনিটে তরুণ মিডফিল্ডারের কাছ থেকে বল পেয়ে গতিময় শটে জাল খুঁজে নেন লেভানদোভস্কি। ঝাঁপিয়ে হাত ছোঁয়ালেও জালে যাওয়া ঠেকাতে পারেননি কোবেল।
চলতি আসরে এটি লেভানদোভস্কির ১১তম গোল। নিজের সাবেক ক্লাব ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৮ ম্যাচে এটি তার ২৯তম গোল।
এরপর আক্রমণাত্মক ফুটবল শুরু করে ডর্টমুন্ড আর রক্ষণে মনোযোগ দেয় বার্সেলোনা।
গতিময় প্রতি আক্রমণ থেকে ৭৭তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ায় বার্সেলোনা। রাফিনিয়ার কাছ থেকে বল পেয়ে ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে পোস্ট ঘেঁষে ঠিকানা খুঁজে নেন ইয়ামাল।
এই গোলের পর এক সঙ্গে তিনজনকে তুলে নেন বার্সেলোনা কোচ ফ্লিক, তাদের একজন লেভানদোভস্কি। হ্যাটট্রিকের চেষ্টার খুব বেশি সুযোগ পেলেন না তিনি। বার্সেলোনার হয়ে শততম গোলের দেখা পেলেন না এই ম্যাচ, থামলেন ৯৯ গোল নিয়ে।
৮৯তম মিনিটে বার্সেলোনার জালে বল পাঠায় ডর্টমুন্ড। কিন্তু অফসাইডের জন্য মেলেনি গোল। একরাশ হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ে দলটি।
আগামী মঙ্গলবার ডর্টমুন্ডের মাঠে হবে ফিরতি লেগ।