এক মাসে এলাচের দাম বেড়েছে কেজিতে হাজার টাকা। পেয়াঁজ, বসুন, আদার দাম দুই তিনেই বাড়ল অনেকখানি।
Published : 13 Jun 2024, 10:13 PM
মাংস রান্নায় ব্যবহার হয়, এমন মসলার দাম কোরবানির ঈদের আগে আগে আরেক দফা লাফ দিয়েছে।
পেঁয়াজ, রসুন, আদা থেকে শুরু করে গরম মসলা, সব কিছু কিনতেই বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে ভোক্তাদের। ঈদের আগের দাম আরও চড়তে পারে, এই কথাও জানিয়ে রাখছেন বিক্রেতারা।
ভোক্তারা ত্যক্ত বিরক্ত। তাদের অভিযোগ, বাজারে প্রতিযোগিতা নেই, ব্যবসায়ীদের কোনো না কোনো গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকারি প্রশাসন তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ।
বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁওয়ের তেঁজকুনিপাড়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা।
এই দুই বাজারে খুচরায় পেয়াঁজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৮৮ টাকা কেজি দরে, যা পাড়া-মহল্লার বাজার বা ভ্যানে ৯০ টাকার উপরে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
দেড় সপ্তাহ আগে ক্রেতারা পেঁয়াজ কিনতে পারতেন ৭৫ থেকে ৭৭ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি দোকান আনোয়ার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, “১০ দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ টাকার মত।”
গত মঙ্গলবারও কারওয়ানবাজারে চায়না রসুন পাওয়া গেছে ২১০ টাকা দরে। দুই দিনের ব্যবধানে সেটি হয়েছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। দুই দিনের ব্যবধানে দেশি রসুনের দামও কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে হয়ে গেছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা।
আদার দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। ইন্দোনেশিয়ার আদা ২৪০ টাকা, ভারতীয় আদা ৩০০ টাকা, চায়না আদা ৩২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
কারওয়ান বাজারে আদা-রসুন কিনতে এসে দাম শুনে আলমগীর হোসেন বিক্রেতা স্বপন সিকদারকে জিজ্ঞেস করলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে ২০ টাকা বেশি কেন।
স্বপন বললেন, “আইজকার বাজারটা সুবিধার না ভাই। একটু গরম। কোরবানির দুইদিন আগে দেইখেন দামডা আরেকটু বাড়ব কইলাম।”
পাইকারি বিক্রেতা নাজিম উদ্দিন বললেন, “গত ১০ দিনে এসব পণ্যে দাম বাড়ছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা।”
আরেকজন বিক্রেতা ইসমাইল শেখ বললেন, “গত সপ্তাহের তুলনায় আদা-রসুনের দাম ভালোই বাড়ছে। বেশি বাড়ছে আদায়।”
খুচরা বিক্রেতা জব্বার মিয়া বলেন, “কোরবানির আগে একটু দাম সবসময়ই বাড়ে। এখন সেভাবেই একটু বাড়ছে। কারণ, চাহিদা বেশি।
“যখন চাহিদা বেশি থাকে তখন পাইকাররাও দাম বাড়ায়। ১০ দিনের ব্যবধানে ২৫ থেকে ৩০ টাকা বাড়ছে আদা-রসুনে। আর পেঁয়াজে বাড়ছে ১২ টাকার মত।”
এলাচের দামে বিরাট লাফ
দাম বৃদ্ধির এই ধারাতে সবচেয়ে বেশি লাফাচ্ছে এলাচ। আমদানি করা এই মসলার দাম নিয়ে ক্রেতারা বিস্মিত। তিন মাসের ব্যবধানে কেজিতে দাম প্রায় দুই হাজার টাকা বেড়ে হয়ে গেছে চার হাজার টাকার কাছাকাছি।
কারওয়ান বাজারে মসলা বিক্রেতা মো. বাবুল মিয়া বলেন, “তিন মাস আগে এলাচের সর্বোচ্চ দাম ছিল ২০০০ টাকা। এখন ৩৮০০ টাকা। আর একমাসের ব্যবধানে বাড়ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা।”
ভিয়েতনামের দারুচিনি ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, জিরা ৭২০ টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এই তিনটি মসলার দাম নতুন করে বাড়েনি।
সপ্তাহের ব্যবধানে কালো গোল মরিচে বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। যা পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৯৮০ টাকা দরে, আর খুচরায় প্রায় ১১০০ টাকা।
মসলার পাইকারি দোকান বেলায়েত স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. হাফিজ বলেন, “আমরা আনি চকবাজার থেকে। চকবাজারেই বেশি দামে বিক্রি করে। দেশের বাহির থেকে এই কালো গোল মরিচ ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় কেনা। মসলা সমিতি এটা ছাড়ছে ৯৫০ টাকায়।”
দাম বৃদ্ধির সঙ্গে দোকান ভাড়া বৃদ্ধিরও যোগ আছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, “আমি কারওয়ান বাজারে ২০১২ সালে এই দোকান ভাড়া নিয়েছি মাসে ১৮ হাজার টাকায়। এখন ৭১ হাজার টাকা। কর্মচারীর বেতন ছিল ৬ হাজার, এখন ১৮ হাজার।
“ভোক্তা অধিদপ্তর আমাদেরকে যে টাকায় বিক্রি করতে বলে, সে টাকায় বেচলে কেউ ব্যবসা করতে পারবে না।”
২০২১ সালের ৬৩ হাজার টাকার পণ্য ক্রয়ের একটা বিলের কাগজ দেখিয়ে তিনি বলেন, “এই লিস্টে যা আছে এখন আমার সেসব কিনতে গেলে এক লাখের উপরে লাগবে। এক কেজি কিশমিশ দুই-তিন বছর আগে ছিল ৩০০ টাকা, সেটা এখন ৬৮০ টাকা। পাইকারি ৯০০ টাকার উপরে যেই কালো গোল মরিচ কিনি, তা বছর দুয়েক আগে ৫০০ টাকা ছিল।”
তেজগাঁওয়ের তেঁজকুনিপাড়া বাজারের মুদি দোকানি সাইফুল ইসলাম বলেন, “ঈদের আগে বড় ব্যবসায়ীরা ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করে।”