দুদক বলেছে, এসব কোম্পানির ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ যেকোনো সময় স্থানান্তর করা হতে পারে। যে কারণে এগুলো অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
Published : 30 Dec 2024, 08:16 PM
এস আলম গ্রুপের বন্ধ আট কোম্পানির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার এসব কোম্পানির হিসাব অবরুদ্ধের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে চিঠি পাঠানোর তথ্য দিলেও বিস্তারিত জানাতে চাননি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এস আলম গ্রুপের এসব কোম্পানির নামে বিভিন্ন ব্যাংকে পরিচালিত হিসাবগুলোতে বিদ্যমান অর্থ যেকোনো সময় স্থানান্তর করা হতে পারে। যে কারণে হিসাবগুলো অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময়কার সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সাইফুল আলম মাসুদের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থপাচার, কর ফাঁকির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। সরকার পতনের পর থেকে তিনি বিদেশে রয়েছেন বলেই খবরে এসেছে। তার বিরুদ্ধে দুদকও অর্থপাচারের একটি অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে।
এরমধ্যেই গত ২৪ ডিসেম্বর কাঁচামাল না থাকাকে কারণ হিসেবে তুলে ধরে এস আলম গ্রুপের আটটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়, যেগুলোর মধ্যে চিনি, ইস্পাত ও ব্যাগ কারখানাও রয়েছে।
সোমবার বিএফআইইউতে পাঠানো দুদকের চিঠিতে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাস ও অন্যান্য দেশে এক বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান করছে দুদক।
''প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায় যে, এস আলম গ্রুপভুক্ত ৮ প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে পরিচালিত হিসাবগুলোতে বিদ্যমান অর্থ যেকোনো সময় স্থানান্তর করা হতে পারে। সেজন্য এস আলম গ্রুপভুক্ত ওই আটটি প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন তফশিলি ব্যাংকে পরিচালিত হিসাবগুলো অবরুদ্ধ বা ফ্রিজ করা প্রয়োজন।''
বন্ধ করা কোম্পানিগুলো হল- এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস, ইনফিনিটি সি আর স্ট্রিপস ইন্ডাস্ট্রিজ, এস আলম স্টিল, এম আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস-নফ, চেমন ইস্পাত গ্যালকো স্টিল এবং এস আলম ব্যাগ লিমিটেড।
এগুলোর মধ্যে গ্যালকো স্টিল ঢাকার নয়াবাজারে বাকি কোম্পানিগুলো চট্টগ্রামে অবস্থিত। এগুলোতে ১২ থেকে ১৪ হাজারের মত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা কর্মরত আছেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ ব্যবসা ও কারখানা চালু রাখতে অর্থ সংকটে পড়ে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে ও ভিন্ন নামে বিপুল অঙ্কের ঋণ নেওয়া শিল্পগ্রুপটির চেয়ারম্যান এস আলম বিদেশে চলে যাওয়ায় এখন নতুন করে ঋণ দেওয়া হচ্ছে না এ গ্রুপের কোম্পানিগুলোকে। এতে দৈনন্দিন কাজ চালাতেও চাপে পড়েছে কোম্পানিটি।
অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া ঋণ নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে এস আলম হিসেবে পরিচিত সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তদন্তও শুরু করেছে।
সরকার পতনের আগে ও পরে নানা কারণে আলোচিত ব্যবসায়িক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান এস আলমের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে অর্থপাচারের বিষয়টি সামনে আসে ২০২৩ সালের অগাস্টে। তখন এ বিষয়ে নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হলেও তা আর এগোয়নি।
সরকার পরিবর্তনের পর গত ১৮ আগস্ট আপিল বিভাগের একটি আদেশের কপি পায় দুদক, সেখানে অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। আপিল বিভাগের ওই আদেশে বলা ছিল, অভিযোগটি যথার্থ নয়। তবে দুদক বা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ চাইলে অভিযোগটি অনুসন্ধান করতে পারে।
এরপর দুদক তা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।