২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৪০ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় এসেছে দেশে, বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
Published : 30 Aug 2024, 01:58 AM
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির সঙ্গে রপ্তানি আয় নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল, অবশেষে তার সমাধান টানল বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রকৃত রপ্তানি আয় কত, সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪০ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় এসেছে দেশে।
সমস্যা শুরু হয়েছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১০ মাসে রপ্তানি আয় নিয়ে ইপিবির দেওয়া তথ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের মধ্যকার একটি বড় পার্থক্য নিয়ে।
গত অর্থবছরের ১০ মাসে ৪৭ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের তথ্য দিয়েছিল ইপিবি। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছিল, রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। দুই সংস্থার তথ্যে ব্যবধান ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলার।
এখন সেই বিতর্ক কাটিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার তথ্য দিল, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১২ মাসে মোট রপ্তানি আয় এসেছে ৪০ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। এই হিসাব অনুযায়ী, অর্থবছরের শেষ দুই মাসে সাত বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি রপ্তানি আয় এসেছে।
রপ্তানি আয়ের তথ্যে কয়েকবছর ধরে দুই সংস্থার মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫০ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়, যেখানে ইপিবি বলেছিল, এটি ৬৩ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫২ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় আসার তথ্য দিয়েছিল, যেখানে ইপিবি বলেছিল এটি ৬০ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।
গত জুলাই মাসে পণ্য রপ্তানির তথ্যে গরমিলের বিষয়টি সামনে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, এত দিন ইপিবির দেওয়া রপ্তানির তথ্য ধরে হিসাব করা হতো। তবে হিসাব অনুযায়ী দেশে রপ্তানি আয় আসছিল না। এ নিয়ে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, রপ্তানির পরিমাণ কম ছিল। তাই রপ্তানি আয় বেশি আসার যৌক্তিকতা নেই। এখন থেকে প্রকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। এনবিআর ও ইপিবি একই রপ্তানি তথ্য ব্যবহার করবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সারওয়ার হোসেন জুলাই মাসে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির রপ্তানির হিসাবে একটা পার্থক্য ছিল। রপ্তানি হিসাব ইপিবি বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রদান করে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সে অনুযায়ী ব্যালেন্স অব পেমেন্টের তথ্য দিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো তথ্যে ভুল ছিল না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানির হিসাবের ভ্যালু এবং ইপিবির রপ্তানির হিসাবের ভ্যালুর মধ্যে পার্থক্য ছিল।
তিনি বলেন, ইপিবি রপ্তানির হিসাব ’ডাবল কাউন্টিং’ করত। ইপিবির হিসাবে রপ্তানির পরিমাণ অনেক বেশি আসত। ফলে রপ্তানি বেশি দেখালে চলতি হিসাবে প্রভাব পড়ে। রপ্তানির হিসাব বেশি হওয়ার কারণে চলতি হিসাব উদ্বৃত্ত ছিল। এখন সমন্বয় করার কারণে চলতি হিসাবে ঘাটতি হয়েছে।”
বিষয়টিকে আরও ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানির জন্য পণ্য জাহাজীকরণ এবং বিল প্রত্যাবাসনের মধ্যে যে পার্থক্য সেটিকে ট্রেড ক্রেডিট হিসাবে দেখানো হয়। এখন আইএমফের চাপে রপ্তানির হিসাবে ফাঁকি বন্ধ হয়েছে। রপ্তানির আসল তথ্যের কারণে এতদিন যেখানে প্রবৃদ্ধি দেখানো হচ্ছিল আসলে তা ঋণাত্বক। যে কারণে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থেকে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে।”