”ইপিবির তথ্য সঠিক ছিল না। কারণ তারা পোশাক রপ্তানির তথ্য বাড়িয়ে দেখাত,” বলেন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
Published : 28 Oct 2024, 11:55 PM
রপ্তানি আয়ের তথ্যের নতুন হিসাবে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় কমেছে ২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার, শতকরা হিসাবে যা ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
রপ্তানি আয় হিসাব করা নিয়ে বির্তক সামনে আসার পর তৈরি পোশাকের বছরওয়ারী মোট আয়ের তথ্য এই প্রথম প্রকাশ করল বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি আগের দুই অর্থবছরের চেয়ে কমে গেছে।
এর কারণ হিসেবে রপ্তানিকারকরা গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট ও বিদেশে চাহিদা কমে যাওয়াকে মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
সোমবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ বিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৬ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারের। আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে যা ছিল ৩৮ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করে মোট আয় আসে ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশই রপ্তানি হয়েছে পোশাক খাত।
তবে গত ২৯ অগাস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যালেন্স অব পেমেন্টের যে তথ্য প্রকাশ করে তাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রকৃত রপ্তানি আয় ৪০ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার বলা হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে রপ্তানি আয় নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল, সেদিন মোট রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করে সেটির সমাধান টানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সোমবার তৈরি পোশাক খাতের মূল্যায়ন বিষয়ক প্রতিবেদনে মোট রপ্তানি আয়ের নতুন পরিসংখ্যান আসায় এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকই এ নিয়ে দুই তথ্য দিচ্ছে- যেখানে আয়ের ব্যবধান ৩ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।
দীর্ঘদিন ধরে পোশাক খাতের রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। চলতি বছর এপ্রিল-মে মাসে আয়ের তথ্য হিসাব করার পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক সামনে আসার পর জটিলতা এড়াতে তারা আর তথ্য প্রকাশ করছে না।
এ জটিলতার আগে ইপিবি চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত পোশাক রপ্তানির তথ্য দেয়। তাতে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছর মে পর্যন্ত ১১ মাসে ৪৩ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হিসাব বলছে তা ৩৬ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার।
ইপিবির আগের হিসাবগুলোতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দেখানো হত অনেক বেশি। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫০ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়, যেখানে ইপিবি বলেছিল, এটি ৬৩ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনে বড় ধরনের ‘গড়বড়’ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের সরবরাহ করা রপ্তানি তথ্য ব্যবহার না করে এখন থেকে নিজস্ব পদ্ধতিতে তা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রকাশের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেয় ইপিবি।
পোশাক রপ্তানি কমছে কেন
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য সঠিক মন্তব্য করে নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইপিবির তথ্য সঠিক ছিল না। কারণ তারা পোশাক রপ্তানির তথ্য বাড়িয়ে দেখাত।
গত অর্থবছরে পোশাক খাতের আয় আগের দুই অর্থবছরের চেয়ে কম হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, গ্যাস সংকটের কারণেই মূলত এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কমেছে। সে কারণে পোশাকের ক্রয়াদেশ পাওয়া কমেছে।
“চলতি কয়েক বছর ধরে পোশাক কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ কমেছে। তাতে কাজ থামিয়ে রাখতে হচ্ছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো যারা এসব কারখানা থেকে পোশাক কেনেন তারা এ দিকে নজরে রাখে। যখন তারা জানতে পারে গ্যাস ও অন্যান্য সমস্যার কারণে সঠিক সময়ে রপ্তানি করা সম্ভব হবে না, তখন সেটারও একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।”
বিশ্ব বাজারে মন্দার কারণে চাহিদা কমার পাশাপাশি গত দুই বছর ব্যাংকে ঋণপত্র খুলতেও নানা রকমের বেগ পেতে হয়েছে। কারণ ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে নানা রকমের কড়াকড়ি আরোপ করেছিল, যোগ করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
মোহাম্মদ হাতেমের দাবি, গত বছর কাস্টমস থেকে পোশাক ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হয়েছে। বিভিন্ন অজুহাতে পণ্য আটকে রাখা হয়েছিল, তাতে পণ্য জাহাজীকরণে দেরি হয়েছে।
চলতি অর্থবছরেরও ‘সময় খারাপ’ যাওয়ার দাবি করে তিনি বলেন, “কারণ প্রথম তিন মাস রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সব কিছু স্থবির ছিল। গ্যাসের সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। অর্থ উপদেষ্টাসহ বর্তমান সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।”
এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে আয় কত
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, তৈরি পোশাক খাতে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে এর ঠিক আগের প্রান্তিকের তুলনায় রপ্তানি কমেছে ৩৬ দশমিক শূন্য ২ দশমিক শতাংশ।
এ সময়ে বিদেশে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৮ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। এর তিন মাস আগে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত যা ছিল ১৩ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানি আয় নিয়ে 'ধোঁয়াশা' কাটাল বাংলাদেশ ব্যাংক
২০২৩-২৪ অর্থবছর: রপ্তানি আয় ১১.৫% বাড়ানোর লক্ষ্য