নগদ টাকার অভাবে গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় গ্রাহকের চাহিদা মত টাকা দিতে পারছে না ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক।
Published : 04 Sep 2024, 08:28 PM
তারল্য সংকটে জেরবার কয়েকটি ‘দুর্বল’ ব্যাংককে সচল রাখতে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের জামিনদারিতে আন্তঃব্যাংক বাজার থেকে নগদ টাকার ঋণ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানালেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
নগদ টাকার অভাবে গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় গ্রাহকের চাহিদা মত টাকা দিতে পারছে না ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক।
উদ্ভূত সংকট মোচনের দিক নির্দেশনা নিয়ে বুধবার সাংবাদ সম্মেলনে এসে গভর্নর আহসান মনসুর বলেছেন, “এসব ব্যাংক যে তারল্য সংকটের মধ্যে আছে, তা সমাধান করার চেষ্টা করছি। আমরা চাচ্ছি, সীমিত আকারের হলেও গ্রাহককে তার অর্থ ফেরত দেওয়ার মত ব্যবস্থা করতে।
“এসব ব্যাংককে ‘বেইল আউট’ করতে গেলে ২ লাখ কোটি টাকার দরকার হবে। এর সমপরিমাণ টাকা ছাপালে ম্যাক্রো ইকোনমি স্ট্যাবিলিটি নষ্ট হয়ে যাবে, বৈদেশিক মুদ্রার দর ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে, মূল্যস্ফীতিও ২৫ (শতাংশ) ছাড়িয়ে যাবে। আমরা চাচ্ছি মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এনে ডলার দরকে আপাতত ১২০ টাকার মধ্যেই রাখতে।”
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর অর্থপাচারের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ হয়েছে। এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে টাকা পাচারের শঙ্কায় বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কয়েকটি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে ভোগান্তি
এক সাথে টাকা তুলতে যাবেন না, তাইলে পাবেন না: গভর্নর
এ অবস্থায় এসব ব্যাংকের বিভিন্ন মেয়াদি আমানতকারীসহ স্যালারি অ্যাকাউন্টের গ্রাহকরা তাদের বেতনের টাকা পর্যন্ত তুলতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিলেও নগদ টাকার সংকট তাতে কাটেনি।
এর আগে গভর্নর বলেছিলেন টাকা ছাপিয়ে আর এসব ব্যাংককে সহায়তা দেওয়া হবে না। বুধবার তেমনই বলেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের আগে বুধবার দুপুর ২টার দিকে গভর্নরের উপস্থিতিতে ব্যাংকার্স সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দেশের সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর বলেন, ব্যাংকিং খাত থেকে বড় রকমের অর্থপাচার ও আত্মসাৎ করা হয়েছে। আটটা ব্যাংকের মাধ্যমেই এসব টাকা বেশি পাচার হয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি।
গভর্নর বলেন, দেশের অন্যান্য ব্যাংক সঠিকভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে। ৭-৮টি ব্যাংকের জন্য ৬১টি ব্যাংক ডুবে যাবে না। আমানতকারীরা এসব ব্যাংকে আস্থা রাখতে পারছে না, তবে অন্য ব্যাংকগুলোতে আস্থা ঠিকই আছে।
এসব ব্যাংকের গ্রাহকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান রেখে আহসান মনসুর বলেন, “কোনো রকম প্যানিক (আতঙ্ক) তৈরি করা যাবে না। আমি বলব, এসব ব্যাংকের গ্রাহকদের ধৈর্য ধরার জন্য।”
তিনি বিলেন, “এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। তাই আমি বলব, এসব ব্যাংকে ঘুড়ে দাঁড়াবে।”
“নতুন টাকা না ছাপিয়ে তাদের যা ঝুঁকি আছে তা সমাধান করার চেষ্টা করা হবে। এসব ব্যাংক টাকা পাবে অন্য ব্যাংক থেকে, অর্থাৎ টাকার সরবরাহ না বাড়িয়ে তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে। দুর্বল ব্যাংক অন্য ব্যাংকের কাছ থেকে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে টাকা নেবে। তাতে মানি সাপ্লাই বাড়বে না “
গভর্নর বলেছেন, “এটাই একমাত্র কার্যপ্রণালি নয়। আমরা প্রত্যেকটি ব্যাংকে অডিট করে দেখব কোথায় রিস্ট্রাকচার করতে হবে। যেটাই করা হোক না কেন আমানতকারীদের স্বার্থ সেখানে দেখা হবে।”
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে গত সপ্তাহে ২০ হাজার টাকার বেশি নগদ উত্তলোন করা যায়নি। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকেও প্রায় একই অবস্থা ছিল।
এসআইবিএলে ৫০ হাজার টাকার ওপরে নগদ পাওয়া যায়নি। একই অবস্থা ছিল বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকে। এসব ব্যাংকে তারল্য পর্যাপ্ত না থাকার কারণে গ্রাহকদের চাহিদা মোতবেক অর্থ ফেরত দিতে পারছে না তারা।
এ অবস্থাতেও সংকোচনশীল মুদ্রানীতি থেকে সরছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর বলেন, “মুদ্রানীতিও সংকোচনশীল রাখছি যতদিন না পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করে।”
তিনি বলেন, তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে আন্তঃব্যাংক থেকে সীমিত আকারে সহায়তা দেওয়া হবে। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্যারান্টর (জামিনদার) হিসেবে কাজ করবে।”
আরও পড়ুন
নতুন সপ্তাহে চেকে তোলা যাবে নগদ ৫ লাখ টাকা
২৫ হাজার কোটি টাকা ধার নিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো